—ফাইল চিত্র।
নাগরিকদের দু’টি দলে ভাগ করে হয় সমীক্ষা। ফল দেখে হতবাক সকলেই।
সমীক্ষা বলছে, প্রথম দলের ৮০-৮৫ শতাংশ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বিতীয় দলে আক্রান্তের হার মাত্র ৩-৪ শতাংশ। কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধ শাখা ওই সমীক্ষা চালিয়েছিল শহরের একটি অতি ম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চলে।
প্রথম দল রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমোননি। রাতে জ্বলেছে মশার ধূপ বা কীটনাশক ভরা যন্ত্র। দ্বিতীয় দলের সকলে মশারি টাঙিয়ে ঘুমিয়েছেন।
বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ মশা নিরোধকের কার্যকারিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এই সমীক্ষা। ওই সমীক্ষক দলের এক সদস্য বলেন, বাজারে যে সব মশা নিরোধক রয়েছে, তার অধিকাংশই পাইরিথ্রয়েড নামের এক রাসায়নিকের যৌগ। সেটির মূল রাসায়নিক ভিত্তি হল পাইরিথ্রাম। ‘‘কীটনাশক হিসেবে পাইরিথ্রাম অনেক জায়গাতেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাতে মশা মরে না। তাই ওই রাসায়নিক দিয়ে তৈরি মশা নিরোধকে কোনও কাজ হয় না,’’ মন্তব্য পুরসভার এক পতঙ্গবিদের।
স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের এক প্রাক্তন পতঙ্গবিদ বলেন, ষাটের দশকে শুধু ডিডিটি ছড়িয়েই মশা বিতাড়ন করে দেশকে ম্যালেরিয়ামুক্ত করা গিয়েছিল। ডিডিটি তো বটেই, একে একে বেঞ্জিন হেক্সাক্লোরাইড, ডেলড্রিন, ম্যালাথনের মতো কীটনাশককেও হজম করে নিল মশারা। পরে একই হাল হল চন্দ্রমল্লিকা পাতার রস থেকে তৈরি কীটনাশক পাইরিথ্রামেরও। মশা যে কীসে মরবে, সেটাই এখন ভাবার বিষয়!
মশা নিরোধক রাসায়নিক ছাড়া কি মশা মারার উপায় নেই? কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন পতঙ্গবাহিত রোগ নিরাময় বিভাগের এক কর্তা বলেন, সত্তর দশকের মাঝমাঝি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং জাতীয় চিকিৎসা গবেষণা পর্ষদের (আইসিএমআর) যৌথ প্রচেষ্টায় গবেষণাগারে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পুরুষ মশার নির্বীজকরণ করে ছাড়া হয়েছিল দিল্লির ডেঙ্গি প্রভাবিত এলাকায়। ওই গবেষকেরা ভেবেছিলেন, নির্বীজকরণ হওয়া সেই পুরুষ মশারা অন্য পুরুষ মশাদের হটিয়ে স্ত্রী মশার সঙ্গে মিলিত হবে। স্ত্রী মশা পরে ডিম পাড়বে বটে, কিন্তু সেই ডিম নিষিক্ত হবে না। অর্থাৎ, সেই ডিম ফুটে লার্ভা হবে না। কিন্তু সেই পরীক্ষা সফল না হওয়ায় প্রকল্পটিকে বাতিল করে দেয় হু। ফলে পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচতে মশারি ব্যবহার করতেই হবে।’’