ভাসানে-দূষণে

আসছে বছর আবার কি গঙ্গায় ?

গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য,  দুর্গা সপরিবারে আসেন। তাই অনেকগুলি কাঠামো হয়। ফলে কাঠামো জলে ডুবিয়ে তুলে নিলেও এতগুলি প্রতিমার রং গঙ্গায় গিয়ে মিশছে। তাতে তো গঙ্গা দূষণ হচ্ছেই।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:২৯
Share:

এ ভাবেই প্রতিমার রং ও সাজসজ্জা থেকে দূষণ ছড়ায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

নদীতে ভাসান রুখতে দু’বছর আগে মামলা করেছিলেন তিনি। যার প্রেক্ষিতে গঙ্গায় ভাসান দেওয়া নিয়ে নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে জাতীয় পরিবেশ আদালত রাজ্যকে নির্দেশও দিয়েছিল। কিন্তু সে নির্দেশ মানা হচ্ছে না বলে দাবি তাঁর। আর তাতেই চূড়ান্ত হতাশ বছর বিরাশির অম্বরনাথ সেনগুপ্ত। বর্তমানে অশক্ত অবস্থাতেই গঙ্গা দূষণ রুখতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

বর্ষীয়ান অম্বরনাথবাবুর বক্তব্য, ‘‘চেষ্টা করছি এত। কিন্তু গঙ্গায় ভাসান তো হয়েই চলেছে।’’
নদী-পুকুরে বিসর্জনের কারণে জল দূষিত হওয়ায় জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষতি হয়। জলাশয়ে ভাসান অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। এ মর্মেই ২০১৭ সালে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলা করেছিলেন দমদমের বাসিন্দা তথা কেন্দ্রীয় জ্বালানি গবেষণা সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী অম্বরনাথবাবু। ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’-র (এনএমসিজি) সাম্প্রতিক নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই মামলার রায় ফের আলোচনায় উঠে এসেছে। যেখানে এনএমসিজি পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১১টি রাজ্যকে চিঠি দিয়ে গঙ্গায় প্রতিমা ভাসান দিতে বারণ করেছে। প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য গঙ্গা বা তার শাখাপ্রশাখার পাশে সাময়িক ভাবে পুকুর বা জলাধার করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রক সূত্রের খবর, গঙ্গা দূষণ রুখতেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে। অম্বরনাথবাবু জানান, প্রতিমায় যে রং করা হয়, তাতে ক্রোমিয়াম, সিসা-সহ ক্ষতিকর পদার্থ থাকে। তা জলে মিশে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষতি করে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালত বিসর্জন নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়ম মানতে বললেও তা মানা হচ্ছে কোথায়? সব জায়গায় চিঠি লিখছি। কিন্তু কোনও সাড়া পাচ্ছি না। আমি খুবই হতাশ!’’

গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন নিয়ে অনেক দিন ধরেই সরব হয়েছেন পরিবেশকর্মীরা। তাঁদের বক্তব্য,
দুর্গা সপরিবারে আসেন। তাই অনেকগুলি কাঠামো হয়। ফলে কাঠামো জলে ডুবিয়ে তুলে নিলেও এতগুলি প্রতিমার রং গঙ্গায় গিয়ে মিশছে। তাতে তো গঙ্গা দূষণ হচ্ছেই। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফে পুজো পর্ব শুরুর সময় থেকেই গঙ্গা দূষণ রুখতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘নো পলিউশন দুর্গা পুজো’ শীর্ষক নিয়মিত প্রচার চালানো হচ্ছে। সেখানে নিরঞ্জনের আগে প্রতিমার গা থেকে পুজোর ফুল, প্রসাধনী বা সাজ খুলে রাখার কথা বলা হচ্ছে। এমনকি, গঙ্গা দূষণ আটকাতে সেখানে প্রতিমার বসনও খুলে রাখতে বলা হয়েছে। গঙ্গায় বিসর্জন নিয়ে মামলা করেছিলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তও। তাঁর বক্তব্য, দেশের অনেক জায়গার মতো ইলাহাবাদেও গঙ্গায় প্রতিমা নিরঞ্জন সম্পূর্ণ বন্ধ। সুভাষবাবুর কথায়, ‘‘গঙ্গা যে সব রাজ্যের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে, তাদের সবারই ভাসানের ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতি হওয়া উচিত। অন্য রাজ্য পারলে পশ্চিমবঙ্গ বা কলকাতা পারবে না কেন?’’

Advertisement

দূষণ এড়াতে বাজেকদমতলা ঘাটে তুলে ফেলা হচ্ছে প্রতিমা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

যদিও শেষ মুহূর্তে ভাসান দেওয়ার জন্য বিকল্প জলাশয়ের ব্যবস্থা করা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করেছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, ভাসানের ক্ষেত্রে পরিবেশবিধি মানতে এমনিতেই কড়া নজর রাখা হয়। প্রতিমার ফুল সরানোর পাশাপাশি সাজসজ্জাও খুলে রাখা হয়। কলকাতা পুরসভার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘বহু বছর ধরে দূষণ বিধি মেনেই আমরা ভাসানের ব্যবস্থা করি। ভাসানের জন্য এনএমসিজি এখন যে বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলেছে সেটাও করা হবে। এ বছর হাতে সময় কোথায় ছিল?’’পরের বছর সেই বিকল্প ব্যবস্থা করা যাবে কি? সেই ব্যবস্থা কি সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত হবে? আপাতত পরিবেশবিদদের মধ্যে আলোচনা চলছে তা নিয়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন