বিজেপির প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই ক্ষোভ বিক্ষোভে জেরবার রাজ্য নেতৃত্ব। এক দিকে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কর্মীরা, অন্য দিকে প্রার্থী হতে না পেরে অসন্তুষ্ট হয়ে ভোটের সময় ‘ঘরে বসে’ থাকার কথা ভাবছেন দলের একাংশ। অসন্তোষ যে আছে, তা কার্যত মেনে নিচ্ছেন রাজ্য নেতৃত্ব। বিক্ষোভ থামাতে তাঁরা বল ঠেলছেন দিল্লির কোর্টে। বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের করানো সমীক্ষার ভিত্তিতেই প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অকপটে স্বীকার করেছেন, ঘোষিত প্রার্থীদের অনেককে তিনি নিজেও চেনেন না।
যদিও দলের একাংশের প্রশ্ন, অর্জুন সিংহ, অনুপম হাজরা, খগেন মুর্মু, সৌমিত্র খাঁয়ের মতো যাঁরা অতি সম্প্রতি বিজেপিতে এসেছেন, তাঁদের নাম গত এক বছর ধরে করানো সমীক্ষায় উঠে এল কী করে? প্রার্থী তালিকা দেখে দলেরই একাংশ বলছে, বিজেপিতে হঠাৎ নেতা হওয়া একজনের হাত ধরে যাঁরা এসেছেন, তাঁদেরকে ‘গুরুত্ব’ দেওয়া হয়েছে। আর ‘গুরুত্ব’ পেয়েছেন রাজনীতিতে ‘অচেনা’ সঙ্ঘের পছন্দের কিছু মুখ।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ‘‘কিছু অতি বিপ্লবী আছেন। তাঁরা চিৎকার চেঁচামেচি করছেন। দু’একদিনের মধ্যে সব শান্ত হয়ে যাবে।’’
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে রাতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্য দলের সহ-সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন রাজকমল পাঠক। বলেছিলেন, ‘‘২৮ বছর পার্টি করছি, কোনও দিন প্রার্থী হতে চাইনি। এ বার চেয়েছিলাম। বুঝলাম দলে আমার গুরুত্ব নেই।’’ কার্যত একই রকম প্রতিক্রিয়া মালদহের নেতাদের একাংশের। জেলা দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মানবেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সিপিএম থেকে আসা যে খগেন মুর্মু দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের কর্মীদের উপর অত্যাচার করলেন, আজ তাঁকেই প্রার্থী করা হল। কোন মুখে কর্মীদের প্রচারে নামতে বলব?’’ যদিও খগেনবাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘তৃণমূলই এ সব করাচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: ইয়েড্ডির ডায়েরিতে উঠল ঝড়, অমিত বললেন জালিয়াতিতে নেমেছে কংগ্রেস
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শুক্রবারও প্রার্থী নিয়ে দলীয় বিক্ষোভ অব্যাহত। বসিরহাটে সায়ন্তন বসুর বিরুদ্ধে এ দিন পোস্টার পড়ে। সায়ন্তনবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘এ সব তৃণমূল করাচ্ছে। আমরা এফআইআর করেছি।’’ উত্তর ২৪ পরগনায় তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘ওদের এক নেতা ৪২টি আসনে ১৪২ জনকে কথা দিয়েছিলেন। তাই বিক্ষোভ। সেই নেতা এখন পালিয়েছেন। আমরা কী করব?’’
নবদ্বীপের বাসিন্দা সিদ্ধার্থ নস্করকে কেন তমলুকের প্রার্থী করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছে দলেরই একাংশ। তমলুকে বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘আমরা প্রার্থী নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারিনি। পরিচিত কোনও ব্যক্তিকে প্রার্থী করার জন্য আমরা নেতৃত্বের কাছে আবেদন জানাব।’’ দক্ষিণ কলকাতার প্রার্থী চন্দ্র বসুর বিরুদ্ধেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন গেরুয়া শিবিরের অনেকে।
কোচবিহারের প্রার্থী হিসেবে নিশীথ প্রামাণিককে পছন্দ না হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত থেকেই উত্তপ্ত ওই জেলা। দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরও করা হয়েছে। এ বিষয়ে দিলীপবাবু জানান, নিশীথবাবুকে নিয়ে প্রাথমিক ভাবে তাঁদেরও আপত্তি ছিল। যদিও তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ওই লোকসভা কেন্দ্রের তিনটি বিধানসভায় আমরা ঢুকতে পারতাম না। নিশীথবাবু সেই জায়গাগুলিতেও কাজ করতে পারবেন। তাই শেষ পর্যন্ত তাঁকেই মেনে নিয়েছি।’’
এ দিন দমদম, ব্যারাকপুর, বারাসত এবং কৃষ্ণনগরেও বিজেপির প্রার্থীদের নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দলের নেতাদেরই একাংশ। ভোটে কাজ না করার হুমকিও দিয়েছেন কেউ কেউ।