দমদম এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টার। পাঁচ ধাপ সিঁড়ি পেরিয়ে ওই কাউন্টারে ঢুকতে রীতিমতো কসরত করতে হয় প্রবীণ গ্রাহকদের। প্রতিবন্ধীদের অবস্থা আরও খারাপ। সামান্য টাকা তোলার জন্য এতটা কষ্ট তাঁদের অনেকেই করতে পারেন না।
দমদমের এই এটিএম কাউন্টার কোনও বিক্ষিপ্ত দৃষ্টান্ত নয়। বরং কলকাতার মতো দেশের সব শহরেই এটিএম কাউন্টারগুলিতে প্রতিবন্ধী কিংবা প্রবীণদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই। ফলে উন্নত ব্যাঙ্ক পরিষেবা থেকে প্রতিবন্ধী ও প্রবীণেরা বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠত। এ নিয়ে নানা অভিযোগ-পরামর্শ জমা পড়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দফতরে। সেই পরামর্শ-অভিযোগের ভিত্তিতেই বুধবার একটি নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চিফ জেনারেল ম্যানেজার রাজেশ বর্মার নাম-সম্বলিত ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রতিবন্ধীদের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা আরও মসৃণ ভাবে পৌঁছে দিতে হবে। তাই ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারগুলিতে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে হুইল চেয়ারে বসে গ্রাহকেরা যাতে সহজে এটিএম কাউন্টারে ঢুকতে পারেন, তার জন্য র্যাম্প তৈরি করতে হবে। এটিএমের (টাকা তোলার যন্ত্র) উচ্চতা কম রাখতে হবে। হুইল চেয়ারে বসে সহজে টাকা তোলার ব্যবস্থা করতেই এই সিদ্ধান্ত বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে। দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীদের জন্য এটিএমে ‘ব্রেল কি-প্যাড’ রাখতে হবে।
বস্তুত, ২০০৯ সালেও প্রতিবন্ধীদের জন্য এটিএমের সামনে র্যাম্প তৈরি করা এবং এটিএম যন্ত্র বসানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ পুরোপুরি পালন করা হয়নি বলেই ফের এই নির্দেশ। এ বারে পুরনো নির্দেশের সঙ্গে নতুন কয়েকটি নির্দেশও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
কী বলা হয়েছে সেই নির্দেশে?
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ১ জুলাই থেকে বসানো সব এটিএমেই ব্রেল কি-প্যাড থাকতে হবে। বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ‘টকিং’ ব্যবস্থাও। এই ব্যবস্থায় গ্রাহক এটিএমের নির্দেশ যন্ত্রকণ্ঠের মাধ্যমে কানে শুনতে পাবেন। ফলে দৃষ্টিহীনেরা নিজে নিজেই এটিএম ব্যবহার করতে পারবে। এ ছাড়াও, পুরনো এটিএম যন্ত্রগুলিকে কী ভাবে ব্রেল ও ‘টকিং’ ব্যবস্থা সম্বলিত এটিএমে রূপান্তরিত করা যায়, সে ব্যাপারেও ব্যাঙ্কগুলিকে একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে বলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
এটিএম কাউন্টারে আতস কাচ (ম্যাগনিফাইং গ্লাস) রাখার কথাও বলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তাদের মতে, আংশিক দৃষ্টিহীনেরা অনেক সময় কি-প্যাডের খুদে অক্ষর পড়তে পারেন না। এই সমস্যার সমাধানেই আতস কাচ রাখতে হবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর সর্বভারতীয় সম্পাদক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধীদের সমস্যা নিয়ে বিগত ইউপিএ সরকারের আমলে একটি বিল পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।”
কলকাতার অলিগলিতে বসানো এটিএম কাউন্টারে এই ব্যবস্থা কতটা করা যাবে, তা নিয়েও নাগরিকদের মধ্যে সংশয় রয়ে গিয়েছে। তাঁরা বলছেন, সরু গলির ভিতরে এমন এটিএম কাউন্টার রয়েছে, যেখানে র্যাম্প বানানো কার্যত অসম্ভব। একই মত ব্যাঙ্ক কর্তাদেরও। এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক-কর্তার ব্যাখ্যা, অনেক এটিএম-ই রাস্তার পাশে রয়েছে। সেখানে র্যাম্প তৈরি করলে তা রাস্তায় চলে আসবে। আইন মেনে সেটাও করা সম্ভব নয়।
ব্যাঙ্ক কর্তাদের বক্তব্য, পরিকল্পনামাফিক গড়ে ওঠা শহরে এ ধরনের ব্যবস্থা করা যায়। গত বছর দুয়েকে নতুন গড়ে ওঠা শহরে এমন কিছু এটিএম তৈরিও হয়েছে। “কিন্তু সাবেক কলকাতার সরু গলিতে এটা করা প্রায় অসম্ভব।”মন্তব্য এক ব্যাঙ্ক-কর্তার। তবে ব্রেল কিংবা ‘টকিং’ ব্যবস্থা বসানো এটিএমের সংখ্যা ইদানীং বেড়েছে বলেও ব্যাঙ্ককর্তারা দাবি করেছেন।