রয়েছে অনেক নিয়ম, মানছে ক’জন?

একটি সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঠিক পরিকাঠামোর অন্যতম প্রধান শর্তই হল শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকের অনুপাত ঠিক থাকা। এমনটাই দাবি সাঁতার বিশেষজ্ঞদের। অভিযোগ, অনেক সময়েই দেখা যায় প্রশিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৯
Share:

রবীন্দ্র সরোবরের পাবলিক পুলে টাঙানো রয়েছে নোটিস। হেদুয়ায় চলছে ছোটদের প্রশিক্ষণ। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নামেই সুইমিং পুল। কিন্তু আদতে ঘোলা জলের বিরাট পুকুর। গভীর ওই পুকুরেই প্রতি বছর কয়েক হাজার কচিকাঁচা সাঁতার শেখে। হেদুয়া, কলেজ স্কোয়ার, টালা, রবীন্দ্র সরোবর— শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে এই সব সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বারবার ঘটছে দুর্ঘটনা। অভিযোগ, সেই সব দুর্ঘটনার পিছনে পরিকাঠামোর অভাবই অন্যতম কারণ।

Advertisement

একটি সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঠিক পরিকাঠামোর অন্যতম প্রধান শর্তই হল শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষকের অনুপাত ঠিক থাকা। এমনটাই দাবি সাঁতার বিশেষজ্ঞদের। অভিযোগ, অনেক সময়েই দেখা যায় প্রশিক্ষকের তুলনায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। ফলে সব সময়ে সব শিক্ষার্থীর দিকে নজর দিতে পারেন না প্রশিক্ষকেরা। সাধারণত প্রতি পাঁচ জন শিক্ষার্থীর জন্য এক জন প্রশিক্ষক থাকা জরুরি। যাঁরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তাঁরা ঠিক ভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কি না সেটাও দেখা দরকার। লেক টাউন সুইমিং পুলের এক প্রশিক্ষক জয়ন্ত দে বলেন, ‘‘সাঁতারের মরসুমের শুরুতে প্রচুর ছেলেমেয়ে ভর্তি হওয়ায় প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত অনেক সময়েই ঠিক থাকে না। তখন শিক্ষার্থীরা সবাই কাঁচা। সেই সময়ে নজর রাখা বেশি জরুরি।’’

তবে আন্তর্জাতিক সাঁতারু বুলা চৌধুরীর মতে, কলেজ স্কোয়ার, হেদুয়ার মতো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি আদতে বড় পুকুরের সমান। তিনি বলেন, ‘‘সাতাঁরের জল স্বচ্ছ ও পরিষ্কার থাকা বিশেষ ভাবে জরুরি।’’ তিনি জানান, অভিভাবকদের উচিত পুলে এসে সন্তানদের উপরে নজর রাখা। সব ক্ষেত্রে প্রশিক্ষক নজর রাখতে পারেন না। তাই অভিভাবকদের উচিত পুলে এসে সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখা। সেটা অনেক বেশি নিরাপদ।

Advertisement

রবিবার সকালে কলেজ স্কোয়ারে প্রশিক্ষকদের নজর এড়িয়ে অগভীর পুল থেকে গভীর পুলে ঝাঁপ দিয়ে তলিয়ে যায় মহম্মদ শাহবাজ (১৭) নামে এক কিশোর। অভিযোগ, এমন নজরদারির অভাব কিংবা কম প্রশিক্ষকে নিয়েই কলকাতার অনেক সাঁতারের ক্লাব চলছে। এক জন কিংবা দু’জন করে প্রশিক্ষিত লাইফ গার্ড বা লাইফ সেভারও সেখানে পাওয়া দায়। অভিযোগ, সাঁতার প্রশিক্ষকেরা অথবা ক্লাবের কোনও কোনও কর্মকর্তা লাইফ গার্ডের কাজ চালান।

ভোলানাথ পাল নামে এক লাইফ গার্ড বলেন, ‘‘আমাদের আলাদা ভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। ঘোলা জল থেকেও কী ভাবে কাউকে উদ্ধার করতে হয় সেটাও আমরা জানি।’’

নিয়ম বলছে, শিক্ষানবিশদের সাঁতারের জায়গা বা এনক্লোজারটি ঠিক মতো পাঁচিল দিয়ে ঘেরা থাকা প্রয়োজন। জায়গাটির গভীরতা তিন থেকে চার ফুট হতে হবে। কারণ ওই জায়গার পাশেই আবার বড়দের সাঁতারের জায়গা। যেটির গভীরতা ১৫ থেকে ২০ ফুট। ২০১৬ সালে হেদুয়ায় সাঁতার শিখতে গিয়ে এনক্লোজারের রেলিং গলে গভীর পুলে ডুবে মৃত্যু হয় এক তরুণীর। হেদুয়ার ন্যাশনাল সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সনৎ ঘোষ বলেন, ‘‘শিক্ষানবিশদের জায়গাটি শক্তপোক্ত পাঁচিল দিয়ে ঘেরা আছে কি না, সেই ব্যাপারে নজর দেওয়া জরুরি। জলে ভাসমান টিউব পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকতে হবে।’’

কলেজ স্কোয়ার সুইমিং পুলের এক কর্তা সন্তোষকুমার দাস বলেন, ‘‘জলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে। ফলে নতুনদের প্রশিক্ষকের নির্দেশ মানতেই হবে।’’

প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলির নজরদারির দায়িত্ব পুরসভাও ঠিক মতো পালন করে না বলে অভিযোগ। যদিও মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘সুইমিং পুলের পাড় ঠিক মতো বাঁধানো আছে কি না সেটা আমরা দেখি। নতুন মরসুম শুরুর আগে পুলের জল ভরতে আমরা সাহায্য করি। ওই জলের মানও পরীক্ষা করা হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন