দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভাইয়ের দেহ মিলল পুকুরে

হোলির দুপুরে রং খেলার পরে পাশের পাড়ায় বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল দুই ভাই। তার পর থেকেই তাদের আর খোঁজ মিলছিল না। শেষে মঙ্গলবার দুপুরে পাশের পাড়ার একটি পুকুরে ভাসতে দেখা গেল দুই ভাইয়ের দেহ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে কামারহাটি পুরসভার আড়িয়াদহে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০০:২৬
Share:

রাজ হেলা ও অভিষেক হেলা

হোলির দুপুরে রং খেলার পরে পাশের পাড়ায় বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিল দুই ভাই। তার পর থেকেই তাদের আর খোঁজ মিলছিল না। শেষে মঙ্গলবার দুপুরে পাশের পাড়ার একটি পুকুরে ভাসতে দেখা গেল দুই ভাইয়ের দেহ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে কামারহাটি পুরসভার আড়িয়াদহে। মৃতদের নাম অভিষেক হেলা (১৭) ও রাজ হেলা (১৮)। তাদের বাড়ি আড়িয়াদহের এম এম ফিডার রোডের হরিজন বস্তিতে। রাজ অভিষেকের খুড়তুতো দাদা। দু’জনেই স্থানীয় রামানন্দ চ্যারিটি বিদ্যালয়ের এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।

পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার হোলি খেলার পরে দু’জনেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। পরিবারের দাবি, সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার পর থেকে তাদের আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাদের দিদি জ্যোতি হেলা বলেন, “দুপুরে ওরা বলল, ‘বন্ধুর কাছে যাচ্ছি।’ কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে তাদের আর খবর পাইনি। রাজের মোবাইলও বন্ধ ছিল।” বস্তিটির লাগোয়া নওদাপাড়ার বাসিন্দারা অবশ্য জানিয়েছেন, বিকেলে রাজ ও অভিষেককে এক বার দেখা গিয়েছিল। সোমবার সারা রাত এবং মঙ্গলবার দুপুরেও বাড়ি না ফেরায় এ দিন নিখোঁজ ডায়েরি করার জন্য থানায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাড়ির লোকেরা। তখনই খবর আসে, রাজের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে রামকৃষ্ণপল্লির পুকুর থেকে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন দুপুরে পুকুরে স্নান করতে গিয়ে এক ব্যক্তি দেখতে পান, পুকুরের মাঝখানে কিছু একটা ভাসছে। কাছাকাছি গিয়ে তিনি লক্ষ করেন, সেটি মানুষের মাথা। তৎক্ষণাৎ তিনি পাড়ার লোকেদের খবর দেন। তার পরে সকলে মিলে উদ্ধারের কাজে নেমে পড়েন। তখনই উদ্ধার হয় রাজের দেহ। খবর পেয়েই পরিজনেরা সেখানে যান। আবার খোঁজাখুঁজি শুরু হলে অভিষেকের দেহ উদ্ধার হয়। তড়িঘড়ি তাদের হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। খবর দেওয়া হয় বেলঘরিয়া থানায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, রাজের হাতের ঘড়িটি ১টা বেজে বন্ধ হয়েছিল। তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। রাজের বাবা কার্তিক হেলা কামারহাটি পুরসভার কর্মী এবং অভিষেকের বাবা প্রকাশ হেলা কলকাতা পুলিশের কর্মী। তাঁদের পরিবারেরই এক জন বলেন, “ওরা কেউ সাঁতার জানত না। কোনও দিন পুকুরেও নামেনি। কী ভাবে ওখানে গেল বুঝতে পারছি না। এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিমল সাহা বলেন, “আমি কাল রাতেই খবর পেয়েছিলাম যে ওদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আজ দুপুরে দেহ উদ্ধারের খবরটা শুনলাম। পুকুরটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। পুলিশকে খোঁজ নিতে বলেছি।” যদিও পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মৃতদের পরিবারের তরফে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের হয়নি। খবর পেয়ে এ দিন ওই দুই ভাইয়ের বাড়িতে যান তাদের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক উমাশঙ্কর সিংহ। তিনি বলেন, “মাধ্যমিকের কর্মশিক্ষার পরীক্ষা এখনও বাকি। কিছু দিন আগেই ওদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তার মধ্যেই এ সব ঘটে গেল।”

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি-ডিডি পি শুধাকর বলেন “ওই দুই ছেলের দেহে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারা কী করে ওই পুকুরে গেল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন