প্রতি মাসে ৫-৬ লক্ষ টাকার ভাগাড়ের মাংস কিনত নাটের গুরু বিশু

ভাগাড়ের মৃত পশুর মাংস সংগ্রহ করে তা বিক্রির ব্যবসা যে বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। বজবজ, ট্যাংরা, কাঁকিনাড়া, কল্যাণী, টালিগঞ্জ ও ধাপা-সহ বিভিন্ন এলাকার ভাগাড় থেকে সংগ্রহ করা হত মাংস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

কয়েক হাজার নয়, ভাগাড়ের মাংসের কারবার আসলে লক্ষ লক্ষ টাকার ব্যবসা! তদন্তে এগোতে গিয়ে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। ভাগাড়-কাণ্ডে আট জনকে ধরার পরে পুলিশ এখন খোঁজ করছে জনৈক বিশুর। তাকে ধরতে পারলেই নাকি কেল্লাফতে! ধৃতদের জেরায় পুলিশ জেনেছে, বিশু একাই প্রতি মাসে তাদের কাছ থেকে পাঁচ-ছয় লক্ষ টাকার ভাগাড়ের মাংস কিনত। তাকে ধরতে কলকাতা পুলিশের সাহায্য চেয়েছে ডায়মন্ড হারবার জেলা পুলিশ।

Advertisement

ভাগাড়ের মৃত পশুর মাংস সংগ্রহ করে তা বিক্রির ব্যবসা যে বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। বজবজ, ট্যাংরা, কাঁকিনাড়া, কল্যাণী, টালিগঞ্জ ও ধাপা-সহ বিভিন্ন এলাকার ভাগাড় থেকে সংগ্রহ করা হত মাংস। এর পরে তা টুকরো করে প্যাকেটে ভরা হত। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সেই মাংস হিমঘরে সংরক্ষণ করা থেকে শুরু করে বাজারে পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম যোগসূত্র ছিল নারকেলডাঙার বাসিন্দা বিশু। এ পর্যন্ত ভাগাড়-কাণ্ডে যত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই বয়ানের অভিমুখ গিয়ে ঠেকেছে বিশুর চৌকাঠে। বুধবার রাতে গ্রেফতার হয়েছিল সানি মালিক। তাকে জেরা করে উত্তর কলকাতা থেকে পাঁচ জনকে পাকড়াও করা হয়। বৃহস্পতিবার কল্যাণী থেকে গ্রেফতার হয় গয়েশপুর পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর মানিক মুখোপাধ্যায়। তদন্তকারীদের দাবি, মানিক ধৃত কাঁকিনাড়ার বাসিন্দা সরাফত আলির ঘনিষ্ঠ। কাঁকিনাড়া, কল্যাণী ও গয়েশপুর এলাকার ভাগাড় থেকে মৃত পশুর মাংস সংগ্রহ করে সানির কাছে পাঠাত মানিক ও সরাফত। সানি তা বিক্রি করত বিশুর কাছে।

পুলিশের দাবি, ধৃত আট জনের কাছ থেকে একা বিশুই মাসে পাঁচ-ছয় লক্ষ টাকার মৃত পশুর মাংস কিনত। সেগুলি এক কেজি করে এক-একটি প্যাকেটে ভরা হত। তার পরে ফর্মালিন মাখিয়ে হিমঘরে রেখে দেওয়া হত। এ কাজে নারকেলডাঙার হিমঘরে দু’টি গুদাম ভাড়া নিয়েছিল বিশু। ইতিমধ্যেই সেখানে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ হাজার কেজি মাংস উদ্ধার করেছে। মাইনাস ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ওই মাংস সংরক্ষণ করা হত। তার পরে সুদৃশ্য প্যাকেটে ভরে সরবরাহ করা হত শহরের বিভিন্ন রেস্তরাঁ ও হোটেলে।

Advertisement

শনিবার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘কলকাতায় ভাগাড়ের মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে খবর নেই। নারকেলডাঙায় ওই ধরনের মাংস হিমঘরে রাখা হত বলে শুনেছি। কিন্তু হিমঘর পুরসভার এক্তিয়ারে নেই। আর কলকাতার রেস্তরাঁ, হোটেলে সেগুলি বিক্রির প্রমাণ মেলেনি।’’ কিন্তু ধাপা থেকে কি মাংস সংগ্রহ করত না ওই চক্র? অতীনের দাবি, ‘‘ধাপায় পরিচয়পত্র ছাড়া ঢোকা যায় না। ফলে সেখান থেকে মৃত পশু সংগ্রহও সম্ভব নয়।’’

মেয়র পারিষদ এ কথা বললেও এ দিনই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রাবাসগুলিতে মাংস কোথা থেকে কেনা হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণের জন্য ‘বোর্ড অব রেসিডেন্টস’-কে
বলেছেন। একই পথে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও। গেস্ট হাউস চালানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে সতর্ক থাকতে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন হস্টেলের মেস কমিটি ও ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনগুলির সঙ্গেও বৈঠক করবেন কর্তৃপক্ষ।

পুলিশ সূত্রের খবর, বজবজ থেকে দু’জন ধরা পড়ার পরেই গা-ঢাকা দিয়েছিল সানি। বিহারের নয়দায় সে ধরা পড়ার পরেই জানা যায় ভাগাড়ের মাংস সংগ্রহ ও বিক্রির গল্প। ওই সময়ে বিশুও ফেরার হয়ে যায়। তাকে ধরতে পারলে মাংস-চক্রের শিকড়ে পৌঁছনো সম্ভব বলে ধারণা পুলিশের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন