Underground Water

করোনায় বেড়েছে জল-খরচ, আরও দ্রুত জলস্তর নামার আশঙ্কা

কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলায় বাড়তি কত জল খরচ হচ্ছে, তা-ই ধরা পড়েছে ওই সমীক্ষায়।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০২:০০
Share:

অপচয়: কল থেকে পড়ে যাচ্ছে জল। মঙ্গলবার, বৌবাজারে। নিজস্ব চিত্র

গত পাঁচ দশকে ধারাবাহিক ভাবে কলকাতার ভূগর্ভস্থ জলস্তর এলাকা বিশেষে ৭-১১ মিটার নেমেছে বলে ধরা পড়েছিল ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’-এর সমীক্ষায়। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে জলের যথেচ্ছ ব্যবহার সেই জলস্তর নেমে যাওয়ার হার আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিজ্ঞানী-গবেষকদের একাংশ। সেই আশঙ্কাই সত্যি বলে দেখাচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা-সহ একাধিক জেলায় বাড়তি কত জল খরচ হচ্ছে, তা-ই ধরা পড়েছে ওই সমীক্ষায়।

Advertisement

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগ সূত্রের খবর, সাধারণ সময়েই পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে, টানা ৭২ ঘণ্টা যদি কোথাও পাম্প চালিয়ে রাখা যায়, তা হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জলস্তর সাড়ে তিন মিটার নেমে যায়। সেই জলস্তর পূর্বাবস্থায় ফিরতে কিছুটা সময় লাগে। এখন গত কয়েক মাসে প্রতিটি বাড়িতেই জামাকাপড় কাচা, বারবার হাত ধোয়া, ঘর পরিষ্কার-সহ একাধিক কারণে জল বেশি খরচ হচ্ছে। যে জন্য জল বেশি পরিমাণে তোলাও হচ্ছে। তাই জলস্তর নেমে যাওয়ায় যে ঘাটতি হচ্ছে, তা আর পূরণ হচ্ছে না।

ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শুধু কলকাতাতেই জল ব্যবহারের হার আগের থেকে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, অন্য সময়ে যেখানে শহরে দৈনিক জলের চাহিদা (মাথাপিছু দৈনিক ১৫০ লিটার ধরে) ছিল সাড়ে ৬৭ কোটি লিটার, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি লিটার! একই অবস্থা অন্য জেলাগুলির ক্ষেত্রেও। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধ্যাপক পঙ্কজকুমার রায় জানাচ্ছেন, জলের ব্যবহার বাড়লেও জল সরবরাহের মূল উৎস একই রয়েছে— ভূপৃষ্ঠ এবং ভূগর্ভস্থ জল। ফলে বর্তমান জলের চাহিদা মেটাতে কোথাও ভূপৃষ্ঠের জল (যার মূল উৎস গঙ্গা) বেশি পাম্প করা হচ্ছে, আবার কোথাও ভূগর্ভস্থ জল বেশি পরিমাণে তোলা হচ্ছে। পঙ্কজবাবুর কথায়, ‘‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার প্রয়োজনে যেন জলের অপচয় না হয়, সে দিকেও নজর দেওয়া দরকার। কারণ, এ সবের জন্যই ভূগর্ভস্থ জল নিঃসন্দেহে বেশি তোলা হচ্ছে। বিশেষ করে বড়-বড় আবাসনে জল খরচ বেশি হচ্ছে। তার ফলে শহরের যে সমস্ত জায়গায় জলস্তর এমনিতেই নিচু ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেখানে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: পচন ধরা হাত বাঁচল ৯২ দিনের চিকিৎসায়

আইআইটি, রুরকির ‘ডিপার্টমেন্ট অব ওয়াটার রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট’-এর অধ্যাপক এস কে শুক্লা জানাচ্ছেন, এলাকাভিত্তিক হিসেবে জলস্তর কতটা নেমেছে, তার পুরো চিত্র পাওয়া যাবে বর্ষার পরে। কারণ, বর্ষাকালে বৃষ্টির জল ভূগর্ভে প্রবেশ করে জলস্তর ‘রিচার্জ’ করে দেয়। তাই তার পরেই কোভিড পরিস্থিতির কারণে জলস্তর আদতে কতটা বেশি নেমেছে, তার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যাবে। তাঁর কথায়, ‘‘গত তিন মাসে সারা দেশে যে পরিমাণ জল খরচ হয়েছে, তাতে জলস্তরে প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। জলস্তর নামার ফলে জলে দূষকের মাত্রা বৃদ্ধিরও আশঙ্কা রয়েছে।’’

তবে গবেষকেরা এ-ও জানাচ্ছেন যে, লকডাউনের কারণে কলকারখানা বন্ধ থাকা বা কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়ার কারণে পরিবারপিছু বেশি জল ব্যবহার হলেও জলস্তর আশঙ্কাজনক ভাবে নামেনি। ‘সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন’-এর এক কর্তার কথায়, ‘‘পুর এলাকায় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছুটা রকমফের হয়েছে, এটা ঠিকই। কিন্তু জল খরচের অন্য ক্ষেত্রগুলি বন্ধ থাকায় সার্বিক ভাবে খুব একটা বেশি ক্ষতি হয়নি বলেই মনে হয়।’’ ‘সেন্টার ফর গ্রাউন্ড ওয়াটার স্টাডিজ’-এর এমেরিটাস-প্রেসিডেন্ট এস পি সিংহ রায়ের আবার বক্তব্য, ‘‘কলকাতার ভূগর্ভস্থ জল অ্যাকুইফারের মাধ্যমে উত্তর ২৪ পরগনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এখন দফায়-দফায় উত্তর ২৪ পরগনায় বৃষ্টি হওয়ায় ভূগর্ভস্থ জলে যেটুকু ঘাটতি ছিল, তার কিছুটা হয়তো পূরণ হয়েছে। ফলে একটা ভারসাম্যের জায়গা রয়েছে বলেই মনে করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন