Lok Sabha Election 2019

বাড়ি থেকে বার করে কুকুরের মতো মারব, তৃণমূল কর্মীদের হুমকি দিলেন ভারতী ঘোষ

বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ১৯:২৩
Share:

কেশপুরে তৃণমূল কর্মীদের হুমকি ভারতী ঘোষের। —নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ্যে তৃণমূল কর্মীদের হুমকি দিয়ে এ বার বিতর্কে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার তথা ঘাটালের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক ঢুকিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাড়ি থেকে টেনে বার করে কুকুরের মতো মারার হুমকি দিতে শোনা গেল তাঁকে।

Advertisement

গত ২ মে নির্বাচনী মিছিল চলাকালীন কেশপুরের আনন্দপুরে বিজেপি ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তাতে কয়েক কয়েকজন বিজেপি কর্মী আহত হন। স্থানীয় হাসপাতালে তাঁদের চিকিত্সা চলছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে এত দিন তাঁদের দেখতে যেতে না পারলেও, শুক্রবার আহতদের দেখতে যান ভারতী।

সেখানে তাঁকে দেখতে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ। সেই সময় রাস্তার পাশে জনা কয়েক তৃণমূল কর্মীর উপর নজর পড়ে ভারতীর। পুলিশের সামনেই তাঁদের শাসাতে শুরু করেন ভারতী। তিনি বলেন, ‘‘ভয় দেখাবি না। ঘর থেকে টেনে বার করে কুকুরের মতো মারব। উত্তরপ্রদেশ থেকে এক হাজার ছেলে এনে ঢুকিয়ে দেব। কিছু করতে পারবি না। খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঘরে ঢুকে তালা মার বলছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: পুলিশের গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ, হাসপাতালে ভর্তি শান্তনু ঠাকুর, চক্রান্তের অভিযোগ বিজেপির​

ভারতীর সেই শাসানির ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। তাতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ঘাটালের নির্বাচনী প্রচার থেকে নাম না করে ভারতীকে সতর্ক করে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের লোকজনদের অনেক বড় বড় কথা বলছেন ওই ভদ্রমহিলা। সাবধান করে দিচ্ছি ওঁকে। আমার মুখ খোলাবেন না। পুলিশে কাজ করার সময় যে মেসেজগুলি পাঠিয়েছিলেন, তা যদি ফাঁস করে দিই, তা হলে আর আমাদের কিছু করতেই হবে না।’’

ভারতী ঘোষকে লক্ষ্মণরেখা পার না করারও পরামর্শ দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট গ্রেফতারিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু আরও মামলা রয়েছে ওঁর বিরুদ্ধে। চাইলে গ্রেফতার করতেই পারতাম আমরা। কিন্তু করিনি। ভদ্রতা করে নির্বাচনে দাঁড়াতেও দিয়েছি। কিন্তু লক্ষ্মণরেখা পার করবেন না। গণ্ডির মধ্যে থাকুন।’’

বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যাবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন চোখ বুজে বসে থাকলে কিছু করার নেই। এক সময় যে পুলিশের উর্দি পরতেন, সেটাকেই ব্যবহার করছেন উনি। ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন। এক জন প্রার্থীর এই আচরণ! ওঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাব আমরা। প্রার্থী পদ বাতিলের আবেদন জানাব।’’

আরও পড়ুন: কলকাতার জন্য মেগা পরিকল্পনায় বিজেপি, রোড শো করবেন মোদী বা অমিত​

তবে এক সময় তৃণমূল নেত্রীর ‘কন্যা’ হিসাবে যিনি নিজের পরিচয় দিতেন, তাঁর এমন আচরণে একটুও আশ্চর্য হননি বলে জানান সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতী ঘোষ মার্কা এই অধুনা বিজেপি নেতারা আসলে তৃণমূলেরই। ভিতরে তৃণমূল, বাইরে বিজেপি। এক সময় মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদেই কঙ্কালকাণ্ডে সুশান্ত ঘোষদের মতো বিরোধীদের ফাঁসিয়েছিলেন ভারতী। আজও তৃণমূলের ভাষাতেই কথা বলেছেন উনি। রাজ্যের মানুষের বোঝা উচিত যে, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের হাত ধরে সন্ত্রাস ঢুকেছিল, যা চরমে নিয়ে গিয়েছে বিজেপি।’’

তবে ভারতী ঘোষের আচরণে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তাঁর মতে, ‘‘গুন্ডাদের গুন্ডাদের ভাষাতেই বোঝানো উচিত। পশ্চিমবঙ্গের যা পরিস্থিতি, সেই তুলনায় খারাপ কিছু বলেননি উনি।’’ কিন্তু দলীয় প্রার্থীর এই মন্তব্য কি সমর্থন করেন তিনি? জবাবে বাংলাদেশি অভিনেতাদের তৃণমূলের মিছিলে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনে তিনি বলেন, ‘‘এ রাজ্যে বাংলাদেশি, জামাত ঢোকানো হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ তো ভারতের মধ্যে। উনি ঠিকই বলেছেন। ভয় দেখানো হলে রাস্তায় ফেলে পেটানো উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন