Left Front

লক্ষ্য ২০২৬ সালের বিধানসভা, ২০২৫-এর এপ্রিলের মধ্যেই আসনরফা চূড়ান্ত করতে চায় বামফ্রন্ট

বাস্তবতাকে অগ্রাধিকার দিতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। বড় শরিক সিপিএমের তরফেই ফ্রন্টের বৈঠকে ফর্মুলা বদলের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের মুখে যাতে জোট বা আসন সমঝোতায় কোনও শরিকি জটিলতা বা বাধা তৈরি না-হয়, সেই কাজ এখনই সেরে রাখতে চায় বামফ্রন্ট।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:৫৩
Share:

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে ব্রিগেডে বামেদের সমাবেশ। —ফাইল ছবি।

ভোটের মুখে আসন বোঝাপড়া নিয়ে জটিলতা রাখতে চায় না বামফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার সিপিএমের রাজ্য দফতরে অনুষ্ঠিত ফ্রন্টের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যেই আসনওয়াড়ি বোঝাপড়া চূড়ান্ত করে ফেলা হবে। নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ভোট হলে ২০২৬-এর এপ্রিলে-মে মাসে বিধানসভা ভোট হবে। অর্থাৎ এক বছর আগে থেকেই সেই কাজ সেরে ফেলতে চাইছে বামফ্রন্ট।

Advertisement

বাম শরিক দলের এক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, বৈঠকে ঠিক হয়েছে যে, সব দলই চেষ্টা করবে আসন ধরে ধরে কার কোথায় কেমন শক্তি, তার বাস্তব অবস্থা মার্চের মধ্যে জানাবে। তবে পুরো সিদ্ধান্ত হতে এপ্রিল হয়ে যাবে।

গত ডিসেম্বরেই বামফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ১৯৭৭ সালের ভোট ফর্মুলা বাতিল হবে। ১৯৭৭ থেকে ২০২৫— পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে আমূল বদল ঘটে গিয়েছে ৪৮ বছরের ব্যবধানে। একটা সময়ে কোচবিহারের বড় অংশ জুড়ে দাপট ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের। অবিভক্ত মেদিনীপুর জুড়ে ছিল সিপিআইয়ের আধিপত্য। দক্ষিণ দিনাজপুর কিংবা দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর, কুলতলিতে ছিল আরএসপির জমাটি সংগঠন। ফ্রন্টের মধ্যে থাকা আরও কিছু ছোট শরিক দলেরও কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় শক্তি পুঞ্জীভূত ছিল। কিন্তু এখন সেই দিন নেই। সাড়ে ১৪ বছর হতে চলল সরকার থেকে চলে গিয়েছে বামফ্রন্ট। তার পর এখন তারা বিরোধী পরিসরেও ‘নেই’। ক্ষইতে ক্ষইতে ‘প্রান্তিক’ শক্তিতে পরিণত হয়েছে ৩৪ বছর রাজ্য শাসন করা জোট। বামফ্রন্ট সূত্রে খবর, সেই বাস্তবতার কথা মাথায় রেখেই পরিবর্তিত ফর্মুলা তৈরি করা হবে।

Advertisement

সম্প্রতি ছ’টি বিধানসভার উপনির্বাচনে মাত্র একটি আসনে নিজেদের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল সিপিএম। সেই তালড্যাংরাতে বামেরা ১০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। মাদারিহাটে আরএসপি, সিতাইয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক, মেদিনীপুরে সিপিআই বড়জোর দেড়, দুই অথবা তিন শতাংশ ভোট পেয়েছে। এমতাবস্থায় ৪৮ বছরের পুরনো ফর্মুলা বদলের সিদ্ধান্ত নেয় বামফ্রন্ট।

১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসেছিল রাজ্যে। যা চলেছিল ২০১১ পর্যন্ত। ১৯৭৭ সালে যে আসন যাদের ছিল, সর্বশেষ লোকসভা ভোটেও সেই ফর্মুলাতেই আসন বণ্টন হয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কংগ্রেস, আইএসএফ এমনকি, সদ্যসমাপ্ত উপনির্বাচনে ফ্রন্টের বাইরে থাকা বাম দল সিপিএমএল (লিবারেশন)-এর সঙ্গেও আসন সমঝোতা করেছিল বামেরা। কিন্তু দেখা গিয়েছে, শরিক দলগুলি নিজেদের আসন ছাড়ার ব্যাপারে জেদাজেদি করে। চার দশক ধরে লড়ে আসার দোহাই দিয়ে তারা এখনও লড়তে চায়। কিন্তু ভোটের পর ভোট যায়, জয় আসে না। সেই বাস্তবতাকেই অগ্রাধিকার দিতে চাইছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। মূলত বড় শরিক সিপিএমের তরফেই ফ্রন্টের বৈঠকে ফর্মুলা বদলের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের মুখে যাতে জোট বা আসন সমঝোতায় কোনও শরিকি জটিলতা বা বাধা তৈরি না-হয়, সেই কাজ এখনই সেরে রাখতে চায় বামফ্রন্ট।

তবে, আগে প্রস্তুতি নিলেও ভোটের বাক্সে বামেরা কতটা দাগ কাটতে পারবে, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। কারণ ভোটে জেতার জন্য যে পরিসর দরকার, তা আপাতত বামেদের জন্য নেই বলেই অভিমত রাজনৈতিক মহলের অনেকের। কারণ, বঙ্গের রাজনীতি তৃণমূল এবং বিজেপির দ্বিমেরু অক্ষেই আবর্তিত হচ্ছে। বামেদের লড়াই আপাতত জামানত রক্ষার। অন্তত গত কয়েকটি সাধারণ নির্বাচন সেই দিগ্‌নির্দেশই করছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement