টেলিফোনে আড়িপাতা নিয়ে সোমবারই শোরগোল হয়েছে সংসদে। রাজ্যসভাতে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ অভিযোগ করেছেন, বিরোধী নেতাদের ফোনে আড়ি পাতছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বিজেপি নেতাদেরও কেউ কেউ বলছেন, তাঁদের ফোনেও আড়িপাতা হয় বলে আশঙ্কা তাঁদের।
আশঙ্কা এ রাজ্যেও কিছু কম নয়। অন্তত বিরোধী দলের নেতাদের একযোগে অভিযোগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন নির্বিচারে ‘বেআইনি ভাবে’ আড়ি পাতছে। কেন্দ্রের মতো রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরাও উদ্বিগ্ন।
গুলাম নবি আজাদের অভিযোগ আজ অস্বীকার করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাদের দাবি, বেআইনি ভাবে আড়িপাতার কাজ কেন্দ্রের কোনও এজেন্সিই করে না। যা হয়, তা নিয়ম মেনেই। এ রাজ্যে বেআইনি আড়িপাতার অভিযোগও মানতে নারাজ নবান্ন। রাজ্যের এক শীর্ষ স্বরাষ্ট্র কর্তা বলেন, ‘‘এ রাজ্যে এক জনেরও টেলিফোনে বেআইনি ভাবে আড়িপাতা হয় না। যা হয় সবই স্বরাষ্ট্র সচিবের লিখিত অনুমতি নিয়ে।’’
যদিও নবান্নের আর এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘মাওবাদী উপদ্রব বা পাহাড়ে আন্দোলনের সময় বছরে যে সংখ্যক টেলিফোনে আড়িপাতার কাজ চলত, এখনও মোটামুটি তেমনই হয়।’’ এই ‘তথ্যই’ বলে দিচ্ছে, রাজ্যে অশান্তি কমলেও আড়িপাতার বহর কমেনি। নবান্নের খবর, বছরে প্রায় ৩০ হাজার টেলিফোনে রাজ্যের বিভিন্ন এজেন্সি আড়িপাতার কাজ করে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনারের টেলিফোনে যে আড়িপাতা হচ্ছে না, সেই মর্মে প্রতি মাসে টেলিফোন কোম্পানিগুলি থেকে হলফনামা আদায় করা হয়। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর টেলিফোনে আড়িপাতা হয় না বলে হলফনামা নিতে হয়, সেখানে অন্যদের ক্ষেত্রে কী হচ্ছে বুঝে নিন!’’
সরকারি কর্তারা মুখে স্বীকার না করলেও পুলিশ বা গোয়েন্দা বিভাগ যে আকছার ‘বেআইনি’ আড়িপাতার কাজ করে থাকে, তা রাজ্য প্রশাসনের অলিন্দে কান পাতলেই শোনা যায়। সেই তালিকায় রাজ্যের মন্ত্রী-আমলা, বিধায়ক-সাংসদ, বিরোধী নেতা-নেত্রী, সাংবাদিক কেউ বাদ নেই বলেই প্রশাসনিক মহলে গুঞ্জন। সরকারি কর্তা বা মন্ত্রী-বিধায়কদের অনেকেই এখন কেবলমাত্র বিভিন্ন অ্যাপ-এর মাধ্যমে ভয়েস কল করে থাকেন। সাধারণ মোবাইলে কথাই বলেন না।
নবান্নের খবর, কলকাতা পুলিশের আড়িপাতার পরিকাঠামো সবচেয়ে পোক্ত। এর পরেই এমন ব্যবস্থা রয়েছে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ এবং সিআইডিতে। সব মিলিয়ে এখন প্রতিদিন ১৭০০ থেকে ২০০০ ফোনে নাগাড়ে নজরদারি চালানো যায়। এর পরেও প্রত্যেক জেলায় রোজ অন্তত ৪০-৫০ টি করে ফোনে আড়িপাতার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে রাজ্যের দু’টি এজেন্সির কাছে উন্নত ইজরায়েলি মেশিনও রয়েছে বলে কেউ কেউ দাবি করেন। যে মেশিনের সাহায্যে সহজেই যে কোনও ফোনে আড়িপাতা যায়। এ ছাড়া যখন তখন যে কারও টেলিফোনের ‘কল ডিটেলস রেকর্ডস’ বা ক্লোন সিমের মাধ্যমে কথা শোনার ঘটনা ঘটেই বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের দাবি, ‘‘আমার কাছে বেআইনি ভাবে আড়িপাতার নির্দিষ্ট খবর আছে।’’ কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীরও ধারণা, যে ভাবে প্রতি ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, তাতে প্রতিহিংসাপরায়ণ সরকারের কাছে আড়িপাতাই স্বাভাবিক প্রবণতা। যা শুনে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, ‘‘এ সব অভিযোগের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছি না।’’