Threat calls

জেলে বসেই ‘হুমকি ফোন’ তরুণীকে

জেল থেকে হুমকি-ফোন আসার পরেই আতঙ্কিত ওই তরুণী ক্যানিং মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:০০
Share:

প্রতীকী ছবি।

উদ্ধার হওয়া এক তরুণীকে ফোন করে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল জেলে বন্দি থাকা মূল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ওই তরুণীকে পাচারের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হামিদ মোল্লা গত রবিবার রাতে জেল থেকে ফোন করে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। সে জন্য মিথ্যা বয়ান দিতে হবে বলেও জানায় সে। জেল থেকে এ ভাবে হুমকি-ফোন আসার পরেই আতঙ্কিত ওই তরুণী ক্যানিং মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।

Advertisement

ক্যানিং ডিভিশনের মহিলা থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তিনি আরও জানান, এখনও এই মামলার কয়েক জন অভিযুক্ত জেলের বাইরে রয়েছে। তাই তারা হামিদের নাম নিয়ে ওই ফোন করেছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। জেল থেকে হামিদই ফোন করেছিল, প্রমাণ পেলে তা অবশ্যই জেল কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

ক্যানিংয়ের বাসিন্দা, বছর কুড়ির ওই তরুণী ২০১৬ সালের নভেম্বরে ভিন্‌ রাজ্যে পাচার হয়ে গিয়েছিলেন। ছোটবেলায় বাবা তাঁদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় সংসার চালাতে ছোট থেকেই জরির কাজ করতেন তিনি। ২০১৬ সালে ওই তরুণীর পিসেমশাই রমজান তাঁর সঙ্গে হামিদ মোল্লা নামে এক যুবকের বিয়ে ঠিক করে। প্রথম দিকে হামিদের সঙ্গে ফোনে কথা হত মেয়েটির। অভিযোগ, এক দিন বিয়ে দেওয়ার নাম করে মেয়েটিকে নিয়ে শিয়ালদহে যায় তার পিসেমশাই এবং সেখানেই পাচার করার জন্য হামিদের হাতে তাঁকে তুলে দেয়। হামিদ তাঁকে অজ্ঞান করে পুণেতে নিয়ে গিয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে। এর পরে দু’বছর সেখানেই ছিলেন ওই তরুণী।

Advertisement

২০১৮ সালে ওই যৌনপল্লিতে ঠাঁই হয় বাসন্তী থেকে পাচার হয়ে যাওয়া এক কিশোরীর। সেখানে দু’জনে পালানোর পরিকল্পনা করে। যৌনপল্লিতে আসা এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে বাসন্তীর ওই কিশোরী নিজের বাড়িতে ফোন করে ঠিকানা দিয়ে দেয়। এর পরে ২০১৮ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে পুণের পুলিশ উদ্ধার করে তাঁদের। উদ্ধার হয় পাচার হয়ে যাওয়া আরও কয়েক জন। তাঁদের প্রত্যেককে হামিদ ওই যৌনপল্লিতে বিক্রি করেছিল।

উদ্ধারের পরে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুণের একটি সরকারি হোমে ছিলেন ওই মেয়েরা। চলতি বছরের প্রথম দিকে তাঁরা বাড়ি ফিরে আসেন এবং এপ্রিলে হামিদ ও তার চার সহযোগী গ্রেফতার হয়। তবে আলাউদ্দিন নামে এক অভিযুক্ত এখনও অধরা।

হামিদ গ্রেফতার হওয়ার পরে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি তার টিআই প্যারেড হয়েছে। আর তার পরেই রবিবার একটি অচেনা নম্বর থেকে ওই তরুণীকে ফোন করে হামিদ হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।

জেলে বসে তোলাবাজি বা বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রায়ই রাজ্যের, বিশেষত কলকাতার একাধিক জেলের বন্দিদের থেকে মোবাইল ফোন, সিম, মাদক উদ্ধার করা হয়। তবে এই ঘটনায় বেশ আতঙ্কে রয়েছেন ওই তরুণী। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে জেলে গিয়েও হুমকি দিলে বাঁচব কী করে?’’ উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে নীহাররঞ্জন রাপ্তানের দাবি, তরুণীর অভিযোগ দায়ের করতেই অনেক সমস্যা হয়েছিল। মূল অভিযুক্ত-সহ কয়েক জন ধরা পড়ার পরে যদি জেল থেকে হুমকি দেয়, তা হলে তো সেটা অবশ্যই আতঙ্কের।

তরুণীর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হুমকি-ফোন আসা ওই নম্বরে ফোন করা হয়েছিল। তাতে এক ব্যক্তি ফোন ধরে জানান যে, তিনি হামিদের ভগিনীপতি। হামিদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে রাত আটটা নাগাদ ফোন করতে হবে, তা হলে কনফারেন্স কলে কথা বলিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু কনফারেন্স কল মানে তো জেলে হামিদের কাছে মোবাইল আছে! এ কথা শুনে ওই ব্যক্তি জানান, অন্য সময়ে সেই ফোন বন্ধ থাকে!

যদিও রাতে ওই একই নম্বরে ফোন করা হলে, ওপারে থাকা এক ব্যক্তি নিজেকে হামিদ বলেই পরিচয় দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন