প্রতীকী ছবি।
আশি বছরের বৃদ্ধা মা ঘরের দরজায় ধাক্কা দিয়ে ষাট বছরের ছেলেকে ডেকেই চলেছেন। দরজা খোলা তো দূরের কথা, ভিতর থেকে কোনও সাড়াই মিলছিল না। বৃদ্ধার চেঁচামেচি শুনে ঘটনাস্থলে আসেন এলাকাবাসীরা। তাঁরাও ফ্ল্যাটে চলে এসে ডাকাডাকি শুরু করেন, দরজায় ধাক্কা দেন। কিন্তু সেই ঘরের ভিতর থেকে শুধুই পাওয়া যায় গোঁ গোঁ শব্দ। যা শুনে সন্দেহ হয় এলাকাবাসীর। তাঁরাই খবর দেন পুলিশে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ প্রথমে ওই ঘরের দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। কিন্তু বিফল হয় তারাও। এর পরেই একটি মই জোগাড় করে তা দিয়ে ওই বিল্ডিংয়ের দোতালার জানলা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন পুলিশকর্মীরা। দেখেন, খাটের নীচে মাটিতে পড়ে গোঁ গোঁ শব্দ করছেন ওই বৃদ্ধার ছেলে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার সকালে মানিকতলা থানা এলাকার বিবেকানন্দ রোডের ওই ঘটনায় অসুস্থ ব্যাক্তির নাম সুদীপ ঘোষ। তাঁকে আরজিকর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, সুদীপবাবুর স্ট্রোক হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানায়, পাঁচতলা বাড়ির দোতলায় মাকে নিয়ে ভাড়া থাকেন সুদীপবাবু। দুই কামরার ফ্ল্যাটের একটি ঘরে থাকেন তিনি, অন্যটিতে তাঁর মা। তাঁর মা ঠিক মতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। পাশাপাশি বয়স জনিত কারণে তিনি সব কিছু ঠিক ভাবে বলতেও পারছিলেন না। ফলে কখন থেকে ছেলে ঘরের দরজা খুলছিলেন না, তা-ও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল না মায়ের কাছে। এলাকাবাসীদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পেরেছেন, শনিবার সকাল থেকেই ওই বৃদ্ধা নিজের ঘরের বাইরে এসে ছেলেকে ডাকতে থাকেন দরজায় ধাক্কা দিয়ে। যা নজরে আসে ওই আবাসনের অন্য আবাসিক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পুলিশের দাবি, সুদীপবাবু আগে বেসরকারি সংস্থায় কাজ করলেও বর্তমানে তিনি কোনও চাকরি করতেন না। সুদীপবাবুদের কিছু আত্মীয়ের ওই আবাসনে ফ্ল্যাট থাকলেও বর্তমানে তাঁরা অন্যত্র থাকেন। তদন্তকারীরা জানান, প্রথমে তাঁরা একতলার দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে বিশেষ সুবিধে হয়নি। ঘরের ভিতরে বন্ধ থাকা সুদীপবাবু বেঁচে রয়েছেন বুঝতে পেরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মানিকতলা থানার পুলিশকর্মীরা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে না ডেকেই এলাকা থেকে একটি মই জোগাড় করেন। সুদীপবাবুর ঘরের জানলার সামনে মইটি বসানো হয়। এর পরে পুলিশকর্মীরা জানলা ভেঙে তাঁদের ফ্ল্যাটের ভিতরে ঢোকেন। পরে দরজা খুলে সুদীপবাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান তাঁরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, উদ্ধারের সময়ে সুদীপবাবু আচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন। চিকিৎসকদের ধারণা, শুক্রবার রাতের দিকেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। তার পর থেকে ওই ভাবেই ঘরের ভিতরে পড়ে ছিলেন ওই ব্যক্তি। এ দিনের ঘটনার পরেই খবর দেওয়া হয় সুদীপবাবুর এক আত্মীয়কে। তিনি ফোনে জানান, মা-ছেলে দীর্ঘদিন ধরেই এক সঙ্গে থাকতেন। তবে কী হয়েছিল, তা তিনি জানেন না।