বিধানসভা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে রাজ্যের দুই রুগ্ন কারখানা অধিগ্রহণের কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপালের বক্তৃতার উপর জবাবি ভাষণ দেওয়ার সময় শুক্রবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিল পাস করিয়ে ডানলপ এবং জেসপ অধিগ্রহণ করছে রাজ্য সরকার। শনিবারই শেষ হয়ে যাচ্ছে বিধানসভার অধিবেশন। তা হলে রাজ্য সরকার কবে বিল আনবে আর কী ভাবেই বা তা পাশ হবে? প্রশ্ন বিরোধীদের। সরকারের তরফ থেকে এর কোনও সদুত্তর দেওয়া হয়নি।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বিধানসভায় বলেন, ‘‘আপনাদের একটা সুখবর দিই। ডানলপ এবং জেসপ রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করবে। আমরা তার জন্য বিল আনব।’’ বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘সেই বিল কোথায়?’’ সূর্যবাবুর প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। ডানলপ এবং জেসপ অধিগ্রহণ করতে গেলে বিধানসভায় বিল পাশ করাতেই হবে। আইন না করে এই ধরনের কারখানা অধিগ্রহণ করা যায় না। বিল পাশ করিয়ে এবং সব নিয়ম মেনেই এই দুই রুগ্ন কারখানাকে অধিগ্রহণ করা হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানান। কিন্তু প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, অধিগ্রহণের জন্য বিল আনা এবং তা পাশ করানোর সময় রাজ্য সরকারের হাতে কোথায়? শনিবারই বিধানসভার অধিবেশন শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার পর নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাবে। ফলে আর বিধানসভা অধিবেশন ডাকার সুযোগ থাকছে না। সে ক্ষেত্রে কবে বিল আসনে আর কবে তা পাশ হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই মেয়াদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আদৌ ওই দুই কারখানা অধিগ্রহণ করতে পারবে কি না, তা অনিশ্চিত।
আরও পড়ুন:
জোট করুন, সুস্থ থাকুন, মোটা হন, বিরোধীদের তীব্র কটাক্ষ মমতার
মাইনে ৩ লক্ষ, তবে ছুরি-কাঁচি ধরা বারণ
রাজনৈতিক শিবির বলছে, ভোটের আগে তৃণমূলের গা থেকে শিল্পবিরোধী তকমা ঘোচাতে চাইছেন মমতা। গত পাঁচ বছরে রাজ্যে নতুন শিল্প না আসা এবং বিভিন্ন কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিরোধীরা অনেক দিন ধরেই সরব। নির্বাচন যত কাছে আসছে, বিরোধীরা রাজ্যের শিল্প ক্ষেত্রের বেহাল দশার ছবি তত বেশি করে সামনে নিয়ে আসছেন। ডানলপ আর জেসপ অধিগ্রহণের কথা ঘোষণা করে দিয়ে সেই আক্রমণকে মমতা ভোঁতা করতে চাইলেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সিঙ্গুরের অচলাবস্থা নিয়েও এ দিন দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমতায় এসে সিঙ্গুরের জমি ফেরতের জন্য আইন করে দিয়েছি। আমাদের কাজ হয়ে গিয়েছে। বাকিটা আদালতে আটকে রয়েছে।’’ বিরোধীদের কটাক্ষ, সিঙ্গুর ইস্যু থেকে এখন পালিয়ে বাঁচতে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুরে জমি ফেরত দিতে না পারা যে প্রতিশ্রুতি পূর্ণে তাঁর অন্যতম সেরা ব্যর্থতা, ভোটের ময়দানে বিরোধীরা সে কথা বার বার তুলে ধরবে। তাই আগেভাবেই দায় ঝেড়ে ফেলে আদালতের কোর্টে বল ঠেলে দিতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলছে রাজনৈতিক শিবির।