কাঁটাতার সরিয়ে দেশে ঢুকতেই ভোট ওঁদের

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে যখন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস, বোমাবাজি ও গন্ডগোলের ছবি দেখা গিয়েছিল, তখনও চরমেঘনার ছবিটা ছিল ভিন্ন। সব দলের প্রার্থীরা এক সঙ্গে গল্প করেছেন, খাওয়া-দাওয়া সেরেছেন। এ বারেও অন্যথা হয়নি। 

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক 

চরমেঘনা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:২০
Share:

বুথ থেকে ভোট দিয়ে বেরোচ্ছেন ভোটার। নিজস্ব চিত্র

পতাকার রং আলাদা-আলাদা। প্রার্থী আলাদা, প্রতীকও। কিন্তু দাবিটা একই— কাঁটাতারের কাঁটা সরিয়ে তাঁদের মূল ভূখণ্ডে আনতে হবে।

Advertisement

মূলত এই দাবি নিয়েই মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিলেন নদিয়ার হোগলবেড়িয়া সীমান্তের চরমেঘনার বাসিন্দারা। আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রায় ন’শো মানুষের বাস এই গ্রামে। টুসু পুজো আর কর্মা পুজোর পরে ভোটই তৃতীয় উৎসব। গাঁয়ে কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল, বিজেপির মতো সমস্ত দলের সমর্থক থাকলেও এক স্বার্থে সবাই একজোট।

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে যখন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস, বোমাবাজি ও গন্ডগোলের ছবি দেখা গিয়েছিল, তখনও চরমেঘনার ছবিটা ছিল ভিন্ন। সব দলের প্রার্থীরা এক সঙ্গে গল্প করেছেন, খাওয়া-দাওয়া সেরেছেন। এ বারেও অন্যথা হয়নি।

Advertisement

চরমেঘনার বাসিন্দাদের এক মাত্র প্রত্যাশা, বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার ছাড়িয়ে মাথাভাঙা পর্যন্ত বিছিয়ে থাকা যে জমিতে তাঁদের বাস, কাঁটাতারের জায়গা বদলে তা যেন মূল ভূখণ্ডে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়। সীমান্তের বেড়া যেন যায় গাঁয়ের বাইরে দিয়ে। প্রতি ভোটের আগে বিভিন্ন দল প্রতিশ্রুতি দেয় কাঁটাতার সরানোর। ভোট যায়, আশ্বাসও ভেসে যায় মাথাভাঙার সরু তিরতিরে জলে।

গ্রামের শুভেন্দু বিশ্বাসের মনে পড়ে, ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় হলেও তালিকায় চরমেঘনার নাম ছিল না। পরে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের চিঠি এনে তদানীন্তন সাংসদ তথা মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের এ বারের প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান জানান, ওই রাত থেকে এই গ্রামকেও ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এর পর আড়াই বছর কেটে গেলেও কাঁটাতার সরিয়ে মূল ভূখণ্ডে ঢোকানো হয়নি। এখনও ভোটের পরিচয়পত্র গেটে বিএসএফের কাছে জমা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়।

সীমান্তের এই সমস্যা তো গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বা বিধায়ক মেটাতে পারবেন না। দিল্লিতে দরবার করে এলাকার সাংসদকেই যা করার করতে হবে। সেই কারণে অন্য ভোটের চেয়ে সাধারণ নির্বাচন চরমেঘনার মানুষের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

বছর দশেক আগেও এই গ্রামে ছিল না। না ছিল রাস্তা, না বিদ্যুৎ। ২০১১ সালে গ্রামে প্রথম বিদ্যুৎ আসে। বছর দুয়েক আগে রাস্তাও পাকা হয়েছে। কিন্তু সীমান্তের গেট পেরোনোর সমস্যা রয়েই গিয়েছে। চরমেঘনার মানুষের আক্ষেপ, সন্ধ্যার পরে সীমান্তের গেট বন্ধ হলেই ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাঁদের গাঁয়ের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নিজভূমে পরবাসী হয়ে কাটাতে হয়।

অন্য বছর ভোটের প্রচারে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের দেখা গেলেও এ বার কারও পা পড়েনি গ্রামে। তবু ওঁরা দলে-দলে ভোট দিতে গিয়েছেন। ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে চরমেঘনার বিজন বিশ্বাস, বুদু মণ্ডল, পল্লবী বিশ্বাস বা জ্যোৎস্না বিশ্বাসেরা বলেন, ‘‘আদৌ কি কখনও কাঁটাতারের এ পারে আসবে আমাদের ঘরবাড়ি-জমিজিরেত?’’

উত্তর মেলে না। আশা আঁকড়েই ভোট দিয়ে যান ওঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন