২২ পল্লি সর্বজনীন (হাজরা)
প্রতি বারের মতোই আমাদের পুজো এ বারও সাবেকি। ৭২তম বছরে পুরনো বাড়ির ঠাকুরদালানের আদলে মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। একচালার, সোনালি সাজের প্রতিমা। নজর কাড়বে ঝাড়বাতির ব্যবহার। রাস্তা থেকে মণ্ডপ পর্যন্ত থাকবে আলোর পাঁচটি গেট। পঞ্চমীতে উদ্বোধন। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অষ্টমীর ভোগ আমাদের পুজোর অন্যতম আকর্ষণ।
৬৬ পল্লি
৬৬তম বছরটি আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শহর কলকাতার বয়স পেরিয়েছে তিনশো। সময়ের সঙ্গে মুছে গিয়েছে বহু ইতিহাস। সেগুলি ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই শিল্পী পূর্ণেন্দু দে থিম সাজিয়েছেন ‘তিলোত্তমা’ —রেখায় রেখায় প্রাণের শহর। প্রবেশপথ থেকে মণ্ডপ, প্রায় ১১০ ফুট লম্বা জায়গার পুরোটাই হয়ে উঠবে পুরনো কলকাতা। আবহসঙ্গীত করেছেন জয় সরকার। প্রতিমা সাবেক হলেও থিমের ছোঁয়া মিলবে রঙের ব্যবহারে। পুজোর সভাপতি রজত সেনগুপ্ত জানালেন, মহালয়ার আগেই পথশিশুদের বস্ত্র বিতরণ করা হবে।
মহাজাতি কল্যাণ সমিতি (বোসপুকুর)
সাবেক পুজোর জাঁকজমক ছাপিয়ে আমাদের পুজোয় আন্তরিকতাই বারবার ফুটে ওঠে। দেখতে দেখতে ৬৫ বছরে পৌঁছে গেলাম আমরা। মণ্ডপ সেজে উঠছে পুরনো রাজবাড়ির আদলে। কার্নিসে থাকবে থার্মোকলের নকশা। এ ছাড়াও মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করা হবে কাচ, ঝিনুক, শামুক ইত্যাদি। পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মা-ও থাকছেন সাবেক রূপে। সপ্তমী থেকে নবমী রোজই থাকছে ভোগ বা বসে খাওয়া।
কামডহরি নারকেল বাগান সর্বজনীন (গড়িয়া)
৬০ বছরে পা দিল আমাদের পুজো। সমস্ত নিয়ম সুষ্ঠু ভাবে পালন করে পুজো করি আমরা। মণ্ডপ সাজাতে ব্যবহার করা হচ্ছে থার্মোকলের নকশা আর কুলো। মা থাকছেন হিমালয় কন্যা শিবানীর রূপে। সম্পূর্ণ মাটির তৈরি প্রতিমার মুকুট জটার মতো দেখতে হবে। এতে মায়ের সন্ন্যাসিনী রূপটিই আরও বেশি করে ফুটে উঠবে। পাশাপাশি, গোটা পাড়া মুড়ে দেওয়া হচ্ছে আলোয়। পঞ্চমীতে পুজোর উদ্বোধন করবেন রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীরা। সঙ্গে থাকছে বাউল গান। চার দিনই রয়েছে ভোগপ্রসাদ খাওয়ার আয়োজন।
হরিদেবপুর নিউ স্পোর্টিং ক্লাব
দশম বছরে আমাদের থিম ফ্রেম। আমরা যা কিছু দেখি, সবই এক ধরনের ফ্রেমের মধ্যে দিয়ে। নানা প্রকার ফ্রেমে সাজছে আমাদের মণ্ডপ। পুরো মণ্ডপে থাকছে চারটি ধাপ। বিশাল ফ্রেমের আকারে বানানো গেটের মধ্যে দিয়ে ঢুকবেন দর্শকেরা। কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো দৈনন্দির জীবনের অজস্র ছবিও থাকছে। একচালার প্রতিমাও দেখতে হবে ফ্রেমের মধ্যে দিয়ে।
নাকতলা অরবিন্দ সঙ্ঘ
আমাদের পুজোর এ বার ৬৭ বছর। কাল্পনিক মন্দিরের আদলে বানানো হবে মণ্ডপ। উঁচু চূড়া-সহ একটি কারুকার্যময় প্রবেশপথ তৈরি করা হবে। ভিতরে থাকছে ঝাড়লণ্ঠনের সাজ। ডাকের সাজের সাবেক প্রতিমা। পুজোয় মেদিনীপুর থেকে শিল্পীরা আসবেন মাদল, বাঁশির মতো বাদ্যযন্ত্র নিয়ে। এক সন্ধ্যায় তাঁরা পরিবেশন করবেন লোকনৃত্য।
প্রগতি সঙ্ঘ সর্বজনীন (বেহালা)
এ বার আমাদের থিম ‘শক্তিরূপিণী’। শক্তির আধার রূপেই দেখা মিলবে মায়ের। ৭১তম বর্ষে মণ্ডপের প্রবেশপথ তৈরি হচ্ছে ত্রিনয়নের আদলে। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহৃত হচ্ছে দুর্গার অস্ত্র। এই সব অস্ত্র যে দেবতারা দান করেছিলেন, থাকবে তাঁদের মূর্তিও। এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে প্লাইউড। মহিষাসুরমর্দিনী রূপে একচালার প্রতিমা থাকবে ত্রিশূলের উপরে। মণ্ডপের আবহে আলাদা মাত্রা যোগ করবে স্তোত্রপাঠ। পুজোর সন্ধ্যায় পাড়ার মহিলারা নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
নবপল্লি উন্নয়ন সমিতি (ঠাকুরপুকুর)
বরাবরের মতোই সাবেক পুজো করছি আমরা। ৪৮তম বর্ষে মণ্ডপের আদল মন্দিরের মতো। চূড়ায় থাকবে গুহাচিত্রের অলঙ্করণ। মণ্ডপের ভিতরে ঝলমল করবে ঝাড়বাতি ও চুমকির সাজ। সাবেক প্রতিমা থাকছে সোনালি রাংতার সাজে। চতুর্থীতে পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে পাড়ার শিশু ও মহিলারা। বাকি দিনগুলিতে থাকছে বসে আঁকো, গান, অন্ত্যাক্ষরী প্রতিযোগিতা ও ভোগের আয়োজন।
পল্লি উন্নয়ন সমিতি (বাসুদেবপুর)
৫৭তম বছরে আমাদের থিম ‘রাঙাব মা-কে/ রাঙা মাটির ছোঁয়াতে’। লালমাটির কথা বললেই আমাদের চোখে ভাসে বীরভূম, বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ার কথা। তাই আমাদের মণ্ডপে দেখা মিলবে এই তিন জেলার মানুষের জীবনযাত্রার ছবি। প্রধানত বাঁশ দিয়েই তৈরি হচ্ছে মণ্ডপটি। নানা রকম রং করা বাঁশের নকশার মাঝে থাকবে লাল শালু ও দড়ির সাজ। মণ্ডপের সামনে থাকবে ছো নাচের ভঙ্গিতে একটি মূর্তি। ভিতরে ছো-এর মুখোশ। মাটির হাঁড়ি কেটে নকশা করা হচ্ছে। হাঁড়ি ও ঝুড়ির মধ্যে আলো রেখে তৈরি হবে মায়াবি আলো-আঁধারি পরিবেশ।
গল্ফ গ্রিন শারদোৎসব কমিটি (ফেজ ২)
প্যাগোডার আদলে তৈরি আমাদের মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার হচ্ছে পাটকাঠি ও চট। চার দিকে থাকবে বাগান। সেখানে থাকবে পুরনো মূর্তির মডেল। কালনা থেকে আনা হচ্ছে মানানসই আলো। প্রতিমায় থাকছে নটরাজ মূর্তির ভঙ্গিতে। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় থাকছে ‘দুর্গাপুজোর এ কাল ও সে কাল’ নামে একটি অনুষ্ঠান। পুজোর দিনগুলোতে নানা প্রতিযোগিতা থাকবে কচিকাঁচাদের জন্য। এ ছাড়াও, বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দা ও গৃহহীন মহিলাদের বসে খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
টালা পল্লি সাধারণ দুর্গোৎসব
আমাদের পুজোয় ‘যোগাসনে যোগমায়া’ ভাবনাকে রূপায়িত করতে গাছকে বিভিন্ন যোগের ভঙ্গিতে দেখানো হয়েছে। যোগের চার স্তরের বিবর্তনও থাকবে। অনুভব দত্তের ভাবনায় ৫০০ টিনের ড্রামে তৈরি হয়েছে গাছ। থাকছে পোড়ামাটির বিভঙ্গ, পাট, প্লাস্টার, বালি ও বেতের তৈরি পাতার কাজ। প্রবেশপথে থাকছে ফাইবারের ৩০ ফুটের ধ্যানমগ্ন যোগীমূর্তি। সায়ক রাজের তৈরি প্রতিমা যোগাসনে আসীন।
শ্যামপুকুর আদি সর্বজনীন
১০৬ বছরের এই পুজোর মূল ধারা সাবেকিয়ানা বজায় রাখা। শৈলেন্দ্রনাথ পালের তৈরি প্রতিমা চিরন্তন ঘরানার। মণ্ডপ সাজছে কাঠের পুতুল, ভেঁপু, বাঁশি, ঘুড়ি-লাটাই, লাট্টু, ঝুমঝুমি দিয়ে। শিল্পী বিমল মাইতি ও মধুময় মাইতির ভাবনায় রূপ পেয়েছে থিম ‘ফিরে দেখা’।
বিডন স্ট্রিট সর্বজনীন
আমাদের ৭৬তম বর্ষের পুজো বরাবরের মতোই সাবেকিয়ানাকে বহন করেই হবে। মণ্ডপ হচ্ছে রাজবাড়ির আদলে। থাকছে শোলা ও থার্মোকলের তৈরি নানা মূর্তি। শিল্পী নারায়ণচন্দ্র রুদ্র পালের তৈরি প্রতিমা সাবেক। পুজোর আচার-বিধির সঙ্গে থাকছে বিশেষ সন্ধিপূজা ও ভোগ বিতরণের ব্যবস্থা।
অধিবাসীবৃন্দ কানাই ধর লেন
৬৬তম বর্ষের ভাবনা নবান্ন উৎসব। অগ্রহায়ণে নতুন ধানে ভরে ওঠে গ্রামবাংলা। সেই উৎসবেরই স্বাদ দেবে আমাদের পুজো। মণ্ডপ সেজে উঠেছে ধানের ছড়ে। থাকছে ধানের গোলা, লাঙল কাঁধে কৃষক। শিল্পী বীরেন্দ্রনাথ মাইতি গড়ে তুলছেন মাতৃমূর্তি। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে বড় পটে আঁকা দেব-দেবীর চিত্র।
এন্টালি কাঁঠালবাগান সর্বজনীন
৭০তম বছরে আমাদের পুজোমণ্ডপ এ বার পাকাপাকি ভাবে দুর্গামন্দির হয়ে উঠছে। তাই বহু পুরনো এই পুজোকে আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলার প্রয়াস তো আছেই। শিল্পী অভয়চরণ দাস তৈরি করছেন প্রায় ১২ ফুট উঁচু প্রতিমা। এ বারও থাকছে আমাদের প্রতিমা দর্শন করে প্রতিদিন একটি করে সোনার ও রুপোর কয়েন জেতার সুযোগ।
দমদম তরুণ দল
‘মা’-ই ধরে রেখেছেন এই মহাবিশ্ব। সেই ভাবনায় এ বছরের পুজোয় গোটা হেঁশেলকে তুলে ধরা হচ্ছে মণ্ডপে। চারটি স্তরে সেজে উঠছে পুজোপ্রাঙ্গণ। প্রথম স্তরে নজর কাড়বে ৩০ ফুটের কুলো। দ্বিতীয় স্তরে বঁটি, তৃতীয় স্তরে ১২ ফুটের বেলন-চাকি। শেষে ৪০ ফুটের উনুন। মণ্ডপ সাজছে কাঠের উপর মাটির জিনিস, পটচিত্রে। দেবতোষ করের প্রতিমা সাবেক ও আধুনিকতার মিশেলে। অনির্বাণ দাসের থিমের সঙ্গে থাকছে জয় সরকারের আবহসঙ্গীত।
সুভাষনগর উত্তরপাড়া সর্বজনীন (দমদম ক্যান্টনমেন্ট)
আমাদের মণ্ডপ সেজে উঠছে গ্রামীণ পুজোপ্রাঙ্গণের আদলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সহজ পাঠ’-এর ছবিতে সেজে উঠছে মণ্ডপের অন্দরসজ্জা। ডাকের সাজে ১২ ফুটের প্রতিমা। আলোর মালায় সজ্জিত প্রবেশ।
কেষ্টপুর প্রফুল্ল কানন (পশ্চিম) অধিবাসীবৃন্দ
আমাদের নিবেদন ‘ভাওয়াইয়ের দেশে, রঙের পরশে’। খাস কলকাতায় থেকেও ঘুরে আসতে পারেন রাজস্থান। মণ্ডপ সাজছে রাজস্থানি ভাওয়াই নাচের উপকরণ ও রঙিন হাঁড়িতে। শিল্পী অনিমেষ দাসের ভাবনায় দেওয়ালে থাকবে রাজস্থানি লোকশিল্পও। শিল্পী নবকুমার পালের তৈরি প্রতিমায় থাকছে রাজস্থানি ঘরানার ছোঁয়াচ।
মোহনবাগান বারোয়ারি
আমাদের পুজোর এ বার শততম বছর। তাই সাবেকিয়ানার পাশাপাশি থাকছে বিশেষ বার্তা। নারীশক্তির জাগরণ এ বারের মূল ভাবনা। চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি প্রতিমা এখানে সাবেক। অষ্টমীতে ভোগ বিতরণ ও অনুষ্ঠানও থাকছে।
বাগুইআটি উদয়ন
প্রাক্-সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের ভাবনা ‘সৃষ্টির উর্বরা শক্তি’। মণ্ডপ সাজছে সবুজ ধান, ফলের চালচিত্রে। শুভম দাসের চিরন্তনী ঘরানার প্রতিমায় থাকছে থিমের ছোঁয়াও। চতুর্থীতে উদ্বোধন। প্রতি দিন থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বস্ত্রদান, ভোগ বিতরণ প্রভৃতি।
পূর্ব কলিকাতা ছাত্র সমিতি
আমাদের ভাবনা ‘বিলুপ্তির পথে’। শিল্পী সন্তোষ ঘোষ খড়, মাটি, চট, কাচ ও বাঁশে তৈরি করছেন মণ্ডপ। ভিতরে থাকছে ভাদু, টুসু, বোলান, বাউল, দুপুরে মেয়েলি আড্ডা, ঢেঁকি, বৈঠা, নৌকার মডেল। নানা লোকশিল্পের প্রভাবে গড়ে উঠছে আমাদের প্রতিমা।