বাইকশাসনে গাঁধীগিরি

রবিবার তখন দুপুর পৌনে তিনটে। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে চেতলার দিকে যাচ্ছিল মোটরসাইকেলটি। চালকের হেলমেট থাকলেও আরোহীর ছিল না।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৭ ০২:৫৫
Share:

উৎসব-ছাড়। ভুল শুধরে দিচ্ছে পুলিশ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রবিবার তখন দুপুর পৌনে তিনটে। রাসবিহারী অ্যাভিনিউ থেকে চেতলার দিকে যাচ্ছিল মোটরসাইকেলটি। চালকের হেলমেট থাকলেও আরোহীর ছিল না। ট্র্যাফিক সার্জেন্ট সেটি থামালেন রাসবিহারী মোড়ে। ভয় পেয়ে গেলেন ওই দু’জন। এ বার কেস দেবে পুলিশ। সার্জেন্টের কিন্তু হাসিমুখ। মিনিট পাঁচেক ধরে সার্জেন্ট বোঝালেন, কেন হেলমেট ছাড়া মোটরবাইকে চড়া উচিত নয়, কী কী বিপদ হতে পারে। তার পরে ছেড়ে দিলেন ওই বাইকচালককে। কোনও মামলা কিন্তু করা হল না ওই চালকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

দোলের ছুটিতে সারা দিন খাস কলকাতায় হেলমেটহীন মোটরবাইকের সঙ্গে এই ভাবেই গাঁধীগিরি করল ট্র্যাফিক পুলিশ!

রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা শহরে ছ’শোরও বেশি হেলমেটহীন মোটরসাইকেল ধরা পড়েছে। তবে নিয়ম ভাঙা চালক বা আরোহী, সকলকেই থামিয়ে বোঝানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

Advertisement

এমনিতে রোজই হেলমেটহীন মোটরবাইক চালক ও আরোহীদের দাপাদাপি থাকে শহর জুড়ে। তার উপরে রবিবার দোলের দিন উৎসবের মেজাজ ছিল অন্য রকম। বাইকচালকদের মনেও বেপরোয়া ভাব ছিল আরও বেশি। তাই রাস্তায় যানবাহন কম থাকলেও তার মধ্যে হেলমেটহীন মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীর সংখ্যা কম ছিল না। তবে এ দিন একটিও হেলমেটহীন মোটরবাইকের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা রুজু করেনি। তার বদলে তাঁদের হেলমেট পরার প্রয়োজনীয়তা বু‌ঝিয়েছে পুলিশ। তার পরে কোনও মামলা না করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের।

মোটরসাইকেল থামিয়ে শান্ত ভাবে সার্জেন্টরা হেলমেটহীন চালক ও আরোহীর সঙ্গে কথা বলেছেন। অন্য দিন কিন্তু ধরলেই মামলা করা হয়। মোটর ভেহিকেলস অ্যাক্টের ১২৯/১৭৭ ধারায় মামলা রুজু করে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

তা হলে এ দিন ব্যতিক্রম কেন?

আরও পড়ুন: মণিপুরে ধোঁয়াশা অব্যাহত, এনপিপিকে নিয়ে সরকার গড়ার দাবি কং-বিজেপির

লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘হেলমেটহীন মোটরবাইকের বিরুদ্ধে আমরা কেস করিনি। কাউন্সেলিং করেছি এ দিন।’’ তাঁর বক্তব্য, একেই দোল একটা উৎসবের দিন। কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে সেই জন্য। তার উপরে বহু মানুষ বাইরে থেকে এই শহরে দোল খেলতে আসেন, যাঁরা পরদিন চলে যান। কলকাতার যান শাসন বা নিরাপত্তার রীতিনীতি সম্পর্কে তাঁরা তেমন ওয়াকিবহাল নন। তাই সব মিলিয়ে মামলা রুজু করে জরিমানা করা থেকে বিরত ছিল পুলিশ। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘উৎসবের দিনে খড়্গহস্ত না হয়ে বোঝালে এ ক্ষেত্রে বেশি কাজ দেবে বলে আমাদের মনে হয়েছে। তা ছাড়া, সোমবার থেকেই হেলমেটহীন মোটরবাইক ধরা পড়লেই কেস দেওয়া হবে।’’

তা বলে মত্ত অবস্থায় রাস্তায় বেরোনো গাড়ি ও মোটরবাইকের চালকদের কিন্তু রেহাই দেয়নি পুলিশ। এক অফিসার বলেন, ‘‘যাঁদের উপরে সন্দেহ হয়েছে, তাঁদেরই আমরা ধরে ব্রেথ অ্যানালাইজার দিয়ে পরীক্ষা করেছি।’’ মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর অভিযোগে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে এক জন গাড়িচালক, বাকিরা সকলেই মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন। তা ছাড়া বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে এ দিন ১০৮ জনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

এর পাশাপাশি, অভব্য আচরণের জন্য রবিবার রাত পর্যন্ত ১২৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটক করা হয় ৩০ লিটার বেআইনি মদও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন