নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কাজে নেমেছিলেন তাঁরা। লোকসভা ভোটের সপ্তম ও শেষ পর্বের আগে কলকাতা হাইকোর্টের এক কর্মরত বিচারপতির গাড়িতে নাকা-তল্লাশি চালিয়ে বিপাকে পড়ে গেলেন বিধাননগরের মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের চার কর্মী। শেষে হাইকোর্টে হাজির হয়ে মুচলেকা দিয়ে ছাড় পেয়েছেন তাঁরা।
ঠিক কী ঘটেছিল?
পুলিশি সূত্রের খবর, পশ্চিমবঙ্গে ভোট-সপ্তমীর আগে পরিস্থিতি উত্তেজনায় টানটান হয়ে আছে। শাসক দল তৃণমূলের অভিযোগ, বিরোধী শিবির, বিশেষত বিজেপি বিভিন্ন জায়গায় টাকা ছড়িয়ে ভোট আদায়ের চেষ্টা করছে। সর্বত্র গাড়ি আটকে তল্লাশি চালিয়ে টাকা ছড়ানো ঠেকাতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে আছে অস্ত্রশস্ত্র এ-ধার ও-ধার করার চোরা-চেষ্টা। সব মিলিয়েই নাকা-তল্লাশিতে জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষত রাতে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের মতো সড়কে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, কর্মরত ওই বিচারপতি অসুস্থ। প্রতি সপ্তাহে মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার তাঁকে ইএম বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে রুটিন চেক-আপে যেতে হয়। বৃহস্পতিবার রাত সওয়া ১০টা নাগাদ বিচারপতি সস্ত্রীক হাসপাতাল থেকে ফিরছিলেন। কাদাপাড়ার কাছে তাঁর গাড়ি থামান চার জন সরকারি কর্মী। বিচারপতির দেহরক্ষী গাড়িচালকের আসনের পাশে বসে ছিলেন। তিনি জানালার কাচ নামিয়ে ওই কর্মীদের জানান, হাইকোর্টের বিচারপতি গাড়িতে আছেন। তিনি অসুস্থ। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসককে দেখিয়ে বাড়ি ফিরছেন। তা সত্ত্বেও ওই কর্মীরা এক রকম জোর করেই নাকা-তল্লাশি করতে চান। বিচারপতি নিজে তাঁর দিকের জানালার কাচ নামিয়ে জানান, তাঁর গাড়িতে হাইকোর্টের পতাকা লাগানো রয়েছে। তাঁর পাশে যিনি বসে আছেন, তিনি তাঁর স্ত্রী। তাতেও রেহাই মেলেনি। ওই কর্মীরা বিচারপতির গাড়ির ডিকি খুলে তল্লাশি করেন। বিচারপতিকে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে কাজ করছেন ওই কর্মীরা।
বিচারপতির ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, যে-চার জন তল্লাশি চালাচ্ছিলেন, তাঁরা পুলিশ নন। পুলিশ রাস্তার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে ছিল। ওই কর্মীদের পরনে ছিল জিনস, মাথায় টুপি। তল্লাশি শেষের পরে বাড়ি ফিরে যান বিচারপতি। রাতেই তিনি হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে টেলিফোন করে অভিযোগ জানান। ওই কর্মীদের সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেন। রাতেই রেজিস্ট্রার জেনারেল প্রশাসনের কাছ থেকে ওই কর্মীদের নাম ও পরিচয় জোগাড় করেন। জানতে পারেন, ওই চার জন বিধাননগরের মহকুমাশাসকের অফিসে কাজ করেন। শুক্রবার সকালে ওই চার কর্মীকে হাইকোর্টে ডেকে পাঠান রেজিস্ট্রার জেনারেল। তাঁদের বিচারপতির চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, বিচারপতির কাছে হাজির হয়ে ওই কর্মীরা জানান, তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবেন না। রেজিস্ট্রার জেনারেলের নির্দেশে ওই চার কর্মী মুচলেকা দিয়ে জানান, ভবিষ্যতে তাঁরা হাইকোর্টের কোনও বিচারপতির গাড়ি তল্লাশ করবেন না।