বেহাত: ভরাট হয়ে গিয়েছে খালের বেশির ভাগটাই। গজিয়ে উঠেছে ক্লাব। নিজস্ব চিত্র
রেললাইনের জমি দখল করে তৈরি হয়েছে ক্লাব। অভিযোগ, তারই আড়ালে চলছে জুয়ার ঠেক। এর ফলে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে বলে দাবি করছেন দমদমের নলতা-কালীবাড়ি রোডের বাসিন্দারা।
দমদম ক্যান্টনমেন্ট এবং দুর্গানগর স্টেশনের মাঝে ওই জায়গাটি তিন নম্বর রেলগেট হিসাবে পরিচিত। রেললাইন থেকে ৫-৭ ফুট দূরত্বে খালের উপরেই তৈরি হয়েছে দোতলা ক্লাববাড়ি। সম্প্রতি সেই ক্লাবের পিছনে একটি ঝাঁ-চকচকে শৌচালয় নির্মাণ চলছে। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, সন্ধ্যায় জুয়ার আসর ঘিরে সমাজবিরোধীদের আনাগোনা বাড়ছে। অশ্রাব্য গালিগালাজ আর চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন আশপাশের বাসিন্দারা। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘পুরসভা, পুলিশ জানে না, এমনটা হতে পারে না। সবটাই তো চোখের সামনে খোলাখুলি চলছে! নিয়ম ভেঙে কী ভাবে রেললাইনের ধারে পাকা নির্মাণ করে জুয়ার ঠেক চলে?’’ স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, ওখানে জুয়া খেলতে গেলে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে টাকা দিতে হয়। জুয়ায় কেউ জিতলে তার ভাগ পায় ক্লাব। সেই ভাগের টাকা কোথায় যাচ্ছে? খোঁজ নিলেই স্পষ্ট হবে, কী ভাবে নিশ্চিন্তে দখল করে বেআইনি নির্মাণ হয়।
তবে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে ক্লাবের অন্যতম সদস্য সুব্রত দাস বলেন, “ক্লাবে জুয়ার বোর্ড চলে না। ক্লাবের শৌচালয় নির্মল অভিযান প্রকল্পে হচ্ছে। অসামাজিক কাজ হলে প্রশাসন কি চুপ থাকত? কিছু মানুষ চক্রান্ত করে ক্লাবের বদনাম করছে। ক্লাবের সদস্যেরা দিনমজুর। সন্ধ্যার পরে তাস খেলে। অনেক সময় পয়েন্টেও খেলা হয়। তা জুয়া নয়।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, এক সময়ে খালটি প্রায় ২৫ ফুট চওড়া ছিল। তা দখল হতে হতে এখন তিন ফুটের নর্দমায় পরিণত হয়েছে। তা-ও নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। যার ফলে খালের বিভিন্ন জায়গা মজে গিয়ে মশাবাহিত রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। ৫০ বছরের বেশি বসবাস করছেন এমন এক প্রবীণের কথায়, ‘‘১৯৭৮ সালের বন্যাতেও এখানে জল জমেনি। কারণ ভরসা ছিল খালটি। আর এখন অল্প জলেই এলাকা ভেসে যায়, যার অন্যতম কারণ এই বেহাল খাল।’’ এ প্রসঙ্গে ক্লাবের তরফে কোনও উত্তর মেলেনি। দমদম পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সুস্মিতা দাস বলেন, ‘‘এলাকাবাসীরা এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। প্রশাসনকে বলেছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’’
বনগাঁ শাখার রেললাইন থেকে ক্লাবের দূরত্ব সামান্য। ফলে এলাকাটা রেল পুলিশের অধীন। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, রেললাইনের ধারে অসামাজিক কাজ চলার খবর তাঁরাও পাচ্ছেন। এক আধিকারিক জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ গুরুত্বপূর্ণ। সত্যি হলে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। অন্য দিকে, ব্যারাকপুর সিটি পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, এমন কোনও তথ্য তাঁদের কাছে নেই। অভিযোগ জমা পড়লে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।