Tantric

তান্ত্রিকের পরামর্শে কিশোরীর গলায় ৯টি সূচ! বাঁচালেন চিকিৎসকেরা

সাধনার অঙ্গ হিসেবে অপরূপার গলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোনও তান্ত্রিকের পরামর্শেই এই ঘটনা ঘটেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৮ ১৮:০৩
Share:

এক্স রে প্লেটে সূচের ছবি। নিজস্ব চিত্র

একটি গলার পেছনের দিকে। বাকি আটটি সূচ গলার সামনে দিকে খাদ্যনালীর চারপাশে বিঁধে রয়েছে। এক্স-রে রিপোর্টে এই ছবি ধরা পড়তেই আঁতকে উঠেছিলেন কৃষ্ণনগর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

Advertisement

অপরূপা বিশ্বাসের বয়স মাত্র ১৪ বছর। গ্রামীণ হাসপাতালে এই ধরনের অপারেশন সম্ভব নয় বলে তড়িঘড়ি তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এখানকার ইএনটি বিভাগের ডাক্তাররাও সন্দিহান ছিলেন, অপরূপাকে বাঁচানো যাবে তো?

অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত হয় সময় নষ্ট করা যাবে না। ঝুঁকি নিয়েই অপারেশন করতে হবে। এনআরএস হাসপাতালে সোমবার ভর্তি হয়েছিল অপরূপা। সাত সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম তৈরি করে মঙ্গলবার দুপুরেই অপারেশন শুরু হয়।

Advertisement

কিশোরীর বাবা-মা চিন্তায় ছিলেন, মেয়েকে ফিরে পাবেন তো? অপারেশন শেষ হল সাড়ে তিন ঘণ্টা পর। এনআরএস-এর ডাক্তাররা হতাশ করেননি না কৃষ্ণনগরের এই দম্পতিকে।

দেখুন ভিডিয়ো

তবে অপারেশনের পর আরেকটি ভয়ঙ্কর তথ্য সামনে এল। জানা গেল, সূচগুলো খেয়ে ফেলেনি অপরূপা। চিকিৎসকরা জানালেন, ৯ টি সূঁচ বাইরে থেকে কেউ ঢুকিয়ে দিয়েছেন। কিশোরীর পরিবারের তরফে কেউ মুখতে রাজি ছিলেন না। ওই কিশোরীর কাছ থেকেই যে তথ্য সামনে এসেছে, তাতে আঁতকে ওঠার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এই সূচগুলি সম্ভবত তন্ত্র সাধনার অঙ্গ হিসেবে অপরূপার গলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কোনও তান্ত্রিকের পরামর্শেই এই ঘটনা ঘটেছে।

এই সূচগুলিই বিঁধে ছিল কিশোরীর গলায়। নিজস্ব চিত্র।

তিন বছর আগে অপরূপার দাদার মৃত্যু হয়। এর পর একটি শিশুকন্যাকে দত্তক নেন ওই দম্পতি। সেও মারা যায়। তারপর থেকেই অপরূপার আচরণে বদল আসে। মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করে ওই কিশোরী। তাকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতেই তান্ত্রিকের কাছে গিয়েছিলেন ওই দম্পতি।

সফল অস্ত্রোপচারের পর। নিজস্ব চিত্র।

মেডিক্যাল টিমের অন্যতম সদস্য মনোজ মুখোপাধ্যায় বলেন, “অপারেশন সফল হয়েছে। ন’টি সূচই গলা থেকে বের করা গিয়েছে। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে অপরূপাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা সুস্থ হলেই মনোবিদের পরামর্শ নেওয়া হবে। সূচগুলো বাইরে থেকেই গলায় ঢোকানো হয়েছে। এটা কোনও তান্ত্রিকের কাজ হতে পারে।”

কৃষ্ণনগরে অক্ষয় বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী অপরূপা। ২১ জুলাই স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর গলায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। খেতে বসে হঠাৎই সংজ্ঞা হারায় ওই কিশোরী। ভর্তি করা হয় কৃষ্ণনগর হাসপাতালে। টানা ন’দিন গলায় সূচ বিঁধে ছিল। এক্স–রে রিপোর্ট দেখার পর এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি বিভাগের চিকিৎসকরাও কিছুটা অবাকই হয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন