—ফাইল চিত্র।
দীপাবলি আসতে এখনও দিন ছয়েক বাকি। কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালির চোখে এখনই ধাঁধা। সৌজন্যে সব্জি বাজার।
একে মাসের শুরুতে দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো আর শেষে কালীপুজো। কাজেই, মাসের শেষে তাই ভাঁড়ে আক্ষরিক অর্থেই মা ভবানী। এই অবস্থায় যদি সব্জির বাজার প্রতিদিনই উত্তরোত্তর যে ভাবে বাড়ছে, তাতে সপ্তাহের শেষে বাজি কিনবেন না আলু-পটল— তা ভেবেই কুলকিনারা পাচ্ছেন না আম-বাঙালি।
রবিবার সকালে বাজার থেকে বেরনোর সময়ে যেমন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী পৃথ্বীরাজ ভৌমিক বলেন, ‘‘অনেক কিছুই নেব ভেবেছিলাম। কিন্তু ফুলকপি আর টোম্যাটো নিতেই তো টাকা শেষ!’’ হবে না-ই বা কেন? কলকাতার সব্জি বাজারগুলোতে রবিবার সকালে প্রমাণ সাইজের এক-একটি ফুলকপি বিকিয়েছে কমবেশি ৪০ টাকায়। একটি সাইজে ছোট হলে তার দাম গড়পড়তা ২৫ টাকা। অন্য দিকে, টোম্যাটো ছুঁয়েছে কিলোগ্রাম প্রতি ৫০ টাকা দর। একই দর বাঁধাকপি, বেগুনের। লঙ্কা সেই কবে সেঞ্চুরি ছাড়িয়েছে। আর নামার নাম নেই। এ দিনও তা সব্জি বাজারে বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা কেজি দরে। মটরশুটি আর কাঁচা আম তো একেবারে ডাবল সেঞ্চুরি। সরকারের তরফে বারংবারই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে পুজোর মরসুমে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। কিন্তু কোথায় কি! এ দিনও জ্যোতি আলুর কেজি ২২ টাকা আর চন্দ্রমুখী ২৪ টাকা। এমনকী, কুমড়ো, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গে, মুলোও এখন কেজি প্রতি চল্লিশের কোঠায় দর। যা দেখে গড়িয়া বাজার থেকে বেরনোর সময়ে সৌরভ দাস বলে গেলেন, ‘‘এখনই এই অবস্থা! শুক্র, শনিবার তো আর বাজারমুখো হওয়া যাবে না।’’
এমন যে অবস্থা তা মানছেন, সিংহভাগ সব্জি বিক্রেতাও। যেমন যাদবপুর বাজারের সব্জি বিক্রেতা রঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, ‘‘দিন ১০-১৫’য় দাম হু-হু করে বেড়েছে। দিন পনেরো আগেও যে সব সব্জি পাইকারি বাজারে ১০০ টাকা পাল্লা বিক্রি হয়েছে। তা দু’এক দিন আগে থেকে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে পাল্লা বিক্রি হয়েছে।’’
হঠাৎ করে সব্জির দাম বাড়তে শুরু করল কেন?
অধিকাংশ বাজারের সব্জি বিক্রেতারা এ জন্য দায়ী করছেন ফড়েদের। ব্যবসায়ীদের মতে, প্রশাসনের ঢিলেমির সুযোগ নিয়ে কালিপুজোর আগে কৃত্রিম ভাবে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে ফড়েরাই। যার জেরে জাম বাড়ছে বাজারের। গড়িয়াহাটের সব্জি বিক্রেতা মনা সাহা বলেন, ‘‘ফড়েরাই তো কালিপুজোর আগে সব্জির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের চ়ড়া দামে কিনতে হচ্ছে, বিক্রিও কররতে হচ্ছে তাই বেশি দরে। আমাদের এতে কিছুই করার নেই। সরকারই একমাত্র এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।’’
কী বলছে সরকার?
কৃষি বিপণন অধিকর্তা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। তাঁর মতে, ‘‘আজ ছুটির দিন। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। সোমবার যা বলার অফিসে বলব।’’
তবে কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত এ জন্য যে ফড়েরাই দায়ী, তা ঠারেঠোরে মেনেই নিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়। তিনি বলেন, ‘‘কালীপুজোর আগে ফড়েরা সুযোগ নিচ্ছে। আমাদের কাছেও এ রকম খবর এসেছে। কোলে মার্কেট, মানিকতলা, গড়িয়াহাট-সহ শহরের বিভিন্ন বাজারে চড়া দামে কেউ কেউ সব্জি বিক্রি করছেন— এমন খবরও আমরা পেয়েছি।’’ মন্ত্রীর দাবি, ‘‘সরকার জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে সব সময়েই সচেষ্ট। বিভিন্ন জায়গায় সরকারি গাড়িতে ন্যায্য দামে সব্জি বিক্রি শুরু হয়েছে। আমাদের আধিকারিকেরা বাজারে বাজারে ঘুরছেন এবং ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। দু’এক দিনের মধ্যে আমিও বাজার পরিদর্শনে বেরোব। বিষয়টি নিয়ে সরকারের টাস্ক ফোর্সের বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাও নিতে বলা হয়েছে।’’
তবে টাস্ক ফোর্স ব্যবস্থা নিলেও বা মন্ত্রী বাজার পরিদর্শনে বেরোলেও দীপাবলিতে সব্জির দাম আম-রাজ্যবাসীর ‘চোখে ঝিলমিল’ লাগাবে না— এমন গ্যারান্টি দিতে পারছেন না তাবড় কৃষি বিপণন-কর্তারা।