এত পেঁয়াজ, বাড়ছে কেন দাম: মমতা

বিক্রেতাদের কাছে আনাজের পাইকারি দর জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। ‘‘কোথা থেকে আপনারা আনাজ কিনছেন যে, হঠাৎ করে এত দাম বেড়ে গেল?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:০৯
Share:

ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

শীতের মরসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শিম-সহ হরেক আনাজে বাজার ভরে থাকার কথা। দামেও কিছুটা সুরাহা হয় বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায়। তার বদলে এ বার হঠাৎই আনাজের দাম বাড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভীষণ চিন্তিত। সোমবার সকালে নবান্ন যাওয়ার আগে কালীঘাটের বাসভবন থেকে বেরিয়ে সোজা ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজারে ঢোকেন তিনি। কথা বলেন বিক্রেতাদের সঙ্গে। তাঁদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সরকার যদি ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারে, আপনারা পারবেন না কেন?’’

Advertisement

বিক্রেতাদের কাছে আনাজের পাইকারি দর জানতে চান মুখ্যমন্ত্রী। ‘‘কোথা থেকে আপনারা আনাজ কিনছেন যে, হঠাৎ করে এত দাম বেড়ে গেল? এখানে এত আলু-পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। তবু দাম বাড়ছে কেন,’’ প্রশ্ন করেন তিনি। প্রায় ১০ মিনিট যদুবাবুর বাজারে ছিলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘সরকার এ বার যদুবাবুর বাজারেও ন্যায্য মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করবে।’’ বিক্রেতাদের উদ্দেশে তাঁর আবেদন, ‘‘আপনারা ন্যায্য মূল্যে আনাজ বিক্রি করুন।’’ এ দিন নিজের ফেসবুক পেজে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘‘পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্তের। বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম যখন ১৪০-১৫০ টাকা, ‘সুফল বাংলা’ স্টলে সেই পেঁয়াজ মিলছে ৫৯ টাকায়।’’

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকেই দায়ী করছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন খড়্গপুরের রাবণপোড়া ময়দানের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পেঁয়াজের দাম আজ ১৪০ টাকা। এটা কেন্দ্রের বিষয়। ক’টা মিটিং করেছেন? কী ব্যবস্থা নিয়েছেন?”

Advertisement

আরও পড়ুন: হেলমেটে ভোল বদলে পেঁয়াজ কেনার হিড়িক

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রের এজেন্সি নাবার্ডের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাকে ২০০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেওয়ার কথা ছিল। ১০ মেট্রিক টন দিয়েছে। ‘‘আর ১০ মেট্রিক টন পচা পেঁয়াজ দিয়েছে! এখনও ১৮০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ পাইনি,” বলেন মমতা। তিনি জানান, রাজ্য প্রতি কেজি পেঁয়াজে ৫০ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে।

এ দিন একই সঙ্গে কৃষক-স্বার্থে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন মমতা। মনে করিয়ে দেন, বাংলায় কৃষকদের জমির ‘মিউটেশন’ (নামজারি) করাতে পয়সা লাগে না। কৃষিজমির খাজনা দিতে হয় না। মমতা বলেন, “আলুর দাম যখন বাড়ে, আমরা ভর্তুকি দিই। চাষিদের ধান বুলবুল দুর্যোগে নষ্ট হলে আমরা ভর্তুকি দিই। আমাদের আগে তো কেউ ভাবেনি যে, পেঁয়াজ উৎপাদন করা দরকার। আমরা ছ’লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন করেছি।”

আরও পড়ুন: এনআরসি-র বিরুদ্ধে জোট বাঁধার ডাক দিলেন মমতা

এ দিন রাজ্যের ৪৩০টি রেশন দোকান, সুফল বাংলার ১৩১টি স্টল ছাড়াও ১০৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার থেকে ৯৬৭টি রেশন দোকানে তা মিলবে।

রাজ্যের টাস্ক ফোর্স কমিটির সদস্য কমল দে বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে ২-৩ লরি পেঁয়াজ নাশিক থেকে কোলে মার্কেটে ঢুকছিল। সোমবার ঢুকেছে ১০ লরি। নাশিক থেকে নতুন পেঁয়াজের আমদানি বেড়েছে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতা-সহ রাজ্যে দাম কমবে।’’

তবে এ দিনও কলকাতার বিভিন্ন বাজারে পেঁয়াজ ছিল ১৪০-১৫০ টাকা কেজি। ১২০-১৩০ টাকায় যে-পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, তা বেশ নিম্ন মানের। গত কয়েক দিনে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা চিন্তিত। টাস্ক ফোর্স এ দিন শিয়ালদহের কোলে মার্কেটে বিভিন্ন আনাজের দর খতিয়ে দেখে। ছিলেন ডিসি (এনফোর্সমেন্ট) বিশ্বজিৎ ঘোষ। কমলবাবু বলেন, ‘‘একটা বিষয় পরিষ্কার, পাইকারি বাজারে আনাজের দাম যথেষ্ট কম থাকলেও বিভিন্ন খুচরো বাজারে দাম বেশি। এটা অনুচিত। এই বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে।’’ নকল চাহিদা তৈরি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে কি না, তা দেখতে সোমবার পথে নেমেছিলেন হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্য। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরীর নেতৃত্বে নেমেছিল পুলিশবাহিনীও। খুচরো বিক্রির জন্য দোকানদারেরা যেখান থেকে পেঁয়াজ কেনেন, সেই হাওড়া পাইকারি বাজারে তাঁরা যাওয়ার পরেই দাম এক লাফে ৩০ টাকা কমে যাওয়ায় অবাক হয়ে যান ক্রেতারা। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, তা হলে কি আড়তদারেরাই দাম বাড়াচ্ছেন? দু’টি বাজার ঘোরার পরে জেলাশাসক জানান, কোনও বাজারেই পেঁয়াজের দাম নিয়ে সমস্যা নেই। বেশি নেওয়া হচ্ছে না। দাম কমছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন