‘ছেলেকে নিয়ে মরতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি, মরিনি’

আর্থিক দেনায় জর্জরিত হয়ে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্যই সন্তান এবং নিজের মাকে মেরে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি দমদম-কাণ্ডে অভিযুক্ত পৌলোমী সেনের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:০৮
Share:

এথান আব্রাহাম।

আর্থিক দেনায় জর্জরিত হয়ে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্যই সন্তান এবং নিজের মাকে মেরে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি দমদম-কাণ্ডে অভিযুক্ত পৌলোমী সেনের।

Advertisement

সোমবার তপসিয়ার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পৌলোমী বলেন, ‘‘আমি বাঁচতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এত সাংঘাতিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম যে মনে হল, মারা এবং মরা ছাড়া কোনও পথ নেই!’’ কী এমন সেই পরিস্থিতি? পৌলোমী জানান, তাঁর প্রচুর টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। এত দেনা কী ভাবে শোধ হবে, তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। পৌলোমী বলেন, ‘‘২০-২৫ লক্ষ টাকা দেনা। আমার কাছে কোনও টাকা নেই। কাউকে একটা টাকাও শোধ করতে পারব না। রাস্তায় থাকা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। এমন ভাবে সমস্যায় জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলাম যে, মাথা কাজ করছিল না। তাই শনিবার রাতে ছেলেকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিলাম। যাতে ও কোনও শব্দ করতে না পারে। ছেলে ঘুমনোর পরে গলা টিপে মেরেছি। এর পরে অন্য ঘরে গিয়ে মাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করি। ছেলে এবং মা মারা গিয়েছে ভেবে ছুরি দিয়ে নিজের হাত কাটতে থাকি। এক সময়ে জ্ঞান ছিল না। পরের দিন বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমি মরিনি! তখনই ছাদ থেকে ঝাঁপ দিলাম।’’

এই পরিণতির জন্য নিজেকেই দায়ী করেছেন সন্তানকে খুনে অভিযুক্ত মা। তাঁর কথায়, ‘‘আমার সব ছিল। নিজেদের ফ্ল্যাট, টাকাপয়সা। আস্তে আস্তে কী যে হয়ে গেল। জপুরে একটা কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট খুলেছিলাম। কিন্তু ব্যবসায় খুব ক্ষতি হল। ব্যাঙ্ক থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছিলাম। সে সব দেনা শোধ করব কী করে? মা আর দাদা অনেক বার সাবধান করেছে। সাহায্যও করেছে ওরা। কিন্তু আমি কিছুই রাখতে পারিনি।’’ আট বছরের সন্তানকে মারার কারণ জানতে চাইলে পৌলোমী বলেন, ‘‘ছেলেটাকে মারতে চাইনি। মাকেও মারতে চাইনি। ওদের সঙ্গে নিয়ে নিজেও মরে যেতে চেয়েছিলাম। ছেলেটাকে দেখে খুব কষ্ট হত। পুষ্টির অভাবে শুকিয়ে গিয়েছিল। এমন দিনও গিয়েছে যে দিন শুধু নুন-ভাত খেয়ে কাটিয়েছি। মাঝে ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে পারছিলাম না। আবার কোনও মতে যদিও বা স্কুলে ভর্তি করি, তা-ও টানতে পারছিলাম না।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: এথান দীর্ঘদিন ধরে অত্যাচারিত, ইঙ্গিত তদন্তে

ছেলের প্রসঙ্গের পরে নিজের সম্পর্কে পৌলোমী বলেন, ‘‘আমি নিজে অবসাদের রোগী। মনোরোগ চিকিৎসককে দেখাচ্ছিলাম। ওষুধ কেনার টাকা ছিল না। ওষুধ বন্ধ রাখায় শরীর আরও খারাপ হতে লাগল। মাকে কিছু জানাতাম না। ছেলেও তো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু। ওর ওষুধের খরচও অনেক। সেটাও জোগাড় করতে পারছিলাম না।’’

আরও পড়ুন: মেয়ে তখন বারবার বলছে, আত্মহত্যা করো

আর্থিক সাহায্যের জন্য এক সময়ে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে বন্ধুদের সাহায্য চান পৌলোমী। টুইটার অ্যাকাউন্টও খোলেন। পৌলোমীর দাবি, ‘‘নিজেদের দুনিয়া থেকে বেরিয়ে কেউই সাহায্য করবে না বুঝতে পেরে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিই। টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অনেক তারকাকেও টুইট করে সাহায্যের জন্য আর্জি জানিয়েছিলাম। কারও সাহায্য পাইনি। শেষে মা আর ছেলেকে মেরে নিজেও মরার চেষ্টা করলাম। অথচ আমার কপাল দেখুন, মরলাম তো না! ছেলের খুনের দায়ে এ বার পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন