Bansdroni

যশোদা বললেন, ‘আমারই পোড়াকপাল’

বাড়ির বারান্দায় চায়ের কাপ হাতেবসে থাকা আশি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধাকে দেখে সে রকমটাই মনে হল। তার খানিকক্ষণের মধ্যে সে কথাটাই যেন একটু অন্য ভাবে বললেন যশোদা পাল।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ১৭:৩৪
Share:

শুধুমাত্র ফুল তোলার জন্য এই বৃদ্ধাকে যে ভাবে মারধর করা হয়েছে, তা দেখে আশপাশের বাসিন্দারাও শিউরে উঠছেন।— নিজস্ব চিত্র।

একেই কি বলে ভাগের মা!

Advertisement

বাড়ির বারান্দায় চায়ের কাপ হাতেবসে থাকা আশি ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধাকে দেখে সে রকমটাই মনে হল। তার খানিক ক্ষণের মধ্যে সে কথাটাই যেন একটু অন্য ভাবে বললেন যশোদা পাল।

সেই যশোদা পাল। পুত্রবধূর হাতে নির্মম ভাবে প্রহৃত সেই বৃদ্ধা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া যে বৃদ্ধার চূড়ান্ত অপমান ও চরম অসহায়তার চলমান ছবি দেখে শিউরে উঠেছে বহির্জগৎ। যে ছবি দেখিয়েছে, বাইরের কেউ নয়, যাঁদের আশ্রয়ে অসহায় এই বৃদ্ধা থাকেন, সেই পুত্রবধূ বেধড়ক মারধর করছেন তাঁর শাশুড়িকে। এই ভিডিও দেখেই কিছু ক্ষণের মধ্যে পুলিশ অবশ্য শাশুড়ি নিগ্রহের অভিযোগে তাঁর পুত্রবধূ স্বপ্নাকে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

সাত-সকালে বাঁশদ্রোণীর ব্রহ্মপুরের বাড়ির বারান্দায় যশোদা পাল বলে চলেছেন, ‘‘বহুদিনের অভ্যেস। ফুল তোলার জন্য কাকভোরেই বেরিয়ে পড়তাম পাড়ায়। এখন মাঝেমধ্যে দুপুরেও যেতাম। তার জন্য গালমন্দ কম শুনতে হয়নি।আমার পোড়াকপাল! কী আর করব! দুই ছেলের সংসারে ভাগের মা।’’

জানতেও চাইলেন না সাতসকালে কোথা থেকে এসেছি। বস্তুত,বয়সের ভারে এখন আর সবকিছু মনে রাখতে পারেন না তিনি। অ্যামনেশিয়ায় আক্রান্ত। চুলের মুঠি ধরে মার খাওয়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর মুখ পুড়েছে বাঁশদ্রোণীর ব্রহ্মপুরের দীর্ঘদিনের বাসিন্দা পাল পরিবারের। ঠাকুমাকে চুলের মুঠি ধরে মারের ঘটনায় লজ্জায় কুঁকড়ে আছেন যশোদার নাতি স্বপ্নজিত। মায়ের এই অপকর্মকে কিছুতেই সমর্থন করা যায় না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি। সকালে ডাক পেয়েই থানায় রওনা দিচ্ছিলেন। অত্যন্ত কুণ্ঠার সঙ্গে স্বপ্নজিত বলেন,“মা যে কেন ঠাকুমাকে মারধর করল, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না। আমি এই কাজ সমর্থন করি না।’’

আরও পড়ুন, না বলে ফুল তোলায় বৃদ্ধা শাশুড়িকে বেদম মার বৌমার, ফেসবুক সূত্রে ধৃত বৌমা

অশক্ত যশোদা পালের দুই ছেলে গোপাল এবং রঞ্জিত। অটো চালিয়ে সংসার চালান বড়ছেলে রঞ্জিত। ছোট ছেলে গ্রিল কোম্পানিতে কাজ করেন। ঘরে ঢুকতেই দেখা গেল, খালি গায়ে কপালে হাত দিয়ে বসে রয়েছেন রঞ্জিত। পরিচয় দিতে বললেন, “আমি কিছুই জানতাম না। সকাল হলেই কাজে বেরিয়ে যাই। এই ঘটনা সামনে আসতেই যেন মুখে চুনকালি লেগে গেল।”

কথাবার্তা শুনে উঁকিঝুঁকি দিতে শুরু করেন প্রতিবেশীরাও। ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে গোটা ঘটনা জেনে গিয়েছেন এলাকার লোকজন।চায়ের দোকানে দোকানেচলছে আলোচনা। কোন বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে, তা দেখতেও আসছেন কেউ কেউ।এরই মধ্যে পাশের বাড়ি থেকে চলে এলেন মাসতুতো দাদাও। কিন্তু সকাল ৮টাতেও দেখা মিলল না স্বপ্নার স্বামী গোপালবাবুর। তিনি কোথায়, সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই ছোটভাই বলে উঠলেন, “কেন বউদি মারমুখী হয়ে উঠলেন, আমিও বুঝে উঠতে পারছি না। পুজোর জন্য মা অন্যের বাড়ি থেকে ফুল তুলে আনতেন। এ নিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীরা অভিযোগ জানাতেন মাঝেমধ্যেই। তা বলে মাকে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।’’

পোস্ট করা একটি ভিডিয়ো থেকে জানা যায় ঘটনাটি।

কেমন সেই নির্যাতন? সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ হয়ে যাওয়া ভি়ডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধাকে বেধড়ক মারধর করছেন এক মহিলা। ফেসবুকে লেখা, ঘটনাটি গড়িয়া এলাকার। সূত্র বলতে এটুকুই। সেই সূত্র ধরেই বুধবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই বৃদ্ধাকে খুঁজে বার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় স্বপ্নাকে।এই ঘটনার পর স্বপ্নজিতের দাবি, ‘‘সে সময় বাবা বা আমি কেউ বাড়িতে ছিলাম না।’’

আরও পড়ুন, স্মৃতির মতোই বেঁচে আছে রিঙ্কুর ‘তাসের ঘর’

শুধুমাত্র ফুল তোলার জন্য ওই বৃদ্ধাকে যে ভাবে মারধর করা হয়েছে, তা দেখে আশপাশের বাসিন্দারাও শিউরে উঠছেন। প্রতিবেশীদের দাবি, মাঝ্যেমধ্যেই শাশুড়ি-বউমার মধ্যে ঝগড়া হত।এর আগেও একইভাবে যশোদাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তবে কেউই নিজের নাম বলতে চাননি। প্রতিবেশীদের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে স্বপ্নজিতের বক্তব্য, “ঘটনার সময় আমি আর বাবা বাড়ি ছিলাম না। কেউ হয়তো ভিডিয়ো করে ছবিটা ছড়িয়ে দিয়েছে। ঠাকুমাকে মা-ই দেখভাল করত। বাড়ি ফিরলে মাকে আমি জিজ্ঞেস করব।’’

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ অভিযোগ পেয়েছে, নানা অজুহাতে প্রায়ই যশোদাদেবীকে মারধর করা হত। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধা এতটাই অসুস্থ যে, নিজের ছেলেকে মাঝেমধ্যে ‘দাদা’ বলে ডাকেন। এমন মানুষকে যে এ ভাবে মারধর করা যায়, তা ভাবলেও কষ্ট হয়।’’ শাশুড়ির উপর নির্যাতনের অভিযোগে স্বপ্না পালের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল।বৃহস্পতিবার থানা থেকেই তাঁকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন