দুর্দশা: খলিসাকোটা আদর্শ বিদ্যালয়ের বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রাথমিক বিভাগ এখন ঢাকা পড়েছে আগাছার জঙ্গলে। নিজস্ব চিত্র
একেই পড়ুয়ার সংখ্যা তলানিতে। তার উপরে করোনার জেরে দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণেরও বালাই নেই। তাই উত্তর দমদম পুর এলাকার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল খলিসাকোটা আদর্শ বিদ্যালয় এখন যেন জঞ্জাল জমিয়ে রাখার গুদামঘর। ওই স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের যে ভবনটি রয়েছে, তার গা বেয়ে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য আগাছা। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপ।
১৯৫৫ সালে স্থাপিত এই স্কুল থেকে এক সময়ে বহু মেধাবী ছাত্র পাশ করে বেরিয়েছেন। এখন অবশ্য সেই দিন আর নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, লকডাউনের আগে ওই স্কুলে প্রতিদিন মেরেকেটে ২০-২১ জন ছাত্র আসত। কোনও কোনও ক্লাসে এক জনও ছাত্র নেই। প্রধান শিক্ষক তাপস চট্টোপাধ্যায় বললেন, “স্কুলে নথিভুক্ত ছাত্রের সংখ্যা ৮৫ জনের মতো। কিন্তু রোজ ২০ থেকে ২৪ জনের বেশি আসে না। শিক্ষক আছেন ১২ জন।”
কার্যত ঝিমিয়ে পড়া ওই স্কুল ভবন ঘুরে দেখা গেল, লকডাউনে বন্ধ থাকায় ভিতরের অবস্থা ভয়াবহ। ক্লাসঘরে বেঞ্চের উপরে ধুলোর আস্তরণ, মাকড়শার জাল। জমে আছে জঞ্জালের স্তূপ।
খলিসাকোটা আদর্শ বিদ্যালয়ের বেহাল ক্লাসঘর ।
স্কুলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত রবিউল ইসলাম মোল্লা নামে এক ব্যক্তি স্কুলের ভিতরেই একটি ঘরে স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে সংসার পেতে বসেছেন। স্কুল বন্ধ থাকলেও গেট খোলা থাকায় যে কেউ ঢুকে পড়তে পারেন ভিতরে। এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই স্কুল চত্বরে সাপ রয়েছে। তাই আতঙ্কে থাকেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: বিগ্রহের গায়ে সবুজ-মেরুন জার্সিও!
লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকলেও মিড-ডে মিল অবশ্য চালু রয়েছে। স্কুলশিক্ষা দফতরের নির্দেশ রয়েছে, মিড-ডে মিল দেওয়ার আগে স্কুল জীবাণুমুক্ত করতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশ যে পালিত হয়নি, স্কুলে পা রাখলেই তা বোঝা যায়। রবিউল বললেন, “হাতে গোনা কয়েক জন ছাত্র মিড-ডে মিল নিতে আসে। ওদের জন্য তো সব ক’টা ক্লাসঘর খুলতে হয় না। তাই ঘরগুলোয় আর সে ভাবে ঝাড়পোঁছ হয় না।”
লকডাউনের পরে স্কুল খুললে আদৌ ক’জন ছাত্র আসবে, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। অনেকেরই আশঙ্কা, সকলে আসবে না। কারণ শিক্ষকেরাই জানিয়েছেন, গত আট মাসে একটিও অনলাইন ক্লাস হয়নি। দীর্ঘ দিন পড়াশোনার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় অনেক গরিব ছাত্র হয়তো লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে কাজে ঢুকে পড়েছে।
প্রধান শিক্ষক তাপসবাবু অবশ্য বললেন, “স্কুলে ছাত্র-সংখ্যা বাড়াতে আমরা নানা ভাবে চেষ্টা করছি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বলে এসেছি, তাঁদের সন্তানদের আমাদের স্কুলে ভর্তি করাতে। কিন্তু এলাকার অনেকেই বাংলা মাধ্যম স্কুলে পড়াতে উৎসাহী নন।” উত্তর দমদম পুরসভার প্রশাসনিক প্রধান সুবোধ চক্রবর্তী বললেন, “আশপাশের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না এই স্কুল।”
আরও পড়ুন: ৩ বছরের প্রতীক্ষায় রাজ্য ক্রেতা আদালতে জয়
এলাকার বাসিন্দারা আবার দাবি করলেন, আশপাশের বেশ কয়েকটি বাংলা মাধ্যম স্কুলের দশা এতটা করুণ নয়। সেখানে পড়ুয়ার সংখ্যাও যথেষ্ট ভাল। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে অবসরপ্রাপ্ত সমীরবরণ সাহা বললেন, “আমরা কয়েক জন প্রাক্তন ছাত্র মিলে স্কুলের হাল ফেরানোর জন্য কিছু পরিকল্পনা করছি। দেখা যাক, কী হয়।”