সতর্ক: লালবাজারের দমকলকেন্দ্র জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র
স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশের পাশাপাশি কোভিড-যুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে লড়াই চালাচ্ছেন দমকলকর্মীরাও। তাঁদের মধ্যেও বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। দমকল সূত্রের খবর, রাজ্যের ১৪৪টি দমকলকেন্দ্রে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৬০ জন কর্মী। গত মাসে এই অতিমারিতে প্রাণ হারিয়েছেন বেহালা দমকলকেন্দ্রের এক কর্মী। দফতর সূত্রের খবর, অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ১৯টি দমকলকেন্দ্রে কর্মীসঙ্কট দেখা দিয়েছে। বড় দুর্ঘটনা ঘটলে কী ভাবে সামাল দেওয়া যাবে, উঠে গিয়েছে সেই প্রশ্ন।
বস্তুত, করোনা আক্রান্তের নিরিখে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উত্তর ২৪ পরগনার দমকলকেন্দ্রগুলির। এই জেলার ১৯টি দমকলকেন্দ্রের ২০ জন ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বসিরহাট কেন্দ্রের পাঁচ দমকলকর্মী হাসপাতালে ভর্তি। ওই কেন্দ্রের আরও পাঁচ জন জ্বর নিয়ে বাড়িতে আছেন। সংক্রমিত হয়েছেন নিউ ব্যারাকপুর কেন্দ্রের দুই কর্মীও। একই অবস্থা বনগাঁ, গোবরডাঙা এবং হাবড়া দমকলকেন্দ্রের। সূত্রের খবর, ওই তিন কেন্দ্রের প্রতিটিতে গড়ে পাঁচ জন করে কর্মী করোনার উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে রয়েছেন। দমকলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই জেলার ১৯টি কেন্দ্রে লোকের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অনেকে সরাসরি করোনায় আক্রান্ত তো হয়েছেনই। বহু কর্মী জ্বর নিয়ে বাড়িতে রয়েছেন। বড় দুর্ঘটনা ঘটলে কী ভাবে সামলানো যাবে জানি না।’’
একই অবস্থা দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তরবঙ্গে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১১টি দমকল কেন্দ্রের মোট ৯ জন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি তাঁদের মধ্যে সাত জন। শিলিগুড়ি দমকলকেন্দ্রে আক্রান্ত হওয়া আট কর্মীর মধ্যে তিন জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ দমকলকেন্দ্রে করোনা আক্রান্ত সাত জন। তাঁদের মধ্যে তিন জনের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
সংক্রমিত এলাকায় জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছেন দমকলের কর্মীরা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, সেই কাজে মিলছে না পর্যাপ্ত পিপিই। বসিরহাট দমকলকেন্দ্রের এক কর্মীর অভিযোগ, ‘‘যে জায়গা আমাদের জীবাণুমুক্ত করার কথা নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই সব এলাকায় কাজ করতে হচ্ছে।’’
কোভিড আক্রান্তদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, ‘‘আক্রান্ত দমকলকর্মীরা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গেলে যাবতীয় খরচ তাঁদেরই বহন করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো দমকলকর্মীদেরও আনা হোক।’’ দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোনও কর্মীর শারীরিক অবস্থা একটু খারাপ হলেই বাড়ির লোক তাঁকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে ভর্তি থাকার খরচ আক্রান্ত কর্মী বা তাঁর পরিবারকেই বইতে হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: নিউ টাউনে শুরু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, উদ্যোগী বাসিন্দারা
এ বিষয়ে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, ‘‘আক্রান্ত কর্মীরা যাতে বেসরকারি হাসপাতালে পরিষেবা পান, সেই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’’ সংক্রমিত এলাকা জীবাণুমুক্ত করার সময়ে কর্মীরা যাতে পর্যাপ্ত পিপিই পান, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।