বিপজ্জনক: হাওড়া সেতুতে হেমন্ত গগৈ। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা ধৈর্যের পরীক্ষা। অফিস ফেরত যাত্রীদের চরম ভোগান্তি। অনেকে আবার ট্রেনও ধরতে পারলেন না। শুক্রবার বিকেল সওয়া ৫টা থেকে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত হাওড়া সেতু চত্বরের চিত্রটা রইল এমনই। এক যুবকের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা প্রশ্ন তুলে দিল, হাওড়া সেতুতে রেলিং বসানো হলেও তা কাজে লাগল না কেন।
গঙ্গায় ঝাঁপ ঠেকাতে কিছু দিন আগে হাওড়া সেতুর গায়ে রেলিং বসানো হয়েছিল। সেই রেলিং টপকেই এক যুবক এ দিন হাওড়া সেতু থেকে গঙ্গার উপরে ঝুলে পড়েন। পরে অবশ্য রেলিংয়ের নীচের পাইপে তিনি অবলীলায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিকেল সওয়া ৫টা নাগাদ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় উত্তর বন্দর থানার পুলিশ। সেই থেকে শুরু হয় টানা দর কষাকষি। পুলিশ জানায়, ওই যুবক নিজের নাম হেমন্ত গগৈ বলে জানান। তাঁর বাড়ি অসমের ডিব্রুগড়ে। পুলিশ তাঁকে উঠে আসতে বলতে বলায় তিনি বলেন, ‘‘আমার মন খারাপ। ডিব্রুগড়ের বিধায়ককে ফোন করুন। আমি মরতে চাই।’’ উত্তর বন্দর থানার আধিকারিকেরা বলেন, ‘‘উঠে এলে সব করা হবে।’’
আরও পড়ুন: মাঞ্জার বিপদ এড়াতে জাল মা উড়ালপুলে
তখন যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘‘আগে একটা সিগারেট দাও। মদ দাও। তার পরে উঠব।’’ বার চারেক উঠে আসার ভান করলেও তিনি উঠে আসেননি। এর পরে যুবকের দাবি মেনে চা ও কেক আনানো হয়। খাওয়া সেরে যুবক বলেন, ‘‘আমার বউকে ফোন করো, তা হলে উঠব।’’
হাত পা বেঁধে তুলে আনা হচ্ছে যুবককে।—নিজস্ব চিত্র।
এর মধ্যে হাওড়া স্টেশন যাওয়ার এক দিকের ফুটপাতে যাতায়াত বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ফলে ভিড় নেমে আসে হাওড়া সেতুর উপরে গাড়ি চলাচলের রাস্তায়। গাড়ির লম্বা লাইন স্ট্র্যান্ড রোড পেরিয়ে পৌঁছে যায় অফিসপা়ড়ার টি বোর্ড পর্যন্ত। যুবককে উদ্ধার করতে যাওয়া দমকলকেও আটকে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ। অনেকেই বাস থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন। ভিড় নিয়ন্ত্রণে এ দিন পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে হয়।
আরও পড়ুন: বিদ্যাসাগরের প্রতিষ্ঠিত স্কুল বাঁচাতে শুরু হল ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা
উঠে আসতে রাজি না হওয়া ওই যুবক এ বার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান। পুলিশ সেই সুযোগ করে দিতে ওই যুবক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু তার পরে অবশ্য আর উঠে আসেননি। এমনকি নীচে দাঁড়ানো জলপুলিশের লঞ্চ দেখিয়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ট্রেনের টিকিট না পেলে লঞ্চে আমায় অসম পাঠাও।’’ পুলিশকে তিনি জানান, বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে।
রাত পৌনে ৯টা নাগাদ আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে যুবকের হাত চেপে ধরেন উত্তর বন্দর থানার ওসি পার্থ মুখোপাধ্যায় এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আধিকারিক নীলেন্দু চৌধুরী। হাত পা বেঁধে তুলে এনে ওই যুবককে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পার্থবাবু বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, যুবক নেশাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি যা বলেছেন কতটা সত্যি তা খতিয়ে দেখা হবে।’’