মোদী-বৈঠকে সূর্যকেও ডাক মমতার, জল্পনা

দীর্ঘ দিনের শৈত্য কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ফেসবুকে খবরটি ভাঙার পর থেকে রাজ্য-রাজনীতিতে শুরু হয়ে গিয়েছে গুঞ্জন। কেন তিনি মোদীর সঙ্গে দেখা করতে এই সময়কেই বেছে নিলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। এই অবস্থায় মমতা নিজেই তাতে আরও ইন্ধন দিলেন বৃহস্পতিবার বিধানসভায়। রাজ্যপালের বক্তৃতার জবাবি ভাষণ দিতে উঠে বিরোধী দলনেতাকেও তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

দীর্ঘ দিনের শৈত্য কাটিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ফেসবুকে খবরটি ভাঙার পর থেকে রাজ্য-রাজনীতিতে শুরু হয়ে গিয়েছে গুঞ্জন। কেন তিনি মোদীর সঙ্গে দেখা করতে এই সময়কেই বেছে নিলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। এই অবস্থায় মমতা নিজেই তাতে আরও ইন্ধন দিলেন বৃহস্পতিবার বিধানসভায়। রাজ্যপালের বক্তৃতার জবাবি ভাষণ দিতে উঠে বিরোধী দলনেতাকেও তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে বসলেন!

Advertisement

মমতার প্রস্তাব শুনে শাসক এবং বিরোধী পক্ষে জল্পনা-পাল্টা জল্পনা ঘনীভূত হয়েছে। কারও মতে, বিরোধী দলকে এই প্রস্তাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চান, রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে তিনি সকলকে নিয়ে চলতে আগ্রহী। আবার কেউ বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ নিয়ে বিজেপি-মমতা দহরম মহরমের অভিযোগ এড়াতেই তিনি সঙ্গে নিতে চান বিরোধী দলনেতাকে।

এ দিন বিধানসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চতুর্দশ অর্থ কমিশনে রাজস্ব আদায় থেকে রাজ্যকে দেয় অর্থের পরিমাণ ৩২% থেকে বাড়িয়ে ৪২% করার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। কিন্তু তার সঙ্গে আবার আটটি কেন্দ্রীয় প্রকল্পও বাড়িয়ে দিয়েছে। ওতেই বাড়তি টাকাটা চলে যাবে।” এর পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওরা (কেন্দ্র) মাছের তেলে মাছ ভাজার চেষ্টা করছে! বিরোধী দলের নেতা যদি যান, তা হলে খুশি হব।”

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর এই আচমকা প্রস্তাবে তড়িঘড়ি কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি বিরোধী দল সিপিএম। বিরোধী দলের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “রাজ্যের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছেন, এটা নতুন ব্যাপার নয়। বিভিন্ন রাজ্যে বহু বার এমন ব্যাপার ঘটেছে। এমনকী, বাম সরকারের আমলে আমাদের রাজ্যেও এমন নজির আছে। তবে এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে প্রস্তাব এলে বিবেচনা করে দেখতে হবে।”

প্রকাশ্যে সূর্যবাবু কিছু না বললেও সিপিএম সূত্রের খবর, মমতার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তারা চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে চায় না। এক শীর্ষ নেতার কথায়, “মমতার মূল দাবি, ফ্রন্ট আমলে যে ঋণের বোঝা মাথায় চেপেছে, তার সুদ দিতে গিয়ে রাজস্ব থেকে প্রচুর টাকা চলে যাচ্ছে। সুদ মকুব করার আবেদন নিয়েই উনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবেন। এই দাবি বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে। এটা মানা অসম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর সামনে তো আর এ সব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করা যাবে না। দাবি নিয়ে আগে সহমত হতে হবে। কিন্তু এটা নিয়ে সহমত হওয়া কার্যত অসম্ভব।” সিপিএমের একাধিক নেতার বক্তব্য, “শাসক দলে যে চোরাস্রোত রয়েছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাসের অভাব হচ্ছে। তাই এখন বামেদের নিয়ে উনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে চাইছেন।”

তৃণমূল সূত্রে খবর, বিহারে নীতীশ কুমারের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে একান্তে বৈঠক হয়েছে মমতার। ছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীও। ফেরার পরই মমতা যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন, তা তাৎপর্যপূর্ণ। তৃণমূলের একাংশের নেতাদের কথায়, “বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে। ‘মুকুল রায় অস্বস্তি’ তীব্র হতেই নেত্রী সেই সম্পর্কে উষ্ণতা আনতে মরিয়া।”

বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায় কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। তিনি বলতে ওঠা মাত্রই শাসক দলের বিধায়কেরা হইচই শুরু করলে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বহু তৃণমূল নেতার যোগাযোগের প্রসঙ্গ তুলে বিদ্রুপের সুরে বিজেপি বিধায়ক বলেন, “আমি সেই অশোক রোডের (বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতরের ঠিকানা) দফতর থেকে আসছি, যেখানে আপনাদের দলের নেতারা গোপনে যোগাযোগ রাখছেন!” পরে মমতার প্রস্তাব প্রসঙ্গে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গী হতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তিনি রাজ্যের জন্য উন্নয়নের টাকা কী ভাবে খরচ করছেন, তা জানাতে হবে। মেলা-খেলা-মোচ্ছবে খরচ করলে আমরা তাতে সঙ্গী হব না!”

তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, এই মুহূর্তে সারদা-সহ নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মমতা একা মোদীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে বিজেপির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে নতুন জল্পনা তৈরি হতো। তাই তিনি বিরোধী দলগুলিকে সঙ্গে নিতে চাইছেন। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এ বার সিপিএম যদি বলে যাব না, আমরা বলব, সিপিএম রাজ্যের উন্নয়ন চায় না! আর গেলে আমাদের গায়ে বিজেপি সংস্রবের কালি ওরা আর লাগাতে পারবে না! রাজনৈতিক ভাবে মোক্ষম চাল দিয়েছেন মমতা!” ওই নেতার বক্তব্য, সিপিএম কী ভাবে ওই চাল সামাল দেয়, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন