বাড়িতে ঢুকে আক্রমণ, আহত বৃদ্ধ দম্পতি

ঘরে ঢুকতে বাধা পেয়ে ওই দম্পতিকে ভারী কিছু দিয়ে জখম করে পালায় দুই দুষ্কৃতী। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এখন দত্তাবাদ সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

মেঝেতে পড়ে রয়েছে রক্ত। দেখাচ্ছেন আহত আলোকরঞ্জন চক্রবর্তীর(ইনসেটে) মেয়ে মৌমিতা। সোমবার, তেঘরিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

মাথা দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরোচ্ছে ৬৮ বছরের বৃদ্ধের। দোতলায় মেঝেয় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী। শনিবার রাতে তেঘরিয়ায় নন্দনকাননে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার আর্তি শুনে সাহায্যের জন্য ছুটে এসে এই দৃশ্যই দেখেন প্রতিবেশীরা‌। অভিযোগ, ঘরে ঢুকতে বাধা পেয়ে ওই দম্পতিকে ভারী কিছু দিয়ে জখম করে পালায় দুই দুষ্কৃতী। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এখন দত্তাবাদ সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তেঘরিয়ার নন্দনকাননে তিনতলা বাড়িতে থাকেন এয়ার‌ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন মার্কেটিং ম্যানেজার আলোকরঞ্জন চক্রবর্তী এবং তাঁর স্ত্রী, একটি স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা রত্না চক্রবর্তী। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মৌমিতা বিয়ের পরে আমেরিকাবাসী। সম্প্রতি রত্নাদেবীর বাইপাস সার্জারি হ‌ওয়ায় মাকে দেখতে কলকাতায় এসেছেন তিনি।

সোমবার হাসপাতালে শুয়ে আলোকরঞ্জনবাবু জানান, শনিবার রাতে স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়ার পরে তিনিও দোতলায় শোওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ বারান্দা লাগোয়া জানলায় কেউ আঁচড় দিচ্ছে বলে তাঁর মনে হয়। বৃদ্ধ ভেবেছিলেন, ভামে হয়তো এ কাজ করছে। জানলা খুলে ভাম তাড়ানোর জন্য তিনি তালি মারার পাশাপাশি মুখে আওয়াজ করেন। কিন্ত ফের সেই শব্দ শুনে বারান্দার দরজা খুলে আলো জ্বালান তিনি। তখনই আলোকরঞ্জনবাবু দেখেন, দুই দুষ্কৃতী এসির নীচে ঘাপটি মেরে আছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা বৃদ্ধের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

Advertisement

আলোকরঞ্জনবাবুর কথায়, “আমার বুকের উপরে বসে এক জন ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করতে থাকে।” স্বামীর চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় রত্নাদেবীর। তিনি বাধা দিতে গেলে আর এক দুষ্কৃতী তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আলোকরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘রত্না উঠতে গেলে ওকে ঠেলে মাটিতে ফেলে দিল। আবার উঠতে গেলে ফের ঠেলে দেয়।’’

মৌমিতা জানান, তাঁর মায়ের কোমরের হাড় ভেঙেছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সোমবার রাতে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। আলোকরঞ্জনবাবুর মাথায় ছ’টি সেলাই পড়েছে।

বৃদ্ধ দম্পতির বাড়ির কাছেই তাঁদের এক আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানকার বাসিন্দা উপাসনা বসু জানান, শনিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ তাঁরা বিশ্বকাপের খেলা দেখছিলেন। উপাসনা সে সময়ে শৌচাগারে গেলে শুনতে পান কেউ যেন বলে চলেছে, ‘বাঁচাও বাঁচাও, ডাকাত আমাকে
মেরে ফেলল’। বারান্দায় এলে তিনি বুঝতে পারেন, রত্নাদেবীদের বাড়ি থেকে আওয়াজ আসছে। তখনই চিৎকার করে প্রতিবেশীদের সজাগ করেন উপাসনা। তাতেই দুষ্কৃতীরা চম্পট দেয় বলে অনুমান। উপাসনার কথায়, ‘‘সঙ্গে স‌ঙ্গে নেমে দেখি, মাথায় ফেট্টি বাঁধা একটা ছেলে ঢালিপাড়ার দিকে চলে গেল। হাতে অস্ত্র ছিল বলে সাহস করে এগোইনি। আর এক জন সম্ভবত পিছনের মাঠ দিয়ে পালিয়েছে।’’

মৌমিতার অনুমান, তাঁদের বাড়ি সম্পর্কে পরিচিত কেউই এই ঘটনায় জড়িত। সোমবার আলোকরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘১৯৮৫ সাল থেকে এখানে আছি। কোনও দিন এমন হয়নি।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘সম্প্রতি এলাকায় নেশার আসর বসছে। সেখানে কারা যাতায়াত করে, পুলিশ-প্রশাসনের দেখা উচিত।’’

পুলিশের অনুমান, লুট নয়, বৃদ্ধ দম্পতিকে মারার উদ্দেশ্যেই এই হামলা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নেশার আসর নিয়ে পাড়ার কয়েক জনের সঙ্গে সম্প্রতি তিক্ততার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল আলোকরঞ্জনবাবুর। সেই আক্রোশ থেকে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। যদিও ওই দম্পতির আত্মীয়দের প্রশ্ন, এ তো খুনের চেষ্টা। আরও কড়া ধারা দেওয়া হল না কেন? বিধাননগর সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, তদন্ত চলছে। কিছু সূত্র মিললে সেই মতো ধারা বদল করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন