ধর্ষণে মূল অভিযুক্ত এখনও অধরা, আতঙ্কে নির্যাতিতা

এন্টালির বাসিন্দা সীমা এখনও ধরা না পড়ায় আতঙ্ক আর ভয়ে বাইরে বেরোতে পারছেন না নির্যাতিতা।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০০
Share:

এন্টালির বাসিন্দা সীমা এখনও ধরা না পড়ায় আতঙ্ক আর ভয়ে বাইরে বেরোতে পারছেন না নির্যাতিতা।

মাস দেড়েক আগে পার্ক স্ট্রিটের একটি পার্লারে নিয়ে গিয়ে একাধিক দিন তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে পুলিশকে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিলজলার বাসিন্দা, বছর বাইশের এক তরুণী। মোবাইলে ওই ঘটনার ভিডিয়ো তুলে রেখেছিল ধর্ষকেরা। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে অভিযোগ দায়েরের পরে চার জন গ্রেফতার হলেও মূল অভিযুক্ত সীমা এখনও ফেরার। অভিযোগ, ধর্ষণের সময়ে সে এবং পার্লারের মালিক মোবাইলে ঘটনার ভিডিয়ো রেকর্ডিং করেছিল।

Advertisement

এন্টালির বাসিন্দা সীমা এখনও ধরা না পড়ায় আতঙ্ক আর ভয়ে বাইরে বেরোতে পারছেন না নির্যাতিতা। পুলিশের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘সীমার ভয়ে বাইরে বেরোতে পারছি না। আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে। যত শীঘ্র সম্ভব তাকে গ্রেফতার করুন।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, ভাল কাজ পাইয়ে দেওয়ার নামে গত ২৪ অক্টোবর তিলজলার বাসিন্দা রিনা বেগম ওই তরুণীকে কিড স্ট্রিটের একটি পার্লারে নিয়ে যায়। তরুণীর অভিযোগ, ওই দিনই গুড্ডু ও শাকিল নামে দুই যুবক সেখানে তাঁকে ধর্ষণ করে। সে সময়ে রিনা ছাড়াও পার্লারে উপস্থিত ছিল সীমা ও মালিক নগেন্দ্র সিংহ। নির্যাতিতার আরও অভিযোগ, ধর্ষণের পরে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়, পার্ক স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে ওই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ২৪-৩০ অক্টোবর বিভিন্ন দিনে কাজের সূত্রে পার্লারে গেলে ওই তরুণী গণধর্ষণের শিকার হন। ১ নভেম্বর থেকে কাজে যাওয়া বন্ধ করলে তাঁকে বারবার ফোনে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। পার্লারে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে ১৮ নভেম্বর সীমা তাঁর তিলজলার বাড়িতে এসে চড়াও হয় বলে অভিযোগে জানিয়েছেন তরুণী। পুলিশ জানিয়েছে, ওই দিনই তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। টানা চার রাত কাটান চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে ও শিয়ালদহ স্টেশনে। শেষে ২২ নভেম্বর তিলজলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই মানোয়ার আলি ওরফে গুড্ডু, মহম্মদ শাকিল, রিনা ও নগেন্দ্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা এখন জেল হেফাজতে। যদিও তার পরেও স্বস্তিতে নেই ওই তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘পুলিশকে অভিযোগ জানানোর পরের দিনই সীমা ও আরও দুই মহিলা আমার বাড়ি এসে টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিতে বলেছিল। আমি অনড় থাকায় হুমকিও দিয়েছিল। সীমা এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার না হওয়ায় ভয় হচ্ছে, যে কোনও সময়ে সে সঙ্গীদের নিয়ে ফের বাড়িতে চড়াও হতে পারে।’’

বিবাহ-বিচ্ছিন্না ওই মহিলা বছর সাতেকের কন্যাসন্তান ও মাকে নিয়ে তিলজলার ঘুপচি ঘরে থাকেন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘শুধু সেলাই ও ডিজাইনিংয়ের কাজ করে বাড়িতে বসে সংসার চালানো অসম্ভব। একটা কাজ পেয়েও বেরোতে পারছি না। ওই ঘটনার আতঙ্ক এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।’’ তরুণীর কথায়, ‘‘ধর্ষণের নালিশ জানালে আমার মেয়েকেও শেষ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সীমা ধরা না পড়া পর্যন্ত আমার শান্তি নেই।’’ লালবাজারের এক কর্তা শুধু বলেছেন, ‘‘সীমার খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন