দেবাশিস বসু, মহম্মদ জিশান সামিম, মানবেন্দ্র বিশ্বাস।
একে তো ট্রাফিক নিয়ম মানবেন না তাঁরা। তার উপরে পুলিশ কখনও আটকালে উল্টে পুলিশকেই হেনস্থা করবেন।
বুধবার শহর কলকাতায় এমনই দু’টি ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলে দিল পুলিশের ভাবমূর্তি নিয়ে। একটি ক্ষেত্রে পুলিশ সার্জেন্টকে গালিগালাজ করে ধরা পড়েছেন এক ব্যক্তি। অন্য ঘটনায় ১৮ বছরের এক তরুণ ট্রাফিক কনস্টেবলকে চড় ও ঘুষি মেরেছেন। তাঁকেও ধরা হয়েছে। চলতি বছরে এর আগেও এমন ৯টি হেনস্থার ঘটনা ঘটেছে। তখন এমনও মনে করা হচ্ছিল, উর্দির প্রতি ভয় বোধহয় উড়েই গিয়েছে এ শহর থেকে। তবে সে সব ছিল নির্বাচনের আগের ঘটনা। তার পরে অনেকটাই বদলেছে পরিস্থিতি।
নির্বাচন চলাকালীন পুরনো ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলে সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। সকলেই মনে করেছিলেন, এত দিন ধরে বিকিয়ে দেওয়া সম্ভ্রম আবার ফিরে পেতে চলেছেন রাজ্যে আইন রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীরা। কিন্তু তাতেও পুলিশকে ভয় না করা, রাস্তাঘাটে তাদের হেনস্থা করার ঘটনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। নির্বাচন মিটতে না মিটতেই ফের ঘটল পুলিশ নিগ্রহের ঘটনা।
বুধবার সকালে পুলিশকে হেনস্থা করার প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে মহাত্মা গাঁধী রোড ও আমহার্স্ট স্ট্রিটের মোড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, সেখানে ডিউটি করছিলেন শিয়ালদহ ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল দেবাশিস বসু। সেই সময়ে নারকেলডাঙার বাসিন্দা মহম্মদ জিশান সামিম (১৮) আমহার্স্ট স্ট্রিট থেকে কলেজ স্ট্রিটের দিকে মোটরবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, তাঁর মাথায় হেলমেট ছিল না। তাঁকে থামান দেবাশিসবাবু। অভিযোগ, কেন তিনি হেলমেট না পরে বাইক চালাচ্ছেন জানতে চাইলেই পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করে দেন যুবক। এই কথা কাটাকাটি চলাকালীন জিশান দেবাশিসবাবুকে চড় এবং ঘুষি মারেন বলেও অভিযোগ। দেবাশিসবাবু পরে বলেন, ‘‘আমার জামাও টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে।’’
কাছেই ছিলেন সার্জেন্ট ত্রিভুবননারায়ণ মণ্ডল। তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিশানকে আমর্হাস্ট স্ট্রিট থানায় নিয়ে যান। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর মোটরবাইকটিও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, জিশান জাতীয় মুক্ত বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।
দ্বিতীয় ঘটনাটি দুপুরে ঘটে সার্ভে পার্ক থানা এলাকার বাইপাসের উপরে কালিকাপুর অঞ্চলে। সেখানে সৌরভ দাস নামে এক যুবক যে মোটরবাইকে করে যাচ্ছিলেন, তার নম্বর প্লেট ছিল না। তাঁর পথ আটকান পূর্ব যাদবপুরের ট্রাফিক সার্জেন্ট মানবেন্দ্র বিশ্বাস। জানতে চান, কেন তিনি নম্বর প্লেট ছাড়া বাইক চালাচ্ছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌরভের কাছে না ছিল লাইসেন্স, না ছিল গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত নথি। পুলিশ জানায়, ধরা পড়ে সৌরভ সটান তাঁর বাবার মোবাইলে ফোন করে ডেকে পাঠান। সৌরভের বাবা বিদ্যুৎনারায়ণ দাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কিছুক্ষণের মধ্যেই। তিনিও পুলিশের সঙ্গে শুরু করে দেন বচসা।
অভিযোগ, তাঁর ছেলেকে ধরার জন্য পুলিশকে গালিগালজও করেন বিদ্যুৎবাবু। পুলিশ জানিয়েছে, এর আগে এক বার বৈধ কাগজপত্র ছাড়া মোটরবাইক চালানোর দায়ে জরিমানা হয়েছিল বিদ্যুৎবাবুর। সে দিনও তিনি পুলিশের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছিলেন বলে অভিযোগ। এ দিন মানবেন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘মোটরবাইক বাজেয়াপ্ত করা হবে বললে বিদ্যুৎবাবু আমাকে হুমকিও দেন।’’ বিদ্যুৎবাবুকে সার্ভে পার্ক থানায় নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করা হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে মোটরবাইকটিও।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কখনও কলিন স্ট্রিটে দুষ্কৃতী দলের মধ্যে গোলমাল থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ, তো কখনও মির্জা গালিব স্ট্রিটে পানশালায় ঝামেলা থামাতে গিয়ে প্রহৃত হয়েছে তারা। আইন ভাঙা বেপরোয়া বাইকচালকদের আটকাতে গিয়ে অনেকগুলি ঘটনায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীকে মার খেতে হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবারের দু’টি ঘটনা নিয়ে এ বছর কর্তব্যরত পুলিশের অপদস্ত হওয়ার ঘটনার সংখ্যা মোট ১১।