বন্দি মায়ের উদ্যোগে ছেলের এইচআইভি-র চিকিৎসা শুরু 

জেল থেকে বারবার চেষ্টা করেছেন ছেলের খোঁজ নিতে। পারেননি। যখন খবর পেলেন, জানতে পারেন গত দু’বছর ধরে এইচআইভি পজিটিভ ছেলের কোনও চিকিৎসাই হচ্ছে না!

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৪২
Share:

প্রতীকী ছবি।

নিজে এইচআইভি পজিটিভ। ন’বছরের একমাত্র ছেলের রক্তও জন্ম থেকে এইচআইভি পজিটিভ। ডাকাতির মামলায় বছর কয়েক ধরে আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারে বন্দি থাকায় সেই ছেলের খোঁজ পাচ্ছিলেন না দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের বাসিন্দা রাজিয়া বিবি (নাম পরিবর্তিত)। এমন পরিস্থিতিতে কারাগারের ভিতর থেকে লড়াই চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যে ছেলেকে হোমে পাঠিয়ে চিকিৎসা শুরুর ব্যবস্থা করলেন বন্দি মা। এইচআইভি সচেতনতার এমন দৃষ্টান্তের প্রশংসা করছেন সকলে।

Advertisement

জেল থেকে বারবার চেষ্টা করেছেন ছেলের খোঁজ নিতে। পারেননি। যখন খবর পেলেন, জানতে পারেন গত দু’বছর ধরে এইচআইভি পজিটিভ ছেলের কোনও চিকিৎসাই হচ্ছে না! স্বামীও দ্বিতীয় বিয়ে করে নিয়েছেন। মায়ের মন। তাই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কেউ সংশোধনাগারে কাজ করতে এলেই তাঁদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করতেন তিনি। যদি তাঁদের মাধ্যমে ছেলের কোনও খোঁজ মেলে এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়, সেই আশায়। সম্প্রতি সংশোধনাগারের ভিতরে এইচআইভি নিয়ে কাজ করা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীকে সে কথা বলেন রাজিয়া। তাঁর একটাই আর্তি, —‘‘আমার ছেলের খোঁজ এনে তাঁকে বাঁচান। না হলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে ছেলেটা!’’ মায়ের কাছ থেকে এমন আবেদন শুনেই ওই সংস্থার কর্মী সুধা ঝাঁ ছেলেটির খোঁজ শুরু করেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার চাইল্ড লাইনকে দিয়ে খোঁজ নিতে পাঠান রাজিয়ার শ্বশুরবাড়িতে। চাইল্ড লাইন গেলেও রাজিয়ার স্বামী এবং দ্বিতীয় স্ত্রী ছেলের কোনও খোঁজ দিতে রাজি হননি। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা যায়, রাজিয়ার স্বামী বিয়ে করার পর থেকে প্রথম পক্ষের সেই ছেলেকে বাড়িতে থাকতে কেউ দেখেননি। মাঝে মাঝে এক দু’দিনের জন্য সে আসে। তা হলে ছেলে কোথায়?

ফের রাজিয়া বিবির সঙ্গে কথা বলে সুধা জানতে পারেন তাঁর বিবাহিতা মেয়ের কথা। রাজিয়ার কাছ থেকেই মেয়ের ফোন নম্বর পাওয়া যায়। সুধা সেই মেয়েকে ফোন করে সব কথা জানালে, তিনিই বাপের বাড়ি থেকে ভাইয়ের খোঁজ এনে দেন। শেষে দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি মাদ্রাসার হস্টেল থেকে বুধবার পুলিশ নিয়ে উদ্ধার করা হয় রাজিয়ার বছর নয়েকের ছেলেকে। এ কাজে পাশে থাকে ওই জেলার শিশু কল্যাণ সমিতি। সমিতির নির্দেশে তাকে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে রাখা হয়েছে। তখনই জানা যায়, দু’বছরের উপরে ওই বালকের কোনও চিকিৎসাই হয়নি। প্রথমে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও কাগজও মিলছিল না। পরে রাজিয়ার মেয়ে জানান, তাঁর কাছেই রয়েছে ভাইয়ের চিকিৎসার কাগজ। দেখা যায়, বছর দু’য়েকের উপরে এইচআইভি-র কোনও চিকিৎসা হয়নি বালকটির। ফলে ফের নতুন করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে তার।

Advertisement

ছেলেটিকে আপাতত হোমে নিয়ে আসতে পেরে এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পেরে খুশি দুই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। আর রাজিয়া? সংশোধনাগারের ভিতরে থাকা রাজিয়া সুধাকে জানিয়েছেন, এত দিনে তিনি নিশ্চিন্ত। এ দিকে বন্দি মায়ের এইচআইভি সচেতনতা দেখে মুগ্ধ সুধা এবং যে হোমে বালকটিকে রাখা হয়েছে তার কর্ণাধর কল্লোল ঘোষ। তাঁদের বক্তব্য, সাধারণ ভাবে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে এইচআইভি নিয়ে সচেতনতা থাকে না। সেখানে বন্দি মা ছেলেকে বাঁচাতে যা যা করলেন, তা সকলের শিক্ষণীয়।

চিকিৎসা বন্ধ থাকলে তো রোগ বেড়ে যাবে? এ ক্ষেত্রে ফের চিকিৎসা শুরু সম্ভব? শিশু সংক্রামক রোগের চিকিৎসক শুভাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘সাধারণত রক্তে এইচআইভি জীবাণু বাসা বাঁধলে আগে রোগ প্রতিরোধকারী বিশেষ শ্বেত কণিকাগুলি (সিডি-ফোর) ধ্বংস হতে থাকে। সে ক্ষেত্রে সেই শ্বেতকণিকার পরিমাণ ঠিক রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। তা খুব কম না হলে এবং দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে শারীরিক অবনতি রোখা সম্ভব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন