সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
অভিষেকের কথায়, ‘‘জ্ঞানেশ কুমারে বোঝা উচিত তিনি ভারত সরকারের নয়, ভারতের নির্বাচন কমিশনার।’’
অভিষেক জানান, ২ জানুয়ারি থেকে আগামী এক মাস রাস্তায় থাকবেন। ক্ষমতায় না-এসে ওঁরা চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে মারতে পারে, তা হলে ক্ষমতায় এলে কী করবে? কোথায় মারছে? গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে! কেউ কোনও দিন গীতাপাঠ করেননি। অভিষেকের প্রশ্ন, হাই কোর্ট নির্দেশ দেওয়ার পরেও কেন টাকা বন্ধ রেখেছে।
অভিষেক প্রশ্ন করেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভোট দিয়ে যে সব বিজেপি বিধায়ক-সাংসদদের বেছেছেন, তাঁরা কেন কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা নিয়ে একটাও প্রশ্ন করে না।
বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে এ বার নতুন স্লোগান বাঁধল তৃণমূল শিবির। ‘যতই করো হামলা, আবার জিতবে বাংলা’— শনিবার এই স্লোগান প্রকাশ করেছে তৃণমূল। প্রকাশ করা হয়েছে নতুন কর্মসূচির লোগোও। অভিষেকের কথায়, ‘‘আগামী ২ তারিখ থেকে রাস্তায় থাকব। এসআইআরের সময় আমরা কোনও কর্মসূচি নিইনি। আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য, এই ১৫ বছরে আমাদের সরকার কী কাজ করেছে, তা রাজ্যের মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেব। আমাদের যদি মাথানত করতে হয় তবে এ রাজ্যের মানুষের কাছে করব। বিজেপির কাছে করব না।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, তামিলনাড়ুতে বেশি লোকের নাম বাদ গিয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও দল পাঠানো হচ্ছে না। বাংলাকে বেছে নিয়ে দল পাঠানো হচ্ছে।’’ অভিষেকের দাবি, ‘‘ইআরও-দের তথ্য ব্যবহার করে ফর্ম ৭ পূরণ না-করে নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইআরও জানেননি না। ব্যাকঅ্যান্ড থেকে নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কে করছে, কেন করছে, তা মিসেস খন্নাই বলতে পারবেন। কেউ আত্মসমর্থনের সুযোগই পাচ্ছেন না।’’ কার অঙ্গুলিহেলনে হচ্ছে, প্রশ্ন করেন অভিষেক। তিনি বলেন, ‘‘৩১ তারিখ আমাদের সময় দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে সেই সাক্ষাৎ সরাসরি সম্প্রসার করুক কমিশন।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি বাংলা বিরোধী। ওরা শুধু বোনাসের রাজনীতি, ধর্মের রাজনীতি, নাম বাদ দেওয়ার রাজনীতি করে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দেওয়ার রাজনীতি করে। ওরা শুধু ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও-এর রাজনীতি করে।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি স্বভাবই আপনাকে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া। কমিশন যে শুনানি করছে, তার কোনও পরিকল্পনা নেই। বিজেপি যা বলছে তাই করছে।’’
তালিকা প্রকাশ না-হলে কমিশন ঘেরাওয়ের জাক অভিষেকের।
অভিষেক বলেন, ‘‘সীমা খন্না ডিজি, আইটি। কমিশনের সঙ্গে যুক্ত।’’ তালিকার কাজে সীমার এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অভিষেক।
অভিষেকের দাবি, যদি ১ কোটি ৩৬ লক্ষ লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি (বাতিলের তালিকা) হয়, তবে তার তালিকা প্রকাশ করুক কমিশন! যদি এক কোটি রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি থাকে তবে তালিকা প্রকাশ করুক। হয় তালিকা প্রকাশ করুন, না হয় ক্ষমা চান। অভিষেকের কথায়, ‘‘বাংলার মানুষের কাছে কান ধরে ক্ষমা চান, তা হলে আর তালিকা বার করতে বলব না। তালিকা প্রকাশ করার দায়িত্ব কার? যে কাজটা বিএলও, ইআরও-দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এক মাসের বেশি সময় লাগল, সেটা আপনি একই দিনে এক ঘণ্টার মধ্যে বার করে দিলেন? আমার কাছে তো স্ক্রিনশট রয়েছে। সীমা খন্না বলে এক ভদ্রমহিলা রয়েছেন, তাঁর ভূমিকা কী? কার অঙ্গুলিহেলনে তিনি কাজ করছেন? তাঁর চ্যাটের স্ক্রিনশট রয়েছে আমাদের কাছে। তিনি মেনে নিচ্ছেন সফট্অ্যায়ারের ভুলের কারণে হয়েছে। আমরা এই সব স্ক্রিনশট জমা দেব সুপ্রিম কোর্টে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কাউকে আড়াল করছে না। আপনাদের লিস্ট বার করতে সমস্যা কোথায়?’’
আগামী ৩১ ডিসেম্বর দিল্লি গিয়ে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানালেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘আমি নিজে ৩১ তারিখ দিল্লি যাব, মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে তালিকা দেখতে চাইব।’’
নির্বাচন কমিশনকে ‘হোয়াট্সঅ্যাপ কমিশন’ বলে তোপ অভিষেকের। তাঁর দাবি, ‘‘লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি বলে একটা লিস্ট হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনও অফিসিয়াল প্রেস রিলিজ নেই। হোয়াট্সঅ্যাপে সকলের সঙ্গে শেয়ার করেছে। এটা হোয়াট্সঅ্যাপ কমিশন। সব কিছু হোয়াট্সঅ্যাপে পাঠায়। সব স্ক্রিনশট রয়েছে। লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সিতে বলা হচ্ছে, ১ কোটি ৩৬ লক্ষ লোক এমন রয়েছে যাঁদের নামের বানানে ভুল হয়েছে, বাবার সঙ্গে বয়সের পার্থক্য রয়েছে। একই দিনে কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় কী ভাবে খসড়া তালিকা আর লজিক্যাল ডিসক্রিমেন্সি বার করল কমিশন?’’ অভিষেকের প্রশ্ন, ভোটার লিস্ট পরিষ্কার করতে চায় তবে কেন নাম লুকাচ্ছে কমিশন?
অভিষেকের প্রশ্ন, এ রাজ্যের সঙ্গে যে সব রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া হচ্ছে, সব জায়গায় সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে নয় কেন?
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দেশের আরও কয়েকটি রাজ্যে এক সঙ্গে এসআইআর করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই সব রাজ্যের উদাহরণ টেনে কমিশনের বিরুদ্ধে সবর হয়েছেন অভিষেক। তাঁর দাবি, ‘‘তামিলনাড়ুতে মোট জনসংখ্যা ৭ কোটি ৭৫ লক্ষ। সেখানে বাদ যাওয়া ভোটারের সংখ্যা ৫৭ লক্ষ ৩০ হাজার। ১২.৫৭ শতাংশ। গুজরাতে জনসংখ্যা ৭ কোটি ৩৯ লক্ষ। বাদ যাওয়া ভোটারের সংখ্যা ৭৩ লক্ষ ৭৩ হাজার। প্রায় ১০ শতাংশ। ছত্তীসগঢ়ের জনসংখ্যা ৩ কোটি ১২ লক্ষ। বাদ যাওয়া ভোটারের সংখ্যা ২৭ লক্ষ ৩৪ হাজার। শতাংশে ৮.৭৬।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘শুধু জলের টাকা, আবাসের টাকা, ১০০ দিনের টাকা, রাস্তার টাকা আটকে ওরা বসে নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে চাইছে। এখন দেশটাকে বিজেপি এবং মোদী সরকার এমন জায়গায় নিয়ে গিয়েছে যে, কে ভোট দেবেন তা ঠিক করে দিচ্ছে সরকার। সরকার ভোটার বেছে নিচ্ছে। তৃণমূল এক মাত্র দল যারা মানুষকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।’’
অভিষেক বলেন, ‘‘নভেম্বরে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল কমিশনে গিয়েছিল। কমিশনের কাছে আমাদের মৌলিক পাঁচটা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু কমিশন একটা প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারেনি।’’ কমিশনের তরফে জানানো হয়েছিল, তারা না কি প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তবে আদৌ তা হয়নি, দাবি অভিষেক।
অভিষেকের দাবি, ‘‘গায়ের জোরে দু’-তিন মাসের মধ্যে এসআইআর করানো হয়েছে। আর তার প্রতিফলন আমরা লক্ষ্য করেছি। সাধারণ মানুষ থেকে বিএলও— একের পর এক প্রাণ গিয়েছে এই এসআইআরের জন্য। ৫১ জন সাধারণ মানুষ এসআইআর এবং এনআরসি-র কারণে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর ছ’জনের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।’’ বিএলও-দের পরিসংখ্যান তুলে ধরে অভিষেকের দাবি, প্রায় ২৯ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন।
সাংবাদিক বৈঠক শুরু করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
নতুন বছর পড়তে না-পড়তেই ভোটের ময়দানে নেমে পড়ছেন অভিষেক। তৃণমূল সূত্রে খবর, ২০২৬ সালের প্রথম সপ্তাহেই তিনি জেলা সফর শুরু করে দিচ্ছেন। উত্তরবঙ্গ থেকেই শুরু হবে অভিষেকের কর্মসূচি।
শুক্রবার তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধি এবং সাংগঠনিক নেতৃত্বকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ প্রচারের উপকরণ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সর্বত্র পৌঁছে যাবে। পরের দিন অর্থাৎ নতুন বছরের (আসলে ভোটের বছরের) প্রথম দিন থেকেই সেই প্রচার শুরু করে দিতে হবে। পাশাপাশি দলকে অভিষেকের বার্তা, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২০২৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ভিত গঠনও করে ফেলতে হবে।
প্রথম পর্বে প্রভাবশালীদের কাছে পাঁচালি পৌঁছে দেওয়ার পরে দ্বিতীয় পর্বে বুথস্তরে সরকারের কাজের খতিয়ান প্রচার করা হবে। ভিডিয়ো প্রদর্শনের মাধ্যমে এলাকায় প্রচার হবে উন্নয়নের পাঁচালি। গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আসন ধরে ধরে কয়েকটি বুথ মিলিয়ে এই প্রচার করতে হবে। শহর এলাকাতেও এক পদ্ধতিতে প্রচার করতে হবে সংগঠনকে। এই কাজ শেষ করার জন্য ৪৫ দিন সময় বরাদ্দ করেছেন অভিষেক। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখের মধ্যে পাঁচালির প্রচার সম্পন্ন করতে হবে।