গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য ১২ নম্বর নথি হিসাবে আধার কার্ডকে বৈধতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের সেই নির্দেশকে মঙ্গলবারই স্বাগত জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার জলপাইগুড়ির সরকারি কর্মসূচি থেকে সেই মর্মে প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়ে দিলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি ডিএম (জেলাশাসক)-কে বলব, যাঁদের আধার কার্ড নেই, দুয়ারে সরকারের মাধ্যমে তাঁদের আধার কার্ডটা করিয়ে দিন।’’ নির্দিষ্ট ভাবে জলপাইগুড়ির জেলাশাসককে বললেও, এটি আসলে সব জেলার প্রশাসনকেই মমতার ‘বার্তা’ বলে মনে করছেন অনেকে।
ভোটার তালিকা নিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আবেদন বার বারই জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবারও তিনি বলেন, ‘‘ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে কি না, তা দেখতে হবে। শুধু এখন দেখলে হবে না। আগামী ৬-৭ মাস দেখতে হবে। ভোটার তালিকায় নাম না-থাকলে ওরা বলবে এনআরসি করিয়ে দাও।’’
বিহারের ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (এসআইআর) করছে নির্বাচন কমিশন। সেই প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক অভিসন্ধিমূলক বলে একগুচ্ছ মামলা দায়ের হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। দলগত ভাবে তৃণমূলও মামলার অন্যতম পক্ষ। ব্যক্তিগত ভাবে মামলা করেছিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। প্রায় প্রতিটি বিরোধী দল আধার কার্ডকে বৈধ নথি হিসাবে গ্রহণ করার আর্জি জানিয়েছিল। তাতে সিলমোহর দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সোমবার সেই নির্দেশ পাওয়ার পরে মঙ্গলবার জাতীয় নির্বাচন কমিশন বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে সেই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও পাঠিয়ে দিয়েছে। বুধবার মমতা রাজ্য প্রশাসনকে বার্তা দিলেন, যাঁদের আধার কার্ড নেই, তাঁদের নতুন আধার কার্ড করিয়ে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ করতে।
নিয়োগ নিয়েও বার্তা
আদালতের নির্দেশে রাজ্যের ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছিল। আবার সেই আদালতের নির্দেশেই নতুন করে নিয়োগের পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গত রবিবার এক দফা পরীক্ষা হয়েছে। ফের পরীক্ষা রয়েছে আগামী রবিবার। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে পরীক্ষা হচ্ছে। আর বাকিটা নিয়ে আইনজ্ঞরা আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন। আইনের জটিলতা কেটে গেলেই আমরা সাথে থাকার চেষ্টা করব। এর বেশি আমি এখন আইনত কিছু বলতে পারি না।’’ ৩৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে পরীক্ষা নিচ্ছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। এর পরের ধাপে আরও ২১ হাজার শূন্যপদে নিয়োগ হবে বলে জানান মমতা। পাশাপাশি, মামলা নিয়ে নাম না-করে তোপ দাগেন বিরোধীদের উদ্দেশেও। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যখনই একটা একটা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখনই এক দল কোর্টে চলে যায়। আমি তো দিতে চাই। কিন্তু ওরা চাকরি খেতে চায়। ভোটে পারে না। তাই কোর্টে যায়।’’
বদনাম নেব কেন?
সমাজমাধ্যমে প্রতিদিন তাঁকে অসম্মান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে লজ্জায় মাথা নত করে চলে যেতেন। আমি এখনও করছি (দায়িত্ব পালন) কারণ, না-হলে লুটেরারা লুটে নিয়ে চলে যাবে। ওরা বাংলাকে গুজরাতে পরিণত করতে চায়। আমরা তা হতে দেব না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেউ বাংলাকে কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ) করতে পারবে না। বাংলাই বাংলা চালাবে। দিল্লি নয়।’’ বুধবারের সভা থেকে ফের এক বার ভিন্রাজ্যে কর্মরত বাংলাভাষী শ্রমিকদের উপর আক্রমণ নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। মমতার দাবি, ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ২৪ হাজার পরিবারকে ভিন্রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে এনেছে। বুধবার সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। এক দিনে জলপাইগুড়ির ১ লক্ষ ৫৫ হাজার মানুষকে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।