পুরনো বাড়ির আড়াল থেকে বোমা ছুঁড়ছে এক যুবক। পাল্টা দিতে এ বার বন্দুক হাতে অন্য একটি পুরনো বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল কয়েক জন মাঝবয়সী। কোনও হিন্দি সিনেমার দৃশ্য নয়। একাদশীর দুপুরে বোমা, গুলির আওয়াজে এ ভাবেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিল গার্ডেনরিচের আজহর মোল্লাবাগান। চোখের সামনে এমন ‘গ্যাং ওয়ার’ দেখে ত্রস্ত বাসিন্দারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। গুলি-বোমার লড়াইয়ে জখম হয়েছেন দু’জন। পুলিশ গ্রেফতার করেছে সাত জনকে। তবে রবিবার রাত পর্যন্ত অধরা এই ঘটনায় জড়িত আরও ১১ জন। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার দুপুর ১টা নাগাদ। গার্ডেনরিচ থানা সূত্রের খবর, পুলিশের কাছে খবর আসে মোল্লাবাগান এলাকায় গার্ডেনরিচের বিবদমান দুই গোষ্ঠীর বেশ কয়েক জন জড়ো হয়েছে। সঙ্গে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র। অভিযোগ, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই এক গোষ্ঠী অন্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শী মোল্লাবাগান এলাকার মুদির দোকানদার বলেন, ‘‘কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি বোমা পড়ছে। গুলি চলছে। এতগুলো লোক সকলেই একে অন্যকে খুন করতে চাইছে। পুলিশ আসার আগে পর্যন্ত প্রাণ হাতে করে দোকানে লুকিয়ে ছিলাম।’’
পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে যাচ্ছে দেখে গার্ডেনরিচ থানার পাশাপাশি অন্য থানা থেকেও পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনাস্থল থেকেই মহম্মদ ইসরাইল, মইনুদ্দিন খান ওরফে রাজু এবং মহম্মদ নসিম ওরফে ভোলুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তদন্তে নেমে দুই গোষ্ঠীর মাথা শেখ ওয়াসিম ওরফে বাম্ব এবং মহম্মদ ওয়াসিম ওরফে ওয়াসিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের সঙ্গেই গ্রেফতার হয় মহম্মদ সাজ্জাদ ওরফে নাটা এবং শেখ সমীর ওরফে টিপু। ধৃতদের এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ধৃতদের থেকে কিছু হাতে তৈরি বোমা এবং দেশি পিস্তল উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই একাধিক ধারায় বেশ কিছু মামলা রয়েছে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের খবর, বাম্ব এবং ওয়াসি বর্তমানে গার্ডেনরিচ এলাকার দুই পক্ষের মাথা। দীর্ঘদিন থেকেই তাদের মধ্যে নানা বিষয়ে বিবাদ চলছে। পুজোর আগে একটি জমির প্রোমোটিং নিয়ে সেই বিবাদ চরমে ওঠে। দু’জনকেই অনেক দিন ধরে খুঁজছিল পুলিশ। গার্ডেনরিচ থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘টাকা-পয়সার ভাগ নিয়ে ঝামেলা চলছিলই। সম্প্রতি আরও কিছু ঘটতে পারে। তার জেরে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা লেগেছিল।’’
তবে দিনেদুপুরে এমন ঘটনা ঘটার আগে কেন পুলিশ টের পেল না? ওই আধিকারিকের কাছে সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তিনি বলেন, ‘‘বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ওদের পেলে অনেক আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হবে।’’