নয়া ঠিকানায় ঘরে ফেরা

নিজের শহরে ফিরে আবার রক্তের টানটাও চলকে উঠল। জন্মাল হাউ হুয়া, জেমসদের পারিবারিক রেস্তোরাঁ। ধ্রুপদী চিমনি সুপের জন্য বিখ্যাত রেস্তোরাঁটি বাড়িওয়ালার সঙ্গে টানাপড়েনে ন’বছর আগে ঝাঁপ বন্ধ করেছিল। ফিনিক্স পাখির মতোই ডানা মেলেছে ফের।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০১:২৯
Share:

ফিরে পাওয়া স্বাদ। নিজস্ব চিত্র

সচরাচর এমনটা ঘটে না। বছর খানেক আগে চাকরি নিয়ে বিলেতে যাওয়ার সময়ে জেমস ওয়ংও কলকাতায় ফিরবেন না, ধরেই নিয়েছিলেন। কিন্তু কনকনে ঠান্ডা, চেনা বন্ধুবান্ধবদের অভাব, একাকিত্ব মিলিয়ে অচিরেই যেন অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেন। আর যা ঘটল, তা এক কথায় উলটপুরাণ!

Advertisement

নিজের শহরে ফিরে আবার রক্তের টানটাও চলকে উঠল। জন্মাল হাউ হুয়া, জেমসদের পারিবারিক রেস্তোরাঁ। ধ্রুপদী চিমনি সুপের জন্য বিখ্যাত রেস্তোরাঁটি বাড়িওয়ালার সঙ্গে টানাপড়েনে ন’বছর আগে ঝাঁপ বন্ধ করেছিল। ফিনিক্স পাখির মতোই ডানা মেলেছে ফের।

একদা কলকাতার গর্ব ‘স্কাইরুম’ বন্ধ। ‘ব্লুফক্স’-এর জায়গা জুড়ে ফাস্ট ফুডচেন ‘ম্যাকডোনাল্ডস’। সাম্প্রতিক অতীতে কলকাতা ছেড়েছেন চাংওয়া, পিপিং, ওয়ালডর্ফ, সংহে-র সাবেক চিনে মালিকরা। অনেকের মত, এ হল গত তিন দশকে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, পার্সি, ইহুদী, চিনে, আর্মেনিয়ান সুদ্ধ কলকাতার পাঁচমিশেলি জনতার দেশান্তরী হওয়ারই প্রতিফলন। ট্যাংরার প্রবীণ রেস্তোরাঁ কর্তা শে ইং শিংয়ের কথায়, ‘‘তরুণ প্রজন্ম রেস্তোরাঁর ঝক্কি না সামলে অন্য চাকরিতে যাচ্ছে। সাবেক রেস্তোরাঁর বুড়ো মালিকেরা অবসর নিচ্ছেন বলেও অনেকে ঝাঁপ গুটোচ্ছে।’’

Advertisement

মালিকানা বদলে কয়েকটি রেস্তোরাঁ টিকলেও পুরনো মেজাজ, স্বাদে ঘটেছে রদবদল। এমনকী, বছরখানেক বন্ধের পরে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির পঞ্জাবি খানার বিখ্যাত ‘ধাবা’ ফের খুললেও, হেঁসেলের পুরনো টিম, মেনু— বজায় রাখা মুশকিল বলেই মানছেন তাঁরা। এখানেই কিছুটা আলাদা হাউ হুয়া-র পুনর্জন্ম।

ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে পুরনো ঠিকানা ছেড়ে দক্ষিণ কলকাতার লর্ডসের মোড়ে শুরু হচ্ছে নতুন ইনিংস। প্রয়াত মালিকের নাতির ফোনেই ফিরেছেন রেস্তোরাঁর কয়েক জন পুরনো কুক। ফলে চিকেন-পর্ক-মিটবল-চিংড়ি-কাঁকড়া-তোফু ভরপুর চিমনি সুপের স্বাদটা
অন্তত পাল্টায়নি!

চেখে নিশ্চিন্ত হয়েছেন পুরনো হাউ হুয়া-অনুগত, ডাক্তারবাবু মণীশমুকুল ঘোষও। আটের দশকে মেডিক্যাল কলেজের দিনে যাঁর বহু দুপুর-সন্ধ্যা এই রেস্তোরাঁর নিভু আলোয় গচ্ছিত। ‘‘তখন টেবিলের কাচের নীচে চিমনি সুপের ৪৫ রকম উপাদানের তালিকা থাকত, তাও নেই। আলোটা অন্য রকম ছিল,’’ বলছেন মনীশবাবু।

সাকলিং পিগ রোস্ট বা তুলনায় সস্তায় চিমনি সুপের লোভে দল বেঁধে অনেকেই ছুটতেন হাউ হুয়ায়। চিমনি বসানো বাটি থাকলেও সুপ গরম রাখতে চিমনিভরা জ্বলন্ত কয়লা রাখার রেওয়াজ এখন নেই। আদি প্রতিষ্ঠাতা লিউ পাও হোয়ার দৌহিত্র জেমস স্বাদে আপস করবার বান্দা নন। আদতে ইঞ্জিনিয়ার হলেও রেস্তোরাঁর খুঁটিনাটি বোঝেন। জেমসকে সামনে রেখে হাউ হুয়া-র কর্ণধার তাঁর স্ত্রী ভিক্টোরিয়া ও শ্যালিকা এলিজাবেথ। ভায়রাভাই তথাগতও সঙ্গে আছেন। নয়া অবতারে বয়েল্ড ডাম্পলিং, ক্র্যাব-মাশরুম ঠাসা ক্যান্টন চিকেন, চিলি রোস্ট পর্ক বা ফ্রায়েড রাইসের জোগানও অটুট। পুরনো ভক্তরাই চালিকাশক্তি, জেমসও বিলক্ষণ জানেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন