কমলাভোগ, করতালিতে শহরে মোদী বরণ

ঘড়ির কাঁটায় ছ’টা দশ। “ম্যয় নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী...” টেলিভিশন থেকে ভেসে আসা শব্দবন্ধ শুনেই তুমুল হাততালি। করতালিতে একাকার হল জোড়াবাগান-বড়বাজারের গলি থেকে দক্ষিণের অভিজাত শপিং মল। তিন মিনিটের শপথবাক্য শেষ হতে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণের অলিগলি ভাসল মোদী-মোদী স্লোগানেও! কলকাতার ভোট বাক্সে এ বার মোদী-ম্যাজিক ভালই টের পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০৩:১৫
Share:

আবির খেলা। হাওড়ায় বিজেপি সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ঘড়ির কাঁটায় ছ’টা দশ। “ম্যয় নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী...”

Advertisement

টেলিভিশন থেকে ভেসে আসা শব্দবন্ধ শুনেই তুমুল হাততালি। করতালিতে একাকার হল জোড়াবাগান-বড়বাজারের গলি থেকে দক্ষিণের অভিজাত শপিং মল। তিন মিনিটের শপথবাক্য শেষ হতে কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণের অলিগলি ভাসল মোদী-মোদী স্লোগানেও!

কলকাতার ভোট বাক্সে এ বার মোদী-ম্যাজিক ভালই টের পাওয়া গিয়েছে। অনেকের মতে, তা সম্ভব হয়েছে নবীন প্রজন্মের কল্যাণে। এ দিন প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের শপিং মলের স্ক্রিনের সামনেও সেই নবীন-উচ্ছলতার আঁচ। উত্তর কলকাতার রাস্তায় সিগন্যালে দাঁড়ানো অটো থেকেও মুখ বাড়িয়ে পাশের জায়ান্ট স্ক্রিনে মোদীকে দেখে নিয়েছেন বছর কুড়ির আধুনিকা!

Advertisement

শপিং মলের স্ক্রিনে মোদীর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান দেখতে দেখতেই হাততালি দিচ্ছিলেন সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ সাগ্নিক রায়চৌধুরী। বললেন, “আশা করি, সরকারি ক্ষেত্র ও শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি বেসরকারি ক্ষেত্রকেও চাঙ্গা করতে নতুন সরকার চেষ্টা করবে।” সদ্য কলেজে ঢোকা শীর্ষা ভট্টাচার্য জীবনের প্রথম ভোটটা বিজেপিকে দিয়েছেন। তাঁরও আশা, নয়া সরকার উন্নয়নের পথে এগোবে।

সাগ্নিক-শীর্ষার মতো হাজারো তরুণ-তরুণীর কাছে সরকার মানে কি শুধুই নরেন্দ্র মোদী? প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণ শেষ হতে এমনটাই যেন মালুম হল। মোদীর পরে মঞ্চে উঠলেন রাজনাথ সিংহ। মলের স্ক্রিনের সামনের ভিড় পাতলা হতে শুরু করল।

মুরলীধর সেন লেনের রাজ্য বিজেপি সদর দফতর বা জোড়াবাগানে পুরসভার ওয়ার্ড অফিস লাগোয়া ভিড় অবশ্য অনুষ্ঠান শেষ হওয়া ইস্তক দানা বেঁধে থেকেছে। বিজেপি সদরের সামনে ম্যারাপ বাঁধা সকালেই সারা। বিকেল গড়াতে রাস্তা ঢাকল গেরুয়া চেয়ারে। ছোট্ট মঞ্চের এক দিকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি। শপথগ্রহণ দেখাতে এলইডি টিভি। শমীক ভট্টাচার্যের মতো রাজ্য বিজেপির নেতারা যখন এক পাশে চেয়ার নিয়ে বসে, তখন সামনে দলীয় কর্মী থেকে আম-জনতার জমাট ভিড়।

সন্ধে ছ’টা। এসইউভি চেপে রাষ্ট্রপতি ভবনে ঢুকলেন মোদী। টিভি স্ক্রিনে সে দৃশ্য দেখেই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি, সঙ্গে তুমুল হাততালি। তবে ক’মিনিটের মধ্যে ছন্দপতন। আচমকা বৃষ্টি নামল। তড়িঘড়ি ম্যারাপের তলায় সেঁধোলেন দর্শকেরা। ভিড়ে ঠাসাঠাসি মণ্ডপে শপথগ্রহণ দেখতে অনেকে তখন চেয়ারের উপরে উঠে পড়েছেন!

টিভি’তে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষ হলে মিষ্টিমুখের পালা চলল বিজেপি রাজ্য সদরে। জোড়াবাগানে আবার বিজেপি রাজ্য যুব মোর্চার সম্পাদক চন্দ্রশেখর বাসোটিয়ার নেতৃত্বে টিভিতে শপথ অনুষ্ঠান দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। বিকেলে সেখানে মিছিল করে আবির খেলেছেন, বাজি পুড়িয়েছেন কর্মীরা। বিশেষ কমলাভোগের অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যায় সেই মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে রাস্তার গাড়ি থামিয়ে আমজনতাকে মিষ্টিমুখ করাচ্ছিলেন স্থানীয় বিজেপি নেতা নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। কুণ্ঠিত এক অটোযাত্রী বললেন, “আমি তো এখানে থাকি না!” নারায়ণবাবুর জবাব, “তাতে কী? সারা দেশই তো মোদীকে আশীর্বাদ করছেন!”

বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নানা জায়গায় মিষ্টি বিলি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জোড়াবাগানকে অবশ্য টেক্কা দিয়েছে বড়বাজার। কলাকার স্ট্রিটের কাছে দেবেন দত্ত লেনের এক ধর্মশালায় রবিবার লাড্ডু বানানো শুরু হয়েছিল। তদারকির দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর বিজয় ওঝা। যিনি জানালেন, “চল্লিশ হাজারের উপর লাড্ডু বানানো হয়েছে। এ তল্লাটের সবাইকে খাওয়ানো হবে।”

শুধু বিজেপি কর্মী-নেতারা নন। এ দিন মোদী উৎসবে মেতেছিল ল্যান্সডাউন-পদ্মপুকুরের গুজরাতি সমাজও। জায়ান্ট স্ক্রিনে শপথ দেখতে দেখতে চলেছে প্যাঁড়া-লাড্ডুর মহা ভোজ। এর আগে শহরে এসে নরেন্দ্র মোদী তাঁর স্বদেশি ভাইদের সঙ্গে জলখাবারও খেয়েছিলেন। উৎসাহের সঙ্গে সে কথা শোনালেন শৈলেশ উদেশি। গুজরাতের উদাহরণ দেখিয়ে তাঁর দাবি, “মোদীই পারেন দেশকে নতুন দিশা দেখাতে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement