— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সকাল থেকেই বৃষ্টি চলছে কলকাতায়। টানা বৃষ্টির কারণে শহরের একাধিক জায়গা জলমগ্ন। দোসর হয়েছে মেট্রোয় বিভ্রাট। তার জেরে রাস্তায় রাস্তায় যানজট। তিলধারণের জায়গা নেই বাস, অটোয়। এর ফলে সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসযাত্রীরা। দুপুর গড়িয়ে গেলেও যানজট কাটেনি।
কলকাতার রাস্তায় যানজটের দৃশ্য। — নিজস্ব চিত্র।
সোমবার সকাল পৌনে ৯টা নাগাদ আচমকা মেট্রো লাইনে জল দেখা যায়। চাঁদনি চক ও সেন্ট্রাল স্টেশনের মাঝে লাইনে জল জমে যাওয়ার কারণে সাময়িক ভাবে মেট্রো পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর প্রায় ঘণ্টাদুয়েক ময়দান থেকে কবি সুভাষ এবং দক্ষিণেশ্বর থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত ভাঙা পথে মেট্রো চলেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন নিত্যযাত্রীরা। অনেকেই দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছতে মেট্রো থেকে নেমে বাস বা ক্যাব ধরার চেষ্টা করেন। ট্রেনে-বাসেও পাল্লা দিয়ে ভিড় বাড়তে থাকে। সঙ্গে যানজট।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, মহাত্মা গান্ধী রোড, বিবেকানন্দ রোড, বিধান সরণি, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট-সহ কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির কারণে জল জমে যায়। ব্যাহত হয় যানচলাচল। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেলেও শহরের বেশ কিছু এলাকায় জল নামেনি। পাশাপাশি, প্রতিটি বাসেই মাত্রাছাড়া ভিড়। দুপুর পর্যন্তও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। যাত্রীদের অভিযোগ, অ্যাপ ক্যাবগুলিও এই সুযোগে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকছে।
যানজটের ছবি। — নিজস্ব চিত্র।
সকাল ১১টা নাগাদ দীর্ঘ দু’ঘণ্টা পর ফের মেট্রো পরিষেবা চালু হয়। কিন্তু মেট্রো চালু হতে না হতেই বেলগাছিয়া স্টেশনে ডাউনে লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক যাত্রী। ফলে ফের মেট্রো পরিষেবা থমকে যায়। শেষমেশ বেলা ১২টা ২৮ মিনিট নাগাদ মেট্রো চালু হয়। কিন্তু সকাল থেকে পাতাল-পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যে যানজট সৃষ্টি হয়েছিল, সেই চিত্রটা বিশেষ বদলায়নি!
সোমবার দুপুরে এমজি রোডের ছবি। — নিজস্ব চিত্র।
এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ওয়াইএস জগন্নাথরাও বলছেন, ‘‘সকালের দিকে মেট্রো বিভ্রাট এবং বৃষ্টির কারণে যানজট হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিকের দিকে। যানজটের কারণে উত্তর ও মধ্য কলকাতার কোনও কোনও রাস্তায়, মূলত সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের কয়েক জায়গায় গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কোথাও তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। পূর্ব, পশ্চিম বা দক্ষিণ কলকাতায় মানুষকে এ ধরনের ভোগান্তিতেও পড়তে হয়নি।’’ তবে বাস্তবে দুপুরের শহরের ছবিটা ভিন্ন। উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও যানজটে কার্যত স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে অতিরিক্ত যানজটের কারণে এপিসি রোড দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট। একই ভাবে বন্ধ রয়েছে এসএন ব্যানার্জি রোডও। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, ওই রাস্তা এখন পুরো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মৌলালি থেকেই বাস বা গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমহার্স্ট স্ট্রিট দিয়ে বৌবাজারের রাস্তায় গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বরং ঘুরপথে এমজি রোড হয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের দিকে যেতে হচ্ছে। যদিও তাতে বিশেষ লাভ হচ্ছে না। উল্টে এমজি রোডেও দীর্ঘ যানজটে দাঁড়িয়ে পড়েছে একের পর এক গাড়ি। অফিসযাত্রী সৌরভ ঘোষের কথায়, ‘‘সাড়ে ১২টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। ৩টে পর্যন্তও অফিসে পৌঁছতে পারিনি। দীর্ঘ ক্ষণ ধরে যানজটে আটকে রয়েছি।’’ ইতিমধ্যেই অনেকে বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করে দিয়েছেন। কেউ কেউ গিয়ে উঠেছেন মেট্রোয়। যানজটের জেরে অ্যাপ ক্যাব চালকেরাও নাজেহাল। সন্তোষ নামে এমনই এক অ্যাপ ক্যাব চালক বিবেকানন্দ রোডে যানজটে ফেঁসে কপাল চাপড়াচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘সকালেই অ্যাপে সতর্কবার্তা এসেছিল। শিয়ালদহ থেকে বড়বাজার ফলপট্টি পর্যন্ত গোটা এমজি রোডই জলমগ্ন বলে জানানো হয়েছিল। বৌবাজার এলাকাও এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বেলা আড়াইটেতেও যে সেই যানজট কমবে না, বুঝতে পারিনি। এমজি রোডে ঢুকিনি, তাও আটকে গেলাম। কখন বেরোব বুঝতে পারছি না। যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছেন।’’
তা হলে কি বৃষ্টির কারণেই ভোগান্তি? কলকাতার মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহের কথায়, ‘‘বৃষ্টি হয়েছে বটে, তবে তার কারণে কলকাতা শহরের কোথায় কোথায় জল জমে আছে, সেই খবর এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে নেই। তবে কখনও কখনও বৃষ্টির কারণে গাড়ির সামনের কাচে জল লেগে কাচ ঝাপসা হয়ে যায়। ফলে গাড়ির গতি মন্থর হয়ে যায়। সেই কারণেই যানজট হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।’’ তারক জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপর নজর রয়েছে কলকাতা পুরসভার। জল জমার কারণে কোথাও ভোগান্তির খবর পাওয়া গেলে পুরসভার তরফে পদক্ষেপ করা হবে।