Road Accident

Road Accident: উচ্চতা যেমন খুশি! হাম্পের জেরে প্রাণ হাতেই যাত্রা

হাম্প নিয়ে সমস্যা হলে তাঁরা নিজেরাই প্লাস্টিকের হাম্প বসিয়ে দিচ্ছেন! কিন্তু ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকা এমন হাম্পও তো পথের বিপদ বাড়াচ্ছে! এ প্রসঙ্গে প্রশাসনের কারও কাছেই কোনও উত্তর মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২২ ০৬:৪৩
Share:

ঝাঁকুনি: রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটে উঁচু হাম্প পেরোচ্ছে একটি গাড়ি। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বিয়েবাড়ি থেকে স্ত্রীকে নিয়ে গত সপ্তাহে মোটরবাইকে চড়ে ফিরছিলেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা রবীন মণ্ডল। দ্রুত বাড়ি পৌঁছতে এ জে সি বসু রোড হয়ে খালপাড়ের রাস্তা ধরেন তিনি। রাতের ফাঁকা রাস্তায় মোটরবাইকের গতি ছিল ভালই। কিন্তু দ্রুত গতি কমিয়ে আনতে হয় তাঁকে। হঠাৎ খেয়াল করেন, সামনেই রাস্তায় বেশ উঁচু একটি ‘স্পিড ব্রেকার’ (হাম্প)! কিন্তু গতি কমিয়েও রক্ষা হয়নি। নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে দু’জনেই ছিটকে পড়েন রাস্তায়। রবীনবাবু কোনও মতে রক্ষা পেলেও তাঁর স্ত্রী মালাদেবী কোমর ভেঙে এখন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Advertisement

তদন্তে নেমে পুলিশ অস্বাভাবিক উঁচু ওই হাম্প ভেঙে দেয়। জানা যায়, পুরসভার কর্মীরা হাম্প বসাতে এলে তাঁদের ঘিরে ধরে জোর খাটাতে শুরু করেন স্থানীয় কয়েক জন। তাঁদের চাপেই বিধি ভেঙে ওই হাম্পের উচ্চতা করা হয় ছ’ইঞ্চিরও বেশি!

অভিযোগ, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ‘ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস’-এর নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়ে এ ভাবেই শহরের নানা জায়গায় গজিয়ে ওঠে হাম্প। কোথাও এর জেরে গাড়ি আটকে যায়, কোথাও এমন হাম্প পেরোতে গেলে ঘষা খায় গাড়ির নীচের অংশ। কোথাও কোথাও আবার বিপজ্জনক ভাবেই চলতে থাকে মোটরবাইকের
রোজকার যাতায়াত। গাড়িচালকদের আবার অভিযোগ, হাম্প তৈরি
হলেও নিয়ম মেনে তাতে রং করা হয় না। ফলে দূর থেকে বোঝা যায় না কোথায় হাম্প রয়েছে এবং তার উচ্চতা কত। এর জেরে গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষতিও হচ্ছে যখন-তখন। শহরের কোথাও কোথাও আবার স্বল্প ব্যবধানে একাধিক হাম্প রয়েছে বলেও অভিযোগ।

Advertisement

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, বছরভর এমন অস্বাভাবিক উচ্চতার হাম্পের জন্যই একাধিক পথ দুর্ঘটনার রিপোর্ট দায়ের হয়। গত এক বছরে প্রায় আড়াইশোটি পথ দুর্ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী করা হয়েছে রাস্তার উঁচু হাম্পকে। অন্তত ১৭টি ক্ষেত্রে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটেছে। এর বেশির ভাগই ঘটেছে মোটরবাইক চালকদের সঙ্গে। সরকারি নথি এ কথা বললেও হাম্প-বিপত্তিতে দুর্ঘটনার সংখ্যা আসলে আরও বেশি বলেই মনে করে প্রশাসনের একটা বড় অংশ! দ্রুত গতিতে চলার সময়ে হঠাৎ হাম্প এসে পড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মালবাহী লরির ফুটপাতে উঠে যাওয়ার বা উল্টে যাওয়ার উদাহরণও নেহাত কম নয়। অভিযোগ, এমনও হয়েছে, জরুরি সময়ে হাম্পে আটকে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্স ঠেলে নামাতে হয়েছে রোগীর আত্মীয়দেরই।

সড়কের উন্নয়নের লক্ষ্যে হাইওয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে তৈরি কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেস’-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও হাম্পেরই উচ্চতা চার ইঞ্চির বেশি হওয়ার কথা নয়। সেই সঙ্গে ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, হাম্প থাকবে দুর্ঘটনাপ্রবণ রাস্তায়, যেখানে
এক বা একাধিক রাস্তা কোনও বড় রাস্তার সঙ্গে মিশছে, সেখানে। হাম্প তৈরি করা যেতে পারে ঘন বসতি এলাকা, শিক্ষালয় এবং
হাসপাতালের সামনে। নড়বড়ে সেতু বা কালভার্টের সামনেও হাম্প বসানো যেতে পারে। রেলের লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে বা অস্থায়ী ভাবে রাস্তা ঘোরানোর জন্যও হাম্পের প্রয়োজন হতে পারে। এলাকাবাসীর আবেদনের ভিত্তিতে স্থানীয় পুর প্রশাসনই এমন হাম্প বসানোর ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্দেশের বেশির ভাগই কি তবে শুধু খাতায়কলমেই থেকে যাচ্ছে? কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে বা ঘটতে পারে বলে মনে করা হলে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য হাম্প
বসাতে পুরসভাকে চিঠি দেয় পুলিশ। এর পরে হাম্প বসানোর কাজ করেন পুর আধিকারিকেরা। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই কাজ করার চেষ্টা হয়। কিন্তু কিছু জায়গায় পাড়ার দাদারাই জোর করে হাম্পের উচ্চতা বাড়িয়ে নিচ্ছেন। ভয়ে পুরকর্মীদের তাঁদের কথা মতো কাজ করে দিতে হচ্ছে।’’ কলকাতা
পুলিশের কেউই এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা শুধু দাবি করেছেন, আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক ভাল হয়েছে। হাম্প নিয়ে সমস্যা হলে তাঁরা নিজেরাই প্লাস্টিকের হাম্প বসিয়ে দিচ্ছেন! কিন্তু ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকা এমন হাম্পও তো পথের বিপদ বাড়াচ্ছে! এ প্রসঙ্গে প্রশাসনের কারও কাছেই কোনও উত্তর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement