পড়ে রয়েছেন যুবক। রবিবার রাতে বেকবাগানের শপিং মল চত্বরে দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।
ছুটির সন্ধ্যার ভিড়ে তখন গমগম করছে বেকবাগান এলাকার ঝাঁ-চকচকে শপিংমল। হঠাৎই ওই বহুতল বিপণি ও বিনোদন কেন্দ্রের পিছন দিকে উত্তেজনা। কেউ পড়ে গিয়েছেন মলের ছাদ থেকে। শপিং মলের রক্ষী-কর্মীরা তো বটেই, ক্রেতাদের একাংশও হুড়মুড়িয়ে ছুটে যান ঘটনাস্থলে। চলে আসে পুলিশ। রক্তাক্ত আহতকে পাঠানো হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
পুলিশ মৃতের নাম-ঠিকানা জানতে পারেনি। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক কী ভাবে মলের ছাদ থেকে পড়ে গেলেন, তিনি নিজেই ঝাঁপ দিয়েছেন, নাকি কেউ তাঁকে ঠেলে ফেলেছে— গভীর রাত পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি।
ঠিক কী ঘটেছিল?
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবি-সন্ধ্যায় ওই মল তখন জমজমাট। আকস্মিক অঘটনে হঠাৎই ছন্দপতন। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মলের পিছন দিকে ঝাউতলা রোড ধরে বাইকে যাওয়ার সময়ে ভারী কিছু পড়ার শব্দ শোনেন তিনি। এগিয়ে গিয়ে তিনি দেখেন, মলের চত্বরে এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। তাঁর মাথাটা প্রায় থেঁতলে গিয়েছে। কানে হেডফোন গোঁজা। যুবকের পরনে ছিল নীল জিন্স এবং কালো জ্যাকেট। ১০০ নম্বরে ডায়াল করে অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শীই পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ এসে দ্রুত অকুস্থল ঘিরে ফেলে। ভিড় সরিয়ে দেয়। রাত ৯টা নাগাদ ওই ঘটনার পরে মলে গিয়ে দেখা যায়, সামনের দিকে লোকজনের আনাগোনার কমতি নেই। কিন্তু পুলিশ কাউকেই ঘটনাস্থলের দিকে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। কয়েকটি প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। প্রথমত, শপিং মলের ছাদে বাইরের কারও যাওয়ার অনুমতি থাকে না। তা হলে নিরাপত্তা-বেষ্টনী পেরিয়ে ওই যুবক ছাদে পৌঁছলেন কী ভাবে? দ্বিতীয়ত, যুবকটি ছাদে উঠছিলেন, নাকি অন্য কোনও তলায় গিয়েছিলেন?
২০১২-য় দক্ষিণ কলকাতায় এক মল-চত্বরের আবাসনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হন মা ও দুই মেয়ে। এ দিনের ঘটনার পরে জল্পনায় ফিরে আসছে তিন অপমৃত্যুর সেই ঘটনা। সেই সময়ে শহরের বহুতল ও শপিং মলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। রবিবার রাতের ঘটনা সেই সব প্রশ্নকে আবার সামনে নিয়ে এল।