কাজিয়ায় আটকে ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের প্রস্তাব

মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে পার্কিং লটের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শ্রেণির ঠিকাদার এবং ট্যাক্সিচালকদের মতান্তরকে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৫৪
Share:

ছবি: সংগৃহীত

শহরের বিভিন্ন জায়গায় ট্যাক্সিস্ট্যান্ড তৈরির প্রস্তাব হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। এত দিনেও বাস্তবায়িত হল না সেটি। যার মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে পার্কিং লটের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক শ্রেণির ঠিকাদার এবং ট্যাক্সিচালকদের মতান্তরকে। সম্প্রতি নবান্নের চাপে নাড়া পড়েছে কার্যত হিমঘরে যাওয়া সেই প্রকল্প।

Advertisement

সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে প্রায় পাঁচ বছর আগে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ট্যাক্সিস্ট্যান্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নবান্ন। পুলিশ, পরিবহণ দফতর এবং পুরসভা যৌথ ভাবে শহরের ৫৩৩টি পার্কিং লটে জায়গা চিহ্নিতও করে। সেখানে প্রায় সাড়ে সাতশো

ট্যাক্সি রাখার জন্য হলুদ রং করা হয়। তার পরেও ফাঁকা রয়ে গিয়েছে সেই সব স্ট্যান্ড।

Advertisement

সালটা ২০১২-’১৩। একের পরে এক হলুদ ট্যাক্সি প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ সরকারের কাছে আসছিল সেই সময়ে। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তৎকালীন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র ট্যাক্সি সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন। স্থির হয়, কিছু হলুদ ট্যাক্সির গায়ে ‘নো রিফিউজাল’ কথাটি লেখা থাকবে। শর্ত হল, ওই ধরনের ট্যাক্সি কোনও যাত্রীকে ‘যাব না’ বলতে পারবে না। পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের সামনে তা মেনে চলার অঙ্গীকারও করেছিল ট্যাক্সি সংগঠনগুলি। এ-ও ঠিক হয়েছিল, ‘নো রিফিউজাল’ লেখা কোনও ট্যাক্সি যাত্রীকে ফেরালে সেই গাড়ির নম্বর নিয়ে পুলিশে অভিযোগ জানানো যাবে। সে ক্ষেত্রে জরিমানা তিন হাজার টাকা ধার্য করার আইনও চালু হয়।

এর পরেও অবশ্য ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সির যাত্রী প্রত্যাখ্যানের ভূরি ভূরি অভিযোগ জমা পড়তে থাকে লালবাজার ট্র্যাফিকের কাছে। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, ‘নো রিফিউজাল’ ট্যাক্সির বেশ কয়েকটির বিরুদ্ধে ৩০-৪০টি মামলা হয়েছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকটি ট্যাক্সির এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য হয়েছিল। তাদের বেশির ভাগই টাকা মেটায়নি। পরে ট্যাক্সি ইউনিয়নের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জরিমানা কমানোর দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি বলা হয়েছিল, যে হারে ওলা, উব্‌রের সংখ্যা বাড়ছে শহরে তাতে হলুদ ট্যাক্সির বাজার খারাপ হয়ে যাবে। তাই তারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় স্ট্যান্ড করার আবেদন জানায়। এর পরেই সরকার জরিমানার টাকা কমিয়ে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা করে এবং বিভিন্ন পার্কিং লটে ২-৩টি করে হলুদ ট্যাক্সি রাখার জায়গা দিতে বলে পুর প্রশাসনকে।

কেন সে সব বাস্তবায়িত হল না? গড়িয়াহাট, ধর্মতলার একাধিক ট্যাক্সিচালকের বক্তব্য, সেখানে গাড়ি নিয়ে গেলে ঢুকতে দেন না পার্কিংয়ের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারেরা। পুলিশ সহযোগিতা করলে তাঁরা সেখানে ট্যাক্সি রাখতে পারবেন বলে দাবি ওই চালকদের। কী ভাবে ওই স্ট্যান্ডগুলিতে ট্যাক্সি রাখা যায় ইতিমধ্যেই তা নিয়ে ফের আলোচনা শুরু করেছে পুলিশ এবং পুরসভা।

যদিও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের নির্দেশে পাঁচশোরও বেশি এলাকায় হলুদ ট্যাক্সির জন্য জায়গা দেওয়া হয়েছে। ওঁরা তো সেখানে রাখতেই পারেন!’’ ট্যাক্সিচালকদের অভিযোগ, পার্কিংয়ের ঠিকাদারেরা ট্যাক্সি রাখতে বাধা দিচ্ছেন। তবে উপায়? মেয়র পারিষদের দাবি, ‘‘আজ পর্যন্ত এমন একটি অভিযোগও পুরসভায় জমা দেননি ট্যাক্সিচালকেরা। তেমন সমস্যা হলে আগে পুরসভাকে জানান তাঁরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন