হেরোইনের খরচ জোগাতে এক বার মায়ের মঙ্গলসূত্রও বিক্রি করেছিল ছেলে। ধরা পড়ে বাড়িতে বকাঝকা হলেও নেশা ছোটেনি। নেশার টাকা তুলতে শুরু করেছিল মস্তানি। দু’-এক বার পুলিশের হাতেও ধরা পড়েছিল। কিন্তু ছোটখাটো দাদাগিরিতে আর মন ভরছিল না বলেই নিশানা হয়ে উঠেছিল চালু মুদির দোকান। দিনের শেষে কাঁচা টাকা মিলবে অনেকটা। আর শীতের রাত হলে লোকজনও বিশেষ থাকবে না। ফলে কাজে বিশেষ ঝুঁকিও থাকবে না।
শুক্রবার রাতে সোদপুর সুখচরের ঘোষপাড়ায় পরপর দু’টি মুদির দোকানে লুঠপাট ও মারধরের ঘটনায় ধরা পড়েছে রবিন দাস ওরফে টুবাই, শুভজিৎ প্রামাণিক ওরফে বাবাই এবং সঞ্জয় কুণ্ডু ওরফে টুকাই। তদন্তকারীদের দাবি, ধরা পড়ার পরে পুলিশের কাছে এমনটাই স্বীকার করেছে ধৃতেরা। এর মধ্যে শুভজিৎ নিউ ব্যারাকপুরের বাসিন্দা আর দু’জন পানিহাটির। সুখচরের এই দোকান দু’টি ঘুরে দেখে এসেছিল তারা আগেই। কখন দোকানে ভিড় কম থাকে, তা-ও জেনে নিয়েছিল তখন। একটি মুদির দোকানের মালিক রঞ্জিত নন্দী পুলিশকে জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতীরা নেশা করে এসেছিল। তাদের কথা অসংলগ্ন ছিল। হাতের ওয়ান শটারটিও ঠিকমতো ধরে রাখতে পারছিল না। এক বার হাত থেকে পড়েও গিয়েছিল অস্ত্র। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা রঞ্জিতবাবু ও এক ক্রেতা তারক দত্তর মাথায় ওয়ান শটারের বাঁট দিয়ে মেরেছিল। পাশের দোকানদার নিতাই সাধুখাঁ দোকানে বিক্রির টাকা গোছাচ্ছিলেন। তাঁকেও চড় মেরে টাকার বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
চেহারার বিবরণ নিয়ে তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে পানিহাটির ধানকল এলাকার রবিনের খোঁজ পায়। বেশ কয়েক বার চুরির অভিযোগে ধরা পড়া রবিনের হদিস মিলতেই বাকি দু’জনকেও শনিবার রাতে তাদের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যে মোটরবাইকটি চড়ে তারা লুঠপাট করতে গিয়েছিল, সেটি রবিনের। পুলিশ সেটিও আটক করেছে। রবিনের বাবা চন্দনবাবু পানিহাটি পুরসভার কর্মী। ছেলের শখ মেটাতে লাখ খানেক টাকা দিয়ে একটি নতুন মোটরবাইক কিনে দিয়েছিলেন সম্প্রতি। তাঁর কথায়, ‘‘ও যে এতটা বিপথে গিয়েছে, বুঝতে পারিনি। অভিযোগ প্রমাণ হলে যা আইনি ব্যবস্থা হওয়ার হবে। আমার কিছু বলার নেই।’’ আগ্নেয়াস্ত্র ও লুঠ হওয়া টাকা উদ্ধার করার জন্য পুলিশ তিন দুষ্কৃতীকে নিজেদের হেফাজতে রাখতে চেয়ে আদালতে আর্জি জানিয়েছে।