ভোজের পাতে মেসি-নেইমার

স্টার্টারে মেসি মেসমেরাইজ, রোনাল্ডো’স রান। মেনকোর্সে রিও রকার, নিম্বল অ্যাজ নেইমার, রঁদেভ্যু উইথ রুনি। পানীয়ে ক্রিস্টিয়ানো ক্রাশার, ফ্লাইং ডাচম্যান, মস্কো ম্যাজিক, দ্য মার্কানা, সিআর সেভেন। রেস্তোঁরার মেনু কার্ড নাকি রাতের পর রাত জাগা ফুটবলপ্রেমীর অবচেতনের স্বপ্ন!

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা ও পরমা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৪ ০০:০০
Share:

স্টার্টারে মেসি মেসমেরাইজ, রোনাল্ডো’স রান। মেনকোর্সে রিও রকার, নিম্বল অ্যাজ নেইমার, রঁদেভ্যু উইথ রুনি। পানীয়ে ক্রিস্টিয়ানো ক্রাশার, ফ্লাইং ডাচম্যান, মস্কো ম্যাজিক, দ্য মার্কানা, সিআর সেভেন।

Advertisement

রেস্তোঁরার মেনু কার্ড নাকি রাতের পর রাত জাগা ফুটবলপ্রেমীর অবচেতনের স্বপ্ন! তাই বুঝি মহারণ মিলে গিয়েছে মহাভোজে!

পারদ চড়ছে কলকাতার। গলি থেকে রাজপথ, শহরের আনাচে কানাচে, সর্বত্রই বিশ্বকাপ-জ্বর। সেই উন্মাদনায় সাত থেকে সত্তর— সকলের মুখে মুখে ফিরছেন মেসি, নেইমার, মুলার, বেনজিমারা। ফিফার র্যাঙ্কিং-য়ে ভারতের স্থান ১৪৮ হলই বা। ব্রাজিল বা আর্জেন্তিনা বা জার্মানির সমর্থক হতে তো বাধা নেই। আসল কথা হল এক মাস ধরে জমিয়ে ভাল ফুটবল দেখার হুজুগ।

Advertisement

আর সেই হুজুগটাকেই মূলধন করে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে শহরের হোটেল রেস্তোরাঁগুলো। বিপণনের ব্যাকরণে ‘ইভেন্ট’-এর গুরুত্ব অপরিসীম। আর বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো সর্বজনগ্রাহ্য ইভেন্ট আর ক’টাই বা আছে? ‘কষে কষা’ ও ‘গসিপ’-এর কর্ণধার প্রদীপ পাল বললেন, ‘‘এ শহরের ফুটবল উন্মাদনা সকলের জানা। তাই বিশ্বকাপ ফুটবল ঘিরে আমরা মেনু থেকে ডেকর, সবই সাজিয়েছি। ফুটবলের টানে ব্যবসা বেশি হবেই।’’

বিশ্বযুদ্ধের উত্তাপ পৌঁছেছে তাজ বেঙ্গলেও। অংশগ্রহণকারী ৩২টি দেশের নামে ৩২টি ককটেল হাজির তাঁদের ভাঁড়ারে। ব্রাজিলের দ্য মার্কানা, আর্জেন্তিনার মেসি ড্রিবল, ঘানার দ্য ব্ল্যাক স্টার, ফ্রান্সের জিদান’স হেড বাট-এর জমাটি কিকে জমে যাবে ফুটবল-আড্ডা। গেটওয়ে হোটেলে ফেভারিট দলকে নিয়ে উল্লাসে মাতুন পিৎজা-সহযোগে। আমিষ-নিরামিষ মিলিয়ে নতুন ১২টি স্বাদের পিৎজা থাকছে অংশগ্রহণকারী লাতিন আমেরিকার দেশগুলির হেঁশেল থেকে। নিঝুম রাতের ম্যাচ-যাপনের কথা মাথায় রেখে এখানকার ‘বাজ’-এ হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা চালু থাকছে গভীর রাত পর্যন্ত।

একা একা কবেই বা জাঁকিয়ে বসে ফুটবল-ম্যানিয়া? মাঠের উত্তেজনার আঁচ গায়ে না লাগলে অর্ধেক আনন্দই তো মাটি। আর সেই সঙ্গেই যদি থাকে টুকটাক মুখ চালানোর সুযোগ, তবে তো সোনায় সোহাগা! বন্ধুদের সঙ্গে জায়ান্ট স্ক্রিনে ফেভারিটদের তুমুল লড়াই দেখা আর সঙ্গে পাঁচতারার খাবার। শেফ প্রদীপ রোজারিওর রেস্তোঁরা মিও আমোরের মেনুতে ফুটবলের বিখ্যাত শটগুলির জয়জয়কার। ৩২টি দেশের নামে খাবার। আর তাদের ভাগ করা হয়েছে পেনাল্টি, কর্নার কিকের নামে। হোটেল হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল-এর রেস্তোরাঁ ভার্গোস-এ থাকছে রবেন’স রাব, বেন্ড ইট লাইক বালোতেলি-র মতো একগুচ্ছ স্টার্টার। ম্যাচ দেখতে দেখতেই টুকটাক মুখ চালানোর ব্যবস্থা থাকছে সুইসোটেলের মায়া-তেও। সেখানকারই ক্যাফে সুইস-এ থাকছে ফুটবলদেশগুলির ভাঁড়ার থেকে আর্জেন্তিনার স্যুপ, ব্রাজিলের ফিশ স্ট্যু, গ্রিক লেমন পোট্যাটো, কলম্বিয়ান কফি, রাশিয়ান ভদকা, জার্মান অ্যাপল কেকের মতো সুস্বাদু সব পদে জমাটি ব্যুফের আয়োজন। আর বিশ্বকাপের দিনগুলোতে সোম থেকে শুক্র পাঁচ দিনে পাঁচ রকম পদের বাড়তি মজা নিয়ে হাজির আমিনিয়া-র গোলপার্ক এবং যশোহর রোড শাখা। দু’টি বিরিয়ানি-র অর্ডারের সঙ্গে আমিষ-নিরামিষ মিলিয়ে এক এক দিন এক-একটি পদ বিনামূল্যে মিলছে।

মিও আমোরে-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ব্র্যান্ড নেক্সট। প্রদীপ রোজারিও এবং ব্র্যান্ড নেক্সট-এর প্রধান কৌশিক মৌলিক, দু’জনেরই দাবি, শহরের সঙ্গে নিজেদের ব্যবসার এমন প্রাণের যোগাযোগ শুধু মাত্র ফুটবলের মাধ্যমেই সম্ভব।

শুধুই কি ব্যবসার কথা মাথায় রেখেই হোটেল-রেঁস্তোরায় ফুটবল নিয়ে মাতামাতি? পুরোটা নয়। সল্টলেকের ডিস্কো ব্যাকস্টেজ এ বার ফুটবলকে ঘিরে তৈরি করেছে বিপণন চমক। কর্তৃপক্ষের মতে, ক্রেতাদের মনে রাখার মতো অভিজ্ঞতা দেওয়াই আসল কথা। একে ভ্যাল্যু অ্যাডিশন বলা যেতে পারে। এখানে অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে পার্টি হ্যাট ও বাঁশি। খেলা দেখার সঙ্গে থাকবে ব্রাজিলের জনপ্রিয় সব পানীয়। খেতে খেতে বাঁশি বাজিয়ে গ্যালারির দর্শকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হুল্লোড় করার সুযোগ নিতে ভিড় জমাচ্ছেন সপ্তাহান্তের পার্টি ক্রাউড।

সব খেলার সেরা বলে কথা। বাঙালি তো মাতবেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন