Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মেয়ে তখন বারবার বলছে, আত্মহত্যা করো

মা বলছেন, অবসাদের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেয়ে। তাতেই কি বেড়েছিল সঙ্কট? মেয়ে জানালেন, ছেলের খাওয়া-পরায় অনটন আর সহ্য হচ্ছিল না। তাঁদের মুখোমুখি সৌরভ দত্ত।মা বলছেন, অবসাদের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন মেয়ে। তাতেই কি বেড়েছিল সঙ্কট? মেয়ে জানালেন, ছেলের খাওয়া-পরায় অনটন আর সহ্য হচ্ছিল না। তাঁদের মুখোমুখি সৌরভ দত্ত।

হাসপাতালে মালবিকা সেন। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে মালবিকা সেন। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

মালবিকা সেন
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৫৪
Share: Save:

কয়েক দিন আগেও এক বার নাতিকে মারতে গিয়েছিল। মুখে যা আসছিল, তা-ই বলছিল। নাতিকে কোনওমতে বাঁচাই। শনিবার রাতে আমার ঘরে ঢুকে পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করল!

হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এ সব কী? মেয়ে তখন বারবার বলছে, আত্মহত্যা করো। আমি বললাম, এ সব আমি করব না। এই বলে ছুরিটা সরিয়ে নেতিয়ে পড়ি। আঘাত লেগেছিল। কিন্তু ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুতে গিয়েছিলাম, হয়তো সেই জন্যই তখন কিছু বুঝতে পারিনি। বিছানায় এবং আমার কাপড়ে যে রক্তের দাগ ছিল, পরদিন সকালে উঠে সেটা পর্যন্ত খেয়াল করিনি। দেখি, পৌলোমী উঠছে না। ডাকাডাকি করেও ওদের ঘর থেকে কোনও সাড়া পাইনি। বিকেলে উঠেছে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কী রে! ব্যাপার কী? আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছাদে চলে গেল। পরে পাড়ার লোকের কাছে জানলাম, ও ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে।

আমার মেয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিল। নাগেরবাজারে একটি হাসপাতালে এক চিকিৎসকের কাছে ওকে নিয়ে যেতাম। কিন্তু কিছু দিন ধরে ওষুধ খাচ্ছিল না। ছেলেটাকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিল। এর আগেও ওঁর খামখেয়ালি আচরণের জন্য এক বছর নাতির পড়াশোনা বন্ধ ছিল। অনেক বুঝিয়ে সে সব ঠিক করেছিলাম। লজ্জায় আত্মীয়দের কিছু জানাইনি। খুব অশান্তি করলে বলতাম স্থানীয় নেতাদের জানাব। তা শুনেই এমন আচরণ করত যে, ভয়েই বেরোতাম না। খুব বেহিসেবি খরচ করত। বুঝেই পেতাম না, কোথা থেকে টাকা আসছে। জিজ্ঞাসা করতাম, শপিং করছিস, বেড়াতে যাবি বলছিস, টাকা কোথা থেকে আসছে? পাত্তাই দিত না। চারদিকে প্রচুর ধার হয়ে গিয়েছিল ওর।

১৯৯৭ সালে আমার স্বামী মারা গিয়েছেন। কিন্তু নিজের অসুবিধের কথা কাউকে বুঝতে দিইনি। মেয়ে যে এমন করবে, ভাবতেই পারিনি আমি।

জানেন, আমি ইংরেজিতে এম এ। মেয়েও ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে পড়েছে। বারো বছর আগে নয়ডায় একটি সংস্থায় চাকরি করত। তখন একটি ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে বিয়ে করল। কিছু দিন পরে খুব অশান্তি শুরু হলে মেয়েকে নিয়ে আসি। এর দু’বছর পরে একটি খ্রিস্টান ছেলের সঙ্গে ভাব হয়। বিয়েও হয় ওদের। ২০১০ সালে আমার নাতি হয়। ওই বছরই মেয়ের আচরণের জন্য ঘর ছেড়ে চলে যায় জামাই। এর পরে ওর অবসাদ আরও বাড়ে। নাতি আমাকে খুব ভালবাসত। খুব কষ্ট করে পড়াচ্ছিলাম। কী ভাল রেজাল্ট করল। সেই নাতির নিথর দেহের পাশে এক দিন বসে থাকতে হবে, স্বপ্নেও ভাবিনি!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Depression Suicide Dumdum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE