প্রাতর্ভ্রমণে না বেরোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা

শিল্প শহরে ধোঁয়াশার চাদর

শুধু রামপদ নন, হলদিয়ার বহু বাসিন্দা ধোঁয়াশায় কাবু হচ্ছেন বলে অভিযোগ। হলদিয়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শহর এবং আশেপাশের এলাকা জুড়ে ধোঁয়া আর ধুলোর দাপট বেড়ে গিয়েছে সম্প্রতি। শীতের মরসুমে তাতে তৈরি হচ্ছে প্রচুর ধোঁয়াশা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৫১
Share:

হলদিয়ায় শীতের সকাল। ফাইল চিত্র

প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে গত কয়েকদিন ধরে সর্দি আর কাশিতে ভুগছিলেন হলদিয়ার বাসিন্দা রামপদ দাস। যেতে হয়েছিল চিকিৎসকের কাছে। তাঁকে চিকিৎসক সাফ জানিয়েছেন, বর্তমানে হলদিয়ার যা পরিস্থিতি, তাতে প্রার্তভ্রমণে একটু দেরিতে যাওয়া উচিত। নইলে ধোঁয়াশায় কাবু হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

Advertisement

শুধু রামপদ নন, হলদিয়ার বহু বাসিন্দা ধোঁয়াশায় কাবু হচ্ছেন বলে অভিযোগ। হলদিয়ার স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শহর এবং আশেপাশের এলাকা জুড়ে ধোঁয়া আর ধুলোর দাপট বেড়ে গিয়েছে সম্প্রতি। শীতের মরসুমে তাতে তৈরি হচ্ছে প্রচুর ধোঁয়াশা। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই টাউনশীপ, দুর্গাচক, এইচপিএল লিঙ্ক রাস্তা-সহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল ৯টাতেও কালো ধোঁয়াশায় গোটা শহর মুড়ে থাকছে বলে অভিযোগ। পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, মাত্রাতিরিক্ত দূষণের জেরে শীতকালে বায়ুমণ্ডলের তাপ কমার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়াশা তৈরি হচ্ছে হলদিয়া জুড়ে। এতে আমজনতার শারীরিক সমস্যা যেমন হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে, তেমনই সমস্যায় পড়ছেন গাড়ির চালকেরা।

হলদিয়া বন্দর এবং শিল্প শহর হওয়ার সুবাদে এখানে বহু কারখানা রয়েছে এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল লেগেই থাকে। ফলে এখানে কার্বন- মনোক্সাইড গ্যাস তুলনামূলকভাবে বেশি উৎপন্ন হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজ্ঞান মঞ্চের হলদিয়া-সুতাহাটা কেন্দ্রের সম্পাদক মনীনাথ গায়েন বলেন, ‘‘শীতকালে রাত বাড়লেই তাপমাত্রা অনেকটা কমে যায়। ফলে কলকারখানার ধোঁয়া, বর্জ্য, ধুলিকনা, বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে ধোঁয়াশা তৈরি করে। আবার দিনের বেলা যখন উত্তাপ বেড়ে যায়, তখন ওই ধোঁয়াশা উবে গিয়ে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়।’’ মনীনাথ জানাচ্ছেন, শীতে হলদিয়াতে ভোরে ধোঁয়াশার খুব সমস্যা থাকে। তবে বেলা ৯টার পর পরিস্থিতি একটু করে বদলায়।

Advertisement

হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের এক চিকিৎসক প্রশান্ত পাল বলেন, ‘‘এভাবে ধুলো এবং ধোঁয়াশার পরিমাণ বাড়লে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি, জ্বর ও কাশি হয়। এই সবে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই আসছেন পরামর্শ নিতে। আপাতত কিছু দিন সকালের কিছুটা সময় এড়িয়ে চলা উচিত।’’

হলদিয়ায় বেড়ে যাওয়া ধোঁয়াশার সমস্যা প্রসঙ্গে বাচ্চু আদক নামে হলদিয়া–মেচেদা রুটের এক বাস চালক বলেন, ‘‘সকাল ৮টার সময় হলদিয়াতে কালো ধোঁয়া ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। সামনে কে আসছে, তা দেখার জন্য আলো জ্বালিয়ে যেতে হয়।’’ কর্মসূত্রে মোটরবাইক নিয়ে সুতাহাটা থেকে হলদিয়া যান শেখ নুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘এক হাত দূরের কোনও কিছুই দেখা যায় না। তাই খবু সাবধান হয়ে গাড়ি চালাতে হয়। কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কা তো থেকেই যায়।’’

বেড়ে চালা দূষণ নিয়ন্ত্রণে শিল্প সংস্থা, স্থানীয় পুরসভা ও হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তরফে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ ব্যাপারে এব্যাপারে দূষণ নিয়ন্ত্রন পর্ষদের হলদিয়া শাখার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শিল্প সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে দূষণ সৃষ্টি নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে, দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়।’’ হলদিয়ার এক বেসরকারি শিল্প সংস্থার প্রতিনিধি বিদূষরঞ্জন সেন বলেন, ‘‘দূষণ কমানোর জন্য শিল্প সংস্থাগুলি যেভাবে গাছ লাগাতে এগিয়ে আসছে, স্থানীয়দেরও একই রকম পদক্ষেপ করা উচিত।’’ এ ব্যাপারে হলদিয়া পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুধাংশু মণ্ডল বলেন, ‘‘দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। গাছ লাগানো, গাছের পরিচর্চার উপর আমারা আরও গুরুত্ব দিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন