গ্রামের আকাশেও রামধনুর ছটা

মাটিগাড়ায় ফের ফিরল বামেরা

মাটিগাড়ায় তোলাবাজি, প্রোমোটারি, জমি মাফিয়াদের গুণ্ডারাজের অভিযোগ নিয়ে বাম আমলে ক্ষোভের অন্ত ছিল না। দুষ্কৃতীদের কার্যকলাপে বিরক্ত এলাকাবাসী এক সময়ে এই অভিযোগেই বামেদের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন। মাটিগাড়া এলাকা থেকে হটে যেতে হয়েছিল তাঁদের। যাঁদের বিরুদ্ধে এই সমস্ত অভিযোগ ছিল, তাঁরাই সময়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বর্তমান শাসকদল তৃণমূলে।

Advertisement

সংগ্রাম সিংহ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৫০
Share:

বিজয় মিছিলে সিপিএম ও কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে উচ্ছ্বাস দলীয় কর্মী-সমর্থকদের। খড়িবাড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

মাটিগাড়ায় তোলাবাজি, প্রোমোটারি, জমি মাফিয়াদের গুণ্ডারাজের অভিযোগ নিয়ে বাম আমলে ক্ষোভের অন্ত ছিল না। দুষ্কৃতীদের কার্যকলাপে বিরক্ত এলাকাবাসী এক সময়ে এই অভিযোগেই বামেদের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন। মাটিগাড়া এলাকা থেকে হটে যেতে হয়েছিল তাঁদের। যাঁদের বিরুদ্ধে এই সমস্ত অভিযোগ ছিল, তাঁরাই সময়ের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বর্তমান শাসকদল তৃণমূলে। ফলে সেই একই মুখে বিরক্ত এলাকাবাসী ফের তাঁদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে দ্বিধা করেননি বলে একান্তে মানছেন তৃণমূলের অনেকেই। ফলে সেই মাটিগাড়ায় মহকুমা পরিষদ থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি বা পঞ্চায়েতে একচেটিয়া আধিপত্য নিয়ে ফের জাঁকিয়ে বসল বামফ্রন্ট। বিরোধী শূন্য করে বাম নেতারা এখন উচ্ছ্বসিত।

Advertisement

মানুষ যে গোলমাল, সন্ত্রাস কিংবা দল ভাঙানোর রাজনীতি পছন্দ করেন না, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন বিতর্কিত সমস্ত প্রার্থীদের হারিয়ে জবাব দিয়ে। বামফ্রন্টের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মানুষ মিথ্যাচার ও হিংসার রাজনীতি পছন্দ করে না। ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়ার পরে গ্রামে ন্যূনতম উন্নয়ন হয়নি। ফলে মানুষ আমাদের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছে।’’ মাটিগাড়ার মহকুমা পরিষদ প্রার্থী সুজিত দাসের দাবি, ‘‘এখনই এই ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীতে লড়তে হবে।’’

ভোটের আগে ও ভোটের দিন যে এলাকাগুলিতে গোলমালের অভিযোগ এসেছিল, সবগুলিতে হার হয়েছে শাসকদলের প্রার্থীদের। সবগুলিতেই জয় পেয়েছেন সিপিএম প্রার্থীরা। গতবারের সিপিএমের টিকিটে মহকুমা পরিষদ আসনে জেতা জ্যোতি তিরকে এবারে মাটিগাড়া একটি পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি হেরে যান সিপিএম প্রার্থী তারা প্রধানের কাছে। হেরে জ্যোতি অবশ্য দলের সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন। হেরে গিয়েছেন আঠারোখাই এলাকার তৃণমূল প্রার্থী দুর্লভ চক্রবর্তী। ভোটের কয়েকদিন আগে দুষ্কৃতীরা তাঁর উপরে গুলি চালায় বলে অভিয়োগ তুলেছিলেন। তাঁর বিপর্যয়ের ছবি তৃণমূলের প্রচারের হোর্ডিংয়ে শোভা পাচ্ছে এখনও। হারার পর তাঁর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

Advertisement

তবে জেলার রাজনীতিতে তিনি যাঁর অনুগামী বলে পরিচিত সেই তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি কৃষ্ণ পাল হারকে মাথা পেতে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে জয় পরাজয় রয়েছে। হার মেনে নিতে হবে। তবে এখন থেকে আগামীর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’’ তবে হেরে গিয়েছেন ভোটের দিন কংগ্রেস প্রার্থীর উপরে বোমা মারার অভিযোগ ওঠা পঞ্চায়েত সমিতি প্রার্থী রাজকুমার থাপাও। তিনিও হারের জন্য দলের একটা বড় অংশের অসহযোগিতা রয়েছে বলে জানান।

মাটিগাড়ায় দুটি মহকুমা পরিষদ আসন। গত বার দু’টিই ছিল সিপিএমের দখলে। এ বারও তাঁরা নিজেদের আসন ধরে দুটিতেই জয় পেয়েছেন। মাটিগাড়ার পাথরঘাটা ও চম্পাসারি মহকুমা পরিষদ আসনে জয়ী সিপিএম প্রার্থী ভবেশ ঘোষ ও মাটিগাড়া ১ ও ২ আসনে জয়ী হন তাপস সরকার। পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট ১৫টি আসন। গতবারে ৮টিতে বামফ্রন্ট ও ৭টিতে কংগ্রেস ছিল। প্রথমে বামেরা বোর্ড করলেও পরে বিক্ষুব্ধ কয়েকজন দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁদের সঙ্গে কংগ্রেস আঁতাত করে বোর্ড দখল করে। এবারে সেখানে ৯টি আসনে জয়ী বাম প্রার্থীরা। বাকি ৬টি আসনে জয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। পঞ্চায়েতে মাটিগাড়ায় মোট আসন ১২৩টি। এর মধ্যে ৬৭টি আসনে জয়ী হন বাম প্রার্থীরা। তৃণমূল ৩৩টিতে, কংগ্রেস ১৪টিতে, বিজেপি ৫ টিতে ও নির্দল ৪টি আসনে জয়ী হয়েছে। পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে গতবার মাটিগাড়া-২ কংগ্রেসের দখলে ছিল। পরে নান্টু বিশ্বাস তৃণমূলে যোগ দেন। বাকিগুলি ছিল বামফ্রন্টের। এদিন আঠারোখাই ও চম্পাসারি বামেদের দখলে গিয়েছে। বাকিগুলি ত্রিশঙ্কু। এর মধ্যে মাটিগাড়া-১ ও দুইয়ে তৃণমূলে ও পাথরঘাটায় সিপিএম এগিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন