কেউ তো জিতল না এতে, বলছেন অভিমানী শোভন-পুত্র

কোথাও গিয়ে বাবা ঠিক সিদ্ধান্তটা আর নিতে পারছিল না। আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম যে, বাবা কাজের সময় কমিয়ে দিয়েছিল। এমনকি, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলিতেও বাবার অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছিল।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫০
Share:

সুখের সময়: ছেলে ও স্ত্রীর সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

অন্যদের কাছে তিনি মেয়র, মন্ত্রী বা অন্য কিছু। তাঁর কাছে তিনি বাবা। তিনিই তাঁর রোল মডেল। নিজের সেই রোল মডেলকেই এ বার সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় জিজ্ঞেস করতে চান, কী এমন ঘটল যার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল! কী এমন হল যার জন্য ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যার সঙ্গে রাজনৈতিক জীবন গুলিয়ে ফেলে পারিবারিক সম্মানের পাশাপাশি, নিজের রাজনৈতিক জীবনেও ডেকে আনতে হল সঙ্কট! শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র সপ্তর্ষি আপাতত এই প্রশ্নেরই উত্তর চান।

Advertisement

তাঁর প্রতিটি শব্দে ঝরে পড়ছে এমনই অভিমান। তবু মেয়র শোভনবাবুর পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘিরে যে চূড়ান্ত টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে প্রতিটা মুহূর্ত বাবার খোঁজ না নিয়েও থাকতে পারছেন না সপ্তর্ষি। তবু করা হয়নি এই প্রশ্নটুকু। বুধবার সপ্তর্ষি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাগুলি টেনে এনে নিজের রাজনৈতিক সম্মান, অবস্থান যা বাবা নিজে তৈরি করেছে, সেটাই নষ্ট করে দিল। কী এমন কারণ ঘটল, সেটাই শুধু জানতে চাই! কলকাতার মতো একটা শহরের মেয়র হওয়া তো সাধারণ ব্যাপার নয়। বাবা যে চেয়ারে বসেছে, সেখানে এক সময়ে সুভাষচন্দ্র বসু বসেছেন। এটা আমাদের সকলের কাছে একটা গর্বের বিষয় ছিল। বাবা সেই গর্বের জায়গাটাই নষ্ট করে দিল।’’ তবু সপ্তর্ষি বিশ্বাস করেন, এই কাজ বাবার ভিতরের মানুষটার নয়, যাঁকে সকলে এতদিন ধরে চিনে এসেছেন। সপ্তর্ষি বলছেন, ‘‘আমার বন্ধুরা, যাদের সঙ্গে বড় হয়েছি, তারা সব সময়ে বলত, তোর বাবা খুব ভাল কাজ করছেন। আমার খুব গর্ব হত। কিন্তু যে মানুষটাকে সকলে চিনে এসেছেন এতদিন ধরে, যে মানুষটা নিজের রাজনৈতিক পরিচিতি তৈরি করেছে এত পরিশ্রম করে, সেটা নিজেই নষ্ট করে দিল!’’

তবে এটা কিছুটা প্রত্যাশিতই ছিল বলে মনে করছেন সপ্তর্ষি। তাঁর কথায়, ‘‘এক বছর আগে যখন বাবা আমাদের ছেড়ে বেরিয়ে গেল, তখনই আশঙ্কা করেছিলাম বাবার ক্ষতি হতে পারে। কোথাও গিয়ে বাবা ঠিক সিদ্ধান্তটা আর নিতে পারছিল না। আমরা শুনতে পাচ্ছিলাম যে, বাবা কাজের সময় কমিয়ে দিয়েছিল। এমনকি, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলিতেও বাবার অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বাবা কী ভাবে যেন ব্যক্তিগত জীবন ও রাজনৈতিক, পেশাদার জীবনকে এক করে ফেলল! অথচ বাবাই এই দুই জীবনকে আলাদা রাখার কথা বলত সব সময়ে।’’ মায়ের (রত্না চট্টোপাধ্যায়) সম্মানের প্রতিও বাবা সংবেদনশীল থাকেননি বলে মনে করেন সপ্তর্ষি। বাবা-মায়ের মধ্যে চলা এই টানাপড়েনের প্রভাব সকলের সামাজিক সম্মানের উপরেই পড়েছে বলে জানাচ্ছেন তিনি। তাঁর বোন সুহানির সঙ্গে হওয়া সমস্যার কথা মনে পড়ছে সপ্তর্ষির। তিনি বলেন, ‘‘আমার বোন মেয়রের কাছে সই চায়নি। ওর বাবার কাছ থেকে সই চেয়েছিল। সেটা কেন ওকে দেওয়া হল না? আমার বোন এক বছর ধরে জার্মান শিখেছিল ওখানে যাওয়ার জন্য। এই সুযোগটা তো ও মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মেয়ে হিসেবে পায়নি, নিজের যোগ্যতায় পেয়েছিল। কিন্তু সে সুযোগটা ওকে কাজে লাগাতে দেওয়া হয়নি। এর থেকে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে?’’ এই লড়াইটা লড়ে লাভ কী, প্রশ্ন সপ্তর্ষির। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেউ তো জিতল না এতে। বরং আজকে এটা প্রমাণিত, এতে সকলের ক্ষতিই হল। না হলে দলে-সমাজে বাবার যে জায়গাটা ছিল, সেটা অনেকেরই স্বপ্ন। বাবা সেটাও বুঝতে পারল না!’’

Advertisement

সপ্তর্ষি নিউ ইয়র্কে ফিল্ম নিয়ে পড়তে গিয়েছিলেন। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছেন তিনি। নিজস্ব পরিচিতি তৈরির লড়াই শুরু করছেন। বাবা যেমনটা তাঁকে বলতেন, সেই কথাই মাথায় রাখছেন সপ্তর্ষি। তিনি বলছেন, ‘‘বাবা সব সময়ে বলত, নিজের একটা পরিচয় তৈরি করতে। সে কারণেই মুম্বইতে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমি যদি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সত্যিই কাজ করতে চাই, তা হলে এখন থেকেই আমাকে শুরু করতে হবে। বাবাও অল্প বয়সেই কাজ শুরু করেছিল।’’

নিজস্ব পরিচিতি প্রতিষ্ঠার সেই লড়াইয়ের মাঝেই নিজের রোল মডেলের কাছ থেকে শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর চান তিনি— কী

এমন ঘটল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন