ফাইল চিত্র।
পরিকাঠামো পুনর্গঠনের নামে সরকার যে প্রতি বছর টাকা ‘জলে’ দেবে না, প্রশাসনের সর্বস্তরের উদ্দেশে সেই হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে ইয়াস-পরবর্তী পরিস্থিতিতে এবং আসন্ন কটালের ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি-বৈঠকে তাঁর নির্দেশ, পুনর্গঠন যেখানে হবে, সেখানে সেই কাজের গুণগত মানের প্রমাণ জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। আসন্ন কটালের জেরে সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য এবং জেলা স্তরে চূড়ান্ত প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
ইয়াসের তাণ্ডবের পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে সেচ দফতরের কাজকর্ম নিয়ে সরাসরি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেন সরকারি টাকা নষ্ট হচ্ছে, তুলেছিলেন সেই প্রশ্নও। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পুনর্গঠনের কাজ হয়ে যাওয়ার পরে ডিসপ্লে বোর্ডে সেই কাজের তথ্য তুলে ধরতে হবে, যাতে মানুষ দেখতে পায়। ক্ষয়ক্ষতির আগের ও পুনর্গঠনের পরের ছবি— দু’টিই রাখতে হবে ওই বোর্ডে।”
ইয়াস-ক্ষত উপশমের আগেই ১১ এবং ২৬ জুন ফের পরপর দু’টি বান এবং নিম্নচাপের সঙ্কেত পেয়েছে প্রশাসন। ইয়াসের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সারাইয়ের অর্ধেক কাজ ১০ জুনের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হলেও বাকি মেরামতিতে ২৩ জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মৌসুনি ও সাগরদ্বীপের প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকার কাজ শেষ করতে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই ওই এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষকে ১১ জুনের আগেই নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
প্রশাসনের বিচারে এই মুহূর্তে প্রায় ১৭৫টি ব্লক বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ফলে কুইক রেসপন্স দল, ত্রাণ-খাবার-জল-ওষুধের ব্যবস্থা দ্রুত সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জলমগ্ন এলাকাগুলির জন্য ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে কোয়াক চিকিৎসকদের প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যেখানে যেখানে এখনও জল জমে আছে, সেখানে জলবাহিত রোগ হতে পারে। ১৪টা ব্লক এবং ৬৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে স্বাস্থ্য, সেচ, পরিবেশ দফতর এবং জেলাশাসকদের নজর রাখতে হবে। জল জমে যেন ডেঙ্গি না-হয়। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা-বনগাঁ মহকুমার পুরোটায় প্রতি বছর ডেঙ্গি ছড়ায়। সে-দিকেও নজর দিতে হবে।”
চলতি পরিস্থিতিতে ডিভিসি বা ঝাড়খণ্ডের অন্য জলাধারগুলি থেকে না-জানিয়ে যাতে জল ছাড়া না-হয়, সে-দিকেও নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রাজ্যের নিজস্ব জলাধারগুলির ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা। গোটা বিষয়টির সমন্বয়ের জন্য এক জন ইঞ্জিনিয়ারকে নোডাল অফিসার করা হচ্ছে। পুনর্গঠনের স্থায়ী পরিকল্পনা তৈরিতে এ দিনই কল্যাণ রুদ্রের সভাপতিত্বে ২৪ সদস্যের একটি কমিটি গড়ার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, দিঘা ও সুন্দরবনের জন্য নির্দিষ্ট মাস্টার প্ল্যানের কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানানো হয়েছে। রাজ্যের সিদ্ধান্ত, বাঁধ রক্ষায় দুই দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা এবং দিঘায় পাঁচ কোটি করে ম্যানগ্রোভ লাগানো হবে।
মৃত পশুর মাংস আটকাতে। ইয়াস দুর্যোগে মৃত পশুর মাংস অসাধু উপায়ে হোটেল-রেস্তরাঁয় যাতে না পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার তিনি বলেন, “এটা দেখতে হবে ভিজিল্যান্স বিভাগকে। রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) নজর রাখবেন।’’