পড়ে নষ্ট ১০ কোটির যন্ত্র, জানতই না কেউ

দশ কোটি টাকার যন্ত্র ব্যবহারই হয়নি ন’বছর। পড়ে থেকে অকেজো হয়ে যাওয়া সেই যন্ত্র সারাতে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচের সুপারিশে আপত্তি তুলে অর্থ দফতর বিষয়টি জানিয়েছে কলকাতা পুরসভার মেয়রকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৭:০৬
Share:

দশ কোটি টাকার যন্ত্র ব্যবহারই হয়নি ন’বছর। পড়ে থেকে অকেজো হয়ে যাওয়া সেই যন্ত্র সারাতে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচের সুপারিশে আপত্তি তুলে অর্থ দফতর বিষয়টি জানিয়েছে কলকাতা পুরসভার মেয়রকে। বাম আমলে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ডের কেনা ওই যন্ত্র এতকাল ফেলে রাখা হয়েছিল কেন, তার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে গত ছ’বছর ধরে ক্ষমতাসীন তৃণমূল পুরবোর্ডের এত দিন বিষয়টি নজরে পড়েনি কেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।

Advertisement

সোমবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, বিপুল টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে, অথচ তা ব্যবহারে কোনও সদর্থক ভূমিকা নেয়নি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের পুরবোর্ড। যন্ত্র থেকেও তা কাজ না করায় বিঘ্নিত হয়েছে পুর পরিষেবা। পড়ে থেকেই যন্ত্রটি অকেজো হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বর্তমান পুর-বোর্ডের কর্তারা। উপরন্তু সেই যন্ত্র সারাতে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচের সুপারিশ করেছে পুরসভার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতর। বিষয়টি অর্থ দফতরের নজরে পড়তেই জানানো হয় মেয়রকে। এর পরেই শোভনবাবু পুরো বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। বিকাশবাবু অবশ্য জানিয়ে দেন, ‘‘আমিও চাই পুরো বিষয়ে তদন্ত হোক। তা হলে সব পরিষ্কার হবে।’’

ঠিক কী হয়েছে?

Advertisement

কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৭ সালে পুরসভার তিনটি নিকাশি পাম্পিং স্টেশনের জন্য অটো ক্লিনিং স্ক্যান (এটিএস) যন্ত্র কেনা হয়। যার দাম প্রায় ১০ কোটি টাকারও বেশি। এই যন্ত্রের ভূমিকা অনেকটা ছাকনির মতো। নিকাশি নালার মাধ্যমে আসা জল পাম্পিং স্টেশনে এসে ওই যন্ত্রের সাহায্যেই পরিষ্কার হওয়ার কথা। বালিগঞ্জ পাম্পিং স্টেশনে ৫টি, উল্টোডাঙায় দু’টি এবং মোমিনপুরে দু’টি যন্ত্র বসানো হয়েছিল।

পুরসভার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ জানান, তখন থেকেই এই যন্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। কার্যত পড়ে থেকেই তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি মোমিনপুরে দু’টি যন্ত্র সারাতে প্রায় ১ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা খরচের সুপারিশ করে একটি নোট পাঠানো হয় অর্থ দফতরে। অর্থ দফতর তাতে আপত্তি জানিয়ে ওই ফাইলটি পুরসভার নিকাশি দফতরের নজরে আনে। তারকবাবু জানান, এর পরেই মেয়রকে বিষয়টি জানানো হয়।

সেই সঙ্গেই আরও একটি প্রশ্ন উঠেছে পুর মহলে। তা হল— এত দিন পরে বিষয়টি পুরসভার নজরে এল কেন? পুরসভার একাধিক অফিসারের কথায়, যন্ত্র কেনা হয়েছে ২০০৭ সালে। ইতিমধ্যে তৃণমূল-শাসিত পুরবোর্ড পাঁচ বছর পার করেছে। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেও কেটে গিয়েছে এক বছর।

কিন্তু এত বছরেও বিষয়টি জানা যায়নি কেন? তারকবাবুর কাছে সদুত্তর মেলেনি। তবে মেয়রের বক্তব্য, ‘‘অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়।’’ কেন, তা অবশ্য আর খোলসা করেননি মেয়র। উল্টে প্রাক্তন মেয়রের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বলেছেন, ‘‘পুর-প্রশাসনের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকা ব্যক্তিকে মেয়র করলে যা হয়, তা-ই হয়েছে।’’

এ দিকে, ওই যন্ত্র কেনা এবং তা মেরামতির জন্য টাকা খরচের সিদ্ধান্ত যাঁদের, সেই পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের বিরুদ্ধে রুষ্ট মেয়র এবং মেয়র পারিষদও। তবে দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন