পরিত্যক্ত আবাসনের চারতলা ধসে মৃত বৃদ্ধা

রেল কর্তৃপক্ষ বহু দিন আগেই সেগুলিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন। ফলে কোনও রেলকর্মী থাকেন না। তবে কয়েকটি দরিদ্র পরিবার থাকে সেখানে। তেমনই একটি পরিবারের কর্ত্রী ছিলেন আশা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৯ ০২:০০
Share:

অঘটন: পাতিপুকুরের পরিত্যক্ত রেল আবাসনের ভেঙে পড়া অংশ। (ইনসেটে) আশা হাজরা। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

পরিত্যক্ত রেল আবাসনের চারতলায় নিজের ঘরে চৌকিতে শুয়ে ছিলেন এক বৃদ্ধা। আচমকাই ধসে গেল মেঝে। সেই অভিঘাতে চৌকি-সহ চারতলা থেকে তিনতলা এবং তিনতলারও মেঝে ফুঁড়ে দোতলায় পড়েন তিনি। রবিবার বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ ঘটনাটি ঘটে পাতিপুকুরের পরিত্যক্ত রেল আবাসনে। আশা হাজরা (৬০) নামের ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, পাতিপুকুর রেললাইন সংলগ্ন ওই আবাসনে পাঁচটি চারতলা বাড়ি রয়েছে। চাঙড় খসে পড়া সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। বাড়িগুলির গায়ে বেড়ে উঠেছে বড় গাছ, বহু জায়গায় ঝুলছে কার্নিস, বারান্দা। রেল কর্তৃপক্ষ বহু দিন আগেই সেগুলিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন। ফলে কোনও রেলকর্মী থাকেন না। তবে কয়েকটি দরিদ্র পরিবার থাকে সেখানে। তেমনই একটি পরিবারের কর্ত্রী ছিলেন আশা। ঘটনার সময়ে পেশায় গাড়িচালক তাঁর ছেলে বাড়ি ছিলেন না। তিনতলা ও দোতলায় কেউ থাকেন না। বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন একতলার বাসিন্দা দে পরিবার। ওই পরিবারের সদস্য কণিকা দে বলেন, ‘‘স্বামী ও ছেলেকে নিয়ে শুয়েছিলাম। আচমকা চাঙড় খসে মাথার উপরে বাঁধা প্লাস্টিকে এসে পড়ে।’’

আবাসনটিকে রেলের তরফে আগেই বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়েছিল বলে দায় সারছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী। কিন্তু পরিত্যক্ত আবাসনে কেউ থাকছেন কি না, সেই নজরদারি রেলের কোথায়? সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এ দিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক ও দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। তিনি এই ঘটনায় রেলের উপরেই দায় চাপিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে রেলকে চিঠি লিখবেন বলেও তিনি জানান। লেক টাউন থানার পুলিশ ও দমকল ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই আবাসনের কিছু বিপজ্জনক অংশ ভেঙে দেয়।

Advertisement

এ দিন সকালে শহরে আরও একটি বিপজ্জনক বাড়ির বারান্দা ভেঙে জখম হন তিন জন। ঘটনাটি ঘটেছে সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ৪৪ স্ট্র্যান্ড রোডের একটি চারতলা বাড়িতে। দোতলার বারান্দা ভেঙে আহত হন লক্ষ্মী শঙ্কর, বিকাশ শঙ্কর এবং পটল শঙ্কর নামে একই পরিবারের তিন সদস্য। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্ট্র্যান্ড রোডে এই বাড়ির বারান্দাই ভেঙে পড়ে। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে বিকট শব্দ শুনে ছুটে যান বাসিন্দারা। তাঁরা গিয়ে দেখেন, লক্ষ্মী আর তাঁর ছেলে বিকাশ এবং তাঁদের আত্মীয় পটল নীচে পড়ে। স্থানীয়েরা তাঁদের উদ্ধার করেন। পুলিশ গিয়ে আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করে। পুলিশ সূত্রের খবর, পটলের আঘাত গুরুতর। তাঁর মাথা ফেটেছে এবং পা ভেঙেছে। লক্ষ্মী ও বিকাশের মাথা ফেটেছে। পায়েও চোট আছে।

কলকাতা পুরসভা বিপজ্জনক ঘোষণা করা সত্ত্বেও বাড়িটির একতলায় একাধিক দোকান ও দোতলায় প্রায় দুশো ভাড়াটে থাকেন। এক ভাড়াটে কার্তিকচন্দ্র দিওয়ানের অভিযোগ, ‘‘বাড়ি সংস্কারের জন্য একাধিক বার বাড়িওয়ালাকে জানিয়েছি।’’ বাড়ির মালিক একাধিক ব্যক্তি। তাঁদেরই এক জন তপতী মল্লিকের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘বহু বছর ধরে ভাড়াটেরা নামমাত্র ভাড়ায় আছেন। ওঁদের জানিয়েছি, বাড়ি সারাতে তাঁদেরও টাকা দিতে হবে। তাঁরা রাজি নন। আমাদের পক্ষে এত খরচ করে সংস্কার করা অসম্ভব।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ছুটির দিন হওয়ায় বাড়িটির নীচের বেশির ভাগ দোকান বন্ধ ছিল, ফলে বড় বিপদ এড়ানো গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন